উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: ২০২১ থেকে বাংলায় বিজেপির সভাপতির দায়িত্ব সামলেছেন সুকান্ত মজুমদার। বিরোধী দলনেতার দায়িত্বে রয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। মূলত এদের দুজনের নেতৃত্বেই নির্ধারিত হয়েছে রাজ্য বিজেপির রাজনীতির গতিপথ। ২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে দ্বিতীয়বার সাংসদ হওয়ার পর সুকান্ত মজুমদারকে কেন্দ্রীয় শিক্ষা ও উত্তরপূর্ব উন্নয়ন দপ্তরের প্রতিমন্ত্রীর পদ দেন বিজেপি নেতৃত্ব। তাই বিজেপির নীতি অনুসারে রাজ্য বিজেপির সভাপতি পদ থেকে সরতেই হত সুকান্তকে। সেই জায়গায় ২০২৬ সালের গুরুত্বপূর্ণ বাংলা বিধানসভা নির্বাচনের আগে শমীক ভট্টাচার্যকে (Samik Bhattacharya) দায়িত্ব দিয়েছে বিজেপি।
সেই শমীকই এদিন সংবর্ধনা মঞ্চ থেকে সংখ্যালঘু প্রশ্নে মঞ্চে সুকান্ত-শুভেন্দুর থেকে ভিন্নসুরে কথা বললেন। এতদিন কার্যত সংখ্যালঘু বিশেষত মুসলিমদের প্রতি খানিকটা তাচ্ছিল্য-অবজ্ঞাই করতে দেখা গেছে বিজেপির বঙ্গনেতাদের। শুভেন্দুর ঘোষিত নীতি, বাংলায় চরম মেরুকরণের মাধ্যমে হিন্দু ভোট বিজেপির ঝুলিতে নিশ্চিত করা। কিন্তু এদিন কিছুটা অন্যসুরেই কথা বলতে দেখা গেছে শমীককে। তাঁর কথায়, ‘আমরা সংখ্যালঘু বিরোধী নই, কারণ, বাংলায় সংখ্যালঘুরাও আক্রান্ত। আমরা চাই উল্টোরথ এবং মহরমের শোভাযাত্রা একসঙ্গে হোক।’ সংখ্যালঘুদের উদ্দেশে শমীক এও বলেন, ‘মুসলমান মানেই কি সমাজবিরোধী? যারা আমাদের অচ্ছুত মনে করেন, তাঁদের বলব, আমাদের ভোট দিতে না চাইলে নাই দেবেন, কিন্তু আয়নার সামনে দাঁড়ান। দেখতে পাবেন, বাংলায় সব চেয়ে বেশি খুন হয়েছে মুসলমানরাই। কাদের জন্য এটা হল? তাঁদের বিদায় জানাবেন না?’
সংখ্যালঘুদের নিয়ে এমন সহমর্মী বার্তা সাম্প্রতিক অতীতে কোন বিজেপি নেতা দিয়েছেন তা মনে করতে পারছেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা অনেকেই। তাদের একাংশ মনে করছেন, বাংলার মাটি অন্যরকম। উত্তর ভারতে মেরুকরণের রাজনীতি করে নির্বাচনি বৈতরণী পার হওয়া গেলেও বাংলায় সেই ফর্মূলা বারবার ব্যার্থ প্রমাণিত হয়েছে। অনেক বিজেপির প্রবীণ নেতাই আক্ষেপ করে বলেন, অটলবিহারি বাজপেয়ীর সময় সংখ্যালঘুদের একাংশের ভোটও বিজেপি পেয়ে এসেছে। পরে ক্রমশ উগ্রহিন্দুত্ব কেন্দ্রীক রাজনীতির কারণে সংখ্যালঘুরা বিজেপির থেকে দূরে সরে গিয়েছেন। কিন্তু বাংলায় সংখ্যালঘুরা যে সবচেয়ে বেশি খুন হয়েছে একথা মনে করিয়ে দিয়ে পোড়খাওয়া রাজনীতিক শমীক সংখ্যালঘুদের মধ্যে তৃণমূলের প্রতি আস্থায় চিড় ধরাতে চেয়েছেন। যাতে সংখ্যালঘুদের সব ভোট বিজেপি না পেলেও তৃণমূলের ঝুলিতে না যায়। যাতে আখেরে লাভবান হতে পারে গেরুয়া শিবির।