মানবিক উদ্যোগ, পশুপাখিদের তৃষ্ণা মেটাতে মাটির হাঁড়িতে জলের ব্যবস্থা খুদে পড়ুয়াদের

তুফানগঞ্জ: তীব্র তাপপ্রবাহে পশুপাখিদের তৃষ্ণা মেটাতে গাছে গাছে মাটির হাঁড়িতে জলের ব্যবস্থা করল খুদে পড়ুয়ারা। দিন দিন উষ্ণতার পারদ যেভাবে চড়ছে তাতে পশু-পাখিদের অবস্থাও করুণ হয়ে উঠছে। এক ফোঁটা জলের জন্য পাখিরা হা হুতাশ করছে। এবার পশুপাখিদের তৃষ্ণা মেটাতে উদ্যোগ খুদে স্কুল পড়ুয়ারা উদ্যোগ নিয়ে জোগাড় করে ফেলেছে গোটা ১০-১২টি মাটির হাঁড়ি। মাটির হাঁড়ি রসি দিয়ে বেঁধে সেই হাড়িগুলোতে জল ভরে গাছের ডালে ডালে বেঁধে দিয়েছে। কিছু হাঁড়িতে জল ভরে মাটিতে রেখেছে পশুদের পিপাসা মেটানোর জন্য।

বৃহস্পতিবার এমন মানবিক ছবি ধরা পড়ল তুফানগঞ্জ-১ ব্লকের অন্দরানফুলবাড়ি-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের নেতাজী পল্লী এলাকায়। এই এলাকার জয়দীপ চক্রবর্তী, অঙ্কুশ চক্রবর্তী, সমীক দাস, রাজেশ দাস, অঙ্কিতা সুত্রধর,  নিবেদিতা দাস সহ আরও কিছু খুদে পড়ুয়া এই কাজে অংশগ্রহণ করে থাকে। এদের মধ্যে কেউ অন্দরানফুলবাড়ি হরিরধাম হাইস্কুলে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। কেউ ইলাদেবী গার্লস হাইস্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। কেউ কেউ আবার প্রাথমিক স্কুলের গন্ডি পেরোয় নি।

স্কুল গুলোতে চলছে গরমের ছুটি। টিউশনি বাদে দিনের বেশিরভাগ সময়ই খুদেরা গাছের তলায় বসে খেলে, সময় কাটায়। চতুর্থ শ্রেণির জয়দীপ চক্রবর্তী, ষষ্ঠ শ্রেণির রাজেশ দাসদের কথায়, বন্ধুরা মিলে খেলার সময় তাদের নজরে আসে পাখিরা তাদের আশেপাশে ঘোরাঘুরি করছে। হয়তো একটু জলের জন্য এমনটা করছে। যেই ভাবনা, তেমনি কাজ। বিষয়টি বাড়িতে অভিভাবকদের জানানোর পর সম্মতি পেয়ে যায়। কিন্তু তারা বড়দের জন্য অপেক্ষা না করেই নিজেরাই উদ্যোগ নিয়ে নেয়। কেউ টিফিনের জমানো পয়সার থেকে রসি ও হাঁড়ি কেনে। কেউ অন্যের বাড়ি থেকে পুরোনো মাটির হাঁড়ি সংগ্রহ করে আনে। জয়দীপের কথায়, ‘পশু পাখিদের কষ্টের কথা চিন্তা করেই মাটির হাঁড়িতে জলের ব্যবস্থা করি। পাখিরা যেহেতু গাছে বসে, তাই গাছের ডালে এই হাড়িগুলো বসানো হয়। এজন্য এক অভিভাবক কিছুটা সহযোগিতা করেছেন। ফলে তীব্র গরম থেকে জলতেষ্টা কিছুটা মিটবে পাখিদের। মাটির হাঁড়ির জল ঠান্ডা থাকে তাই মাটির হাঁড়ি বেছে নিয়েছি।‘

স্থানীয় বাসিন্দা গৌতম সরকার বলেন, ‘খুদেরা আমাকে সহযোগিতা করতে বলেছিল। আমি তাদের সহযোগিতা করার পাশাপাশি সঙ্গে আছি।‘ তুফানগঞ্জ-১ ব্লকের জীব বৈচিত্র্য ব্যবস্থাপনা সমিতির সভাপতি তথা পরিবেশ প্রেমী সরোজ পঞ্চানন বলেন, ‘খুদেদের এই ভাবনাকে স্বাগত জানাই। সমাজের প্রতিটি মানুষকেই এই কাজে এগিয়ে আসার জন্য আবেদন করছি। প্রতিটি বাড়ির ছাদে, নির্দিষ্ট জায়গায় জলের পাত্রে জল রেখে দিলে তীব্র গরমে পশুপাখি তাদের তৃষ্ণা মেটাতে পারবে।‘