শুভজিৎ দত্ত, নাগরাকাটা: জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তরের (PHE Department) পাম্পহাউস রয়েছে বটে। তবে সেখান থেকে ঘরে ঘরে পানীয় জল পৌঁছোয় না (Water Crisis)। যদিও বিছিয়ে রাখা আছে পাইপ। তল্লাটের একাধিক জলের স্ট্যান্ডপোস্টেও খটখটে শুকিয়ে থাকার ছবি। অগত্যা ক্যারন চা বাগানের (Caron Tea Garden) কারি লাইনের অসুর জনজাতিদের ভরসা গ্রাম থেকে কিছুটা হেঁটে ওই পাম্পহাউসে গিয়ে কলসি, বালতিতে জল ভরে আনা। সেটাও পর্যাপ্ত নয় বলে অভিযোগ। সে কারণে পাহাড়ি ঢালের ওই তল্লাটে ৫০ ফুট নীচে নেমে একটি কুয়ো কিংবা সেখান থেকে কিছুটা দূরে গিয়ে ভূগর্ভস্থ ঝরনার জলও পান করতে হয় তাঁদের। স্থানীয়রা যার নাম রেখেছেন পাতাল গঙ্গা। সবমিলিয়ে জলসমস্যায় জেরবার অসুররা এর পাকাপাকি সমাধান চাইছেন। নাগরাকাটা (Nagrakata) পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সঞ্জয় কুজুর বলেন, ‘এলাকায় গিয়ে সমস্যা খতিয়ে দেখে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তরের সঙ্গে কথা বলব। এখনও পর্যন্ত বিষয়টি সেখানকার কেউ আমাদের জানায়নি।’
ভুটান সীমান্ত ঘেঁষা কারি লাইনে ৫৩টি অসুর পরিবারের বসবাস। তাঁদের জীবিকা বাগানের শ্রমিকের কাজ কিংবা দিনমজুরি। আগে ভুটান থেকে গিয়েও জল নিয়ে আসতেন তাঁরা। তবে করোনার পর থেকে সীমান্তে অবাধ যাতায়াতের ওপর আগের মতো শিথিলতা আর নেই। একটা সময় ক্যারন চা বাগানে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তরের একটি বড় প্রকল্পও চালু করা হয়। তবে তার সুফল কারি লাইনে পৌঁছোচ্ছিল না। যে কারণে ওই এলাকাটিতেই একটি পাম্পহাউস তৈরি করা হয়। বাড়ি বাড়ি জলের সংযোগও দেওয়া হয়। সেই পাইপ এখনও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। জল আর কোথাও যায় না। ৪টি রিগবোর টিউবওয়েলের মধ্যে দুটি বিকল। অসুরদের ডেরা কারি লাইনেই মাঝারি আয়তনের কয়েকটি জলাধারও তৈরি করে দেওয়া হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল প্রয়োজনের সময় জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তরের প্রকল্প থেকে ওই জলাধারের জল যাতে তাঁরা প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারেন। সেই উদ্দেশ্যও ব্যর্থ হয়েছে।
মণিকা অসুর নামে এক মহিলা বলেন, ‘পাম্পহাউসে গিয়ে জল আনতে হয়। সেখানে প্রচুর ভিড় লেগে যায়। তাই গর্তে নেমে কুয়োর জল বা ঝোরার জল নিয়ে আসি।’ আষাড়ি অসুর নামে এক প্রবীণার কথায়, বছর দুয়েক হল ঘরে ঘরে জল পৌঁছোয় না। সমস্যা কোথায় জানা নেই। খুব অসুবিধা হয়। বিনোদ অসুর নামে এক পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তি বলেন, ‘কুয়ো আর ঝরনা না থাকলে সমস্যা আরও বাড়ত।’ ওই গ্রামেই থাকেন ধনবীর সিং নামে এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, পাম্পহাউসের মোটরের জল উত্তোলনের শক্তি কম, নাকি পাইপ সংযোগের কোথাও লিকেজ রয়েছে তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হোক।