সামশেরগঞ্জ: মুর্শিদাবাদে গঙ্গা ভাঙন রুখতে শুক্রবার ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন সামশেরগঞ্জে গঙ্গা ভাঙন পরিস্থিতি ঘুরে দেখেন মুখ্যমন্ত্রী। এরপর সভায় নানা প্রসঙ্গে কেন্দ্রকে বিঁধলেন তিনি। মমতা বলেন, ‘টাকা না থাকলেও গতকাল ৫০ কোটি টাকা ঘোষণা করেছিলাম, আজ সেটা বাড়িয়ে ১০০ কোটি টাকা ঘোষণা করলাম। এটা দিয়ে আশেপাশের গঙ্গার পার বাঁধানো এবং অন্যান্য কাজ করা যাবে। পাশাপাশি গৃহহারাদের একটু দূরে জমি নিয়ে পাট্টা দেবেন।’ এদিন সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক এবং ইরিগেশন সেক্রেটারিকে সামশেরগঞ্জে মঞ্চ থেকে নির্দেশ দেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘নদী লাগোয়া অংশে কেউ থাকবেন না। কারণ যখন তখন ভাঙন হতে পারে।’ এদিন ভাঙন কবলিত শ্মশান সংলগ্ন এলাকা দেখার পর গঙ্গা নদী লাগোয়া মাঠে বক্তব্য রাখেন তিনি। সভাস্থল থেকেই গৃহহীন ৮৭ জনকে পাট্টা দেন মুখ্যমন্ত্রী।
মমতা জানান, ইতিমধ্যে এক হাজার কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে গঙ্গা ভাঙনের জন্য। ব্যারেজের সমস্যা অনেকদিন ধরেই রয়েছে। এ বিষয়ে ফরাক্কা ব্যারেজ কর্তৃপক্ষ এবং কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে অনেকবারই কথা বলা হয়েছে। কিন্তু কেন্দ্র কোনও সাহায্য করেনি। কেন্দ্রের সমালোচনা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘গঙ্গা ভাঙন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ এগুলো কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প। কিন্তু ওরা নোংরা রাজনীতি করে, দাঙ্গা নিয়ে প্ররোচনা দেয়। কিন্তু যেটা মাথা ঘামানোর সেটা যদি সঠিক কাজে ব্যবহার করত তাহলে প্রকৃতি রূপসী বাংলা রূপে আরও সুন্দর হতে পারত। যেটা ওরা করেনি। আসার সময় এক বৃদ্ধ হঠাৎ আমায় দেখে বলল ১০০ দিনের টাকা পায়নি। আমি বললাম কেন্দ্রই দেয়। এরকম সাত হাজার কোটি টাকা দেয়নি কেন্দ্র। অথচ এটা তাদের দেওয়া বাধ্যতামূলক। আবার দেখবেন লোকসভা নির্বাচনের আগে বলবে গ্যাস দেব, টাকা দেব, অমুক তমুক দেব তারপর ভোট শেষ হলে দেখবেন সব হাওয়া।’
মমতার কথায়, ‘আমি একজন সাধারণ মানুষ। সমাজের জন্য রাজনীতি করে থাকি। তবে আমি মিথ্যা কথা বলি নাl যেটুকু সাধ্যের মধ্যে সেটুকু করেছি আর করবও। এখনও পর্যন্ত ৪০ লক্ষ লোককে রাজ্য সরকার থেকে কাজ দিতে পেরেছি। ১০০ কোটি কর্ম দিবস তৈরি করেছি। ১ লক্ষ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক তৈরি করেছি, আরও ১১ হাজার কিলোমিটার রাস্তা পথশ্রী দুই ও রাস্তাশ্রী নতুন করে রাজ্য সরকারি টাকায় করছি যাতে মানুষ একটু সুবিধা পায়।’
মালদার মতো মুর্শিদাবাদও ঢেলে সাজানো হচ্ছে বললেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘টুরিজম এবং অন্যান প্রকল্প রয়েছেl সামশেরগঞ্জের অনুপনগর হাসপাতালে ৩০০ বেড বাড়ানো হয়েছে। ফরাক্কাতেও কাজ করতে চাই কিন্তু একটা প্রধান সমস্যা ফরাক্কা ব্যারেজ। অন্য রাজ্যে বাংলার মতো এতো নদী পুকুর নেই কারণ বাংলা নদীমাতৃক দেশ। তিন লক্ষ কুকুর কাঁটা হয়েছে জমি বাড়ানোর জন্য। এতে একদিকে মৎস্য চাষ বেড়েছে অন্যদিকে লোকেদের রুজি রোজগারও বেড়েছে। আমরা ম্যানগ্রোভ, জলা ঘাস ইত্যাদি নদী পাড়ে লাগানোর ব্যবস্থা করছি। দীঘা সুন্দরবন গঙ্গাসাগর সর্বত্রই নদী নদীকেন্দ্রিক ভাঙনের এই সমস্যা রয়েছে।’
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, মুর্শিদাবাদে অনেক রাজনৈতিক নেতার জন্ম দিয়েছে যারা শুধু বড় বড় কথাই বলেছেন, কাজের কাজ কিছুই করতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘রাম কা নাম বদনাম না করো দেশ কা নাম বদনাম না কারো। এজেন্সিকে কাম মে ভোট নেহি মিলেঙ্গে।’ শেষে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে পরাজিত করতে সমস্ত বিরোধী শক্তিকে যে যেখানে শক্তি সম্পন্ন সেখানে লড়াইয়ে আহ্বান জানান তিনি।