জলের আরেক নাম জীবন এটা এক গভীর সত্য।
যা বিশ্বময় মানুষের অনুধাবনলব্ধ। পৃথিবীর তিন ভাগ জল, এক ভাগ স্থল। তবু সেই জলের এক লক্ষ ভাগের ৭ ভাগ মানুষের ব্যবহারযোগ্য। সম্প্রতি শিলিগুড়িতে পুরসভার সরবরাহ করা জলকে দূষণযুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। শুনলাম, তিস্তার জলের বিকল্প হিসাবে মহানন্দা নদীর জল পরিস্রুত করে সরবরাহ করা হচ্ছিল। প্রশ্ন, কাদের সুপারিশ মেনে এই জল সরবরাহ করা হল?
কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তালিকা অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গে ১৭টি নদী দূষিত নদী হিসাবে চিহ্নিত। যার মধ্যে শিলিগুড়ির মহানন্দা নদী সর্বাধিক দূষিত বলা হয়েছে। ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইবিউনাল ২০১৮ সালের ২০ সেপ্টেম্বর এক নির্দেশে জানায় দূষিত হিসাবে চিহ্নিত নদীগুলির আকশন প্ল্যান দু’মাসের মধ্যে করতে হবে এবং অন্তত ছয় মাসের মধ্যে স্নানযোগ্য ও ব্যবহার উপযোগী করে তুলতে হবে। এরপর ২০১৯-এর ২১ জুন রাজ্যের মুখ্যসচিব একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেন, ২৪ জনকে নিয়ে একটি রিভার রিজুভেনেশন কমিটি তৈরি হয়। গ্রিন ট্রাইবিউনালের নির্দেশ অনুযায়ী দূষিত নদীগুলি দূষণমুক্ত করে পুনরুদ্ধারের কাজ করবে। লক্ষণীয় হল, এই কমিটিতে শিলিগুড়ি পুরনিগমের কমিশনার আছেন এবং শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন পর্ষদের চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার আছেন।
প্রশ্ন হল, মহানন্দা অতিমাত্রায় দূষিত নদী। সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের কাজ এখনও শেষ হয়নি। বা বলা যায় জলের গুণাগুণ মাত্রা বা পরিমাপের যেসব আইনসম্মত ও বৈজ্ঞানিক পরিমাপ আছে তার কোনওটাই এখনও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করেনি। তাহলে কীসের ওপর ভিত্তি করে একটি ঘোষিত দূষিত নদীকে জলের উৎস হিসাবে গণ্য করা হল? কোনওভাবেই মেরামতির প্রয়োজনে হলেও জলের উৎস পরিবর্তন করা ঠিক হয়নি। আরও অনেক অনুসন্ধান বিকল্প জলের ব্যবস্থাপনা করা প্রয়োজন ছিল। যখন বাস্তবে জল ব্যবহারকারী নাগরিকরা, ভোক্তারা দুর্গন্ধ, দূষণ, গ্যাস ইত্যাদি নিয়ে অভিযোগ জানাতে থাকলেন বারবার, তারপর তাঁদের ওই জল ব্যবহার থেকে বিরত থাকার কথা বলা হল। এটা চূড়ান্ত অমানবিকতা এবং চূড়ান্ত দায়িত্বজ্ঞানহীনতা।
আমার প্রশ্ন, পুরসভার এবং উন্নয়ন পর্ষদের কার্যনির্বাহী আধিকারিকরা তো মহানন্দা নদীর অপরিবর্তিত অবস্থান, বর্তমানে দূষণের অবস্থান কী সেটা সম্পর্কে অবহিত ছিলেন, তার কারণ তাঁরা ওই রিজুভেনেশন কমিটির সদস্য। ফলে সর্বশেষ পাওয়া রিপোর্ট, যা মান্থলি প্রগ্রেস রিপোর্ট হিসেবে জমা হয়েছে ২৩ নভেম্বর, তাতে বলা হচ্ছে যে মহানন্দা তখনও দূষণে এক নম্বরে। এবং বায়োলজিকাল অক্সিজেন ডিমান্ড যেটাকে বলে তা আপ স্ট্রিম ১১ এবং ডাউন স্ট্রিমে ২.৫, ডি ও ৬.৯ ,পি এইচ ৭.৫৮, জলে কলিফার্মের পরিমাণ প্রায় দু’লাখের মতো। এই রিপোর্ট সত্ত্বেও কীভাবে মহানন্দার জলকে ব্যবহারযোগ্য বলা হল?
রাজ্য সরকারের যে খসড়া রিপোর্ট রয়েছে তাতে রাজ্যের ১৭টা দূষিত নদীর মধ্যে করলা, কালজানি, ময়ূরাক্ষী, শিলাবতী- চারটি নদীর কথা বলা হয়েছে দূষণমুক্ত হয়েছে বলে। মহানন্দার নাম কিন্তু সেখানে নেই।
একথা ঠিক যে পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে দ্রুততম বেড়ে ওঠা শহর হল শিলিগুড়ি। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার রাজ্যের যে কোনও শহরের তুলনায় বেশি। নগরায়ণ হার এই অঞ্চলে অবিশ্বাস্য বেশি। কিন্তু বেশিরভাগটাই অপরিকল্পিত। শিলিগুড়ির জনসংখ্যা বৃদ্ধির চরিত্র নিতান্তই এলোমেলো ও অস্থির এবং পরিকল্পিত নগরায়ণের সঙ্গে এই বৃদ্ধির কোনও সম্পর্ক নেই। আবাসিক অঞ্চলগুলোতে বহুতল ফ্ল্যাটবাড়িতে, হোটেল রেস্তোরাঁ, বাণিজ্যিক ভবনে গভীর নলকূপ বসিয়ে জল তোলা হচ্ছে। একই অঞ্চল থেকে প্রচুর জল তোলায় এবং প্রয়োজনীয় রিচার্জ না হওয়ায় জলসংকট দেখা দিচ্ছে বিশেষ একটি সময়।
জল দূষণ আরও বেশি করে ঘটছে নদীগর্ভে বসতি তৈরি হওয়ায়। মহানন্দা, ফুলেশ্বরী এবং জোড়াপানি চরে বসবাস করছেন কয়েক হাজার মানুষ। শহরের আবর্জনা, নোংরা জল গিয়ে পড়ছে নদীতে। নদী দূষণমুক্ত পুনরুজ্জীবন কমিটির মিটিংয়ে মহানন্দার দূষণ আলোচনায় দেখা গিয়েছে গবাদিপশুর গোবর সহ নোংরা। যা বন্ধ করা নিয়ে আলোচনায় এসেছে গোবর উৎপন্ন গ্যাস প্ল্যান্ট করার কথা।
১৯৭২ স্টকহোম রাষ্ট্রসংঘের বিশেষ সম্মেলনে গৃহীত নীতিগুলিকে আইনের ম্যাগনা কার্টা বলা হয়। প্রস্তাবের ৫২ থেকে ৫৫ অনুচ্ছেদে বলা হয় সমস্ত দেশেই জলের অভ্যন্তরীণ উৎসকে বিষাক্ত করা হচ্ছে, এটা বন্ধ করতে হবে। তার জন্য জলকে বিষাক্ত না করে তার পুনর্ব্যবহার এবং সম্পর্কিত সংবাদ সংগ্রহ, গবেষণা, প্রশিক্ষণ ইত্যাদির অঞ্চলভিত্তিক কেন্দ্র স্থাপন করা।
মনে রাখা প্রয়োজন, যত বেশি জল নিয়ে নানা কৃত্রিম সংকট তৈরির পরিবেশ তৈরি হবে, বোতলের জল বেচাকেনায় আরও ভূগর্ভস্থ জল অনিয়ন্ত্রিতভাবে তোলা হবে, আরও বেশি করে আর্সেনিকের প্রভাব বাড়বে। পুর প্রশাসন, পর্ষদ, আরও যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত জল প্রশাসন আছে (যেমন জনস্বাস্থ্য কারিগরি, রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ, সুডা) প্রত্যেকের দায়বদ্ধতা মানুষের কাছে আছে। এটা জানানোর নাগরিককে যে জল সরবরাহ করা হচ্ছে সেটা কি আদৌ ব্যবহারযোগ্য? পানযোগ্য?
প্রয়াত ধ্রুবজ্যোতি ঘোষের কাছ থেকে শুনেছিলাম, পূর্ব কলকাতার জলাভূমিতে শহরের নোংরা জল গ্রহণ করে মাছ চাষের মাধ্যমে পরিষ্কার জলে রূপান্তরিত করার যে লোকায়ত পদ্ধতি চালু আছে সেটা সম্পর্কে অবহিত করা হচ্ছিল। জল কতটা পরিষ্কার হয় সেটা বোঝাবার জন্য সরাসরি সেই জল পান করে তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর বিশ্বাস অর্জন করেছিলেন।
শিলিগুড়িতে কোনও প্রশাসক এমন আছেন?
(লেখক পরিবেশবিদ)
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: উত্তরবঙ্গে বৃষ্টি কমার নাম নেই। এদিকে দক্ষিণবঙ্গে সোমবার থেকে হাওয়া বদলের…
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন রেখা শর্মার উদ্দেশে ‘কুরুচিকর’ মন্তব্য করার অভিযোগে…
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: ফ্রান্সের নির্বাচনে (France Election) বাম বিপ্লব! চমক দিয়ে ফ্রান্সের (France) নির্বাচনে…
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ দেশ ছেড়ে ইউরোপে পাড়ি দেওয়ার সময় নৌকাডুবিতে মৃত্যু হল কমপক্ষে ৮৯…
চ্যাংরাবান্ধাঃ পুরোনো কমিটির মেয়াদ শেষ। নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন হল চ্যাংরাবান্ধা এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের। এই…
কোচবিহারঃ কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপি হারতেই বিজেপির হাতে থাকা একের পর এক পঞ্চায়েত দখল করছে…
This website uses cookies.