প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লিঃ ‘অখণ্ড ভারত’ বিতর্কে দিল্লির অবস্থান জানতে চায় ঢাকা৷ এই সূত্রে নয়াদিল্লি স্থিত বাংলাদেশ হাই কমিশনকে ইতিমধ্যেই বিশেষ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ঢাকার তরফে। নির্দেশ যথেষ্টই স্পষ্ট ও একমুখী আর তা হল – নয়া সংসদ ভবন ‘অখণ্ড ভারত’ ম্যুরাল বিতর্কে ভারতের অবস্থান ঠিক কী? সম্প্রতি ঢাকা থেকে এমনই বার্তা দিয়েছেন হাসিনা সরকারের বিদেশ প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
‘ঢাকা ট্রিবিউন’ সূত্রে জানা গেছে আলম ভারতে স্থিত বাংলাদেশ হাই কমিশনার মহম্মদ মুস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে ইতিমধ্যেই এ বিষয়ে ফোনে বার্তালাপ করেছেন। একইসঙ্গে সরকারি নির্দেশ মোতাবেক ভারতের কেন্দ্রীয় বিদেশমন্ত্রী ড. সুব্রমনিয়ম জয়শঙ্করের সংস্পর্শে এসে এই বিতর্কিত বিষয়ে ভারত সরকারের নৈতিক এবং সর্বোপরি সরকারি অবস্থান কী, তা স্পষ্ট করার জন্য জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আর্জিও দেওয়া হয়েছে। ‘আমরা জানতে পেরেছি ভারতের নয়া সংসদ ভবনে যে ম্যুরাল (অখণ্ড ভারত) নিয়ে এ বিতর্কের সৃষ্টি তা মহামতি অশোকের রাজত্বের সীমান্ত নির্দেশ বিশেষ। খ্রীস্টপূর্ব ৩০০ বছর পূর্বে সম্রাট অশোকের ভারতে সাংস্কৃতিক, সামাজিক সমন্বয় প্রবাহ উঠে এসেছে ওই মানচিত্র’ – এই মর্মেই বার্তা দিয়ে শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘যদি তা-ই হয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে ম্যুরাল নিয়ে কোনও ভেদাভেদ বা রাজনীতিকরণের প্রশ্নই ওঠে না।’ তবে একইসাথে তিনি এও জানিয়েছেন, ‘অখণ্ড ভারত’ নিয়ে দিল্লির সরকারি অবস্থান পরিস্কার হওয়া প্রয়োজন। আর সেই উদ্দেশ্যেই দিল্লিস্থিত বাংলাদেশ হাই কমিশনকে দেওয়া হয়েছে এরূপ নির্দেশ। চলতি সপ্তাহেই এনিয়ে দিল্লিতে বৈঠকে বসতে পারেন উভয় দেশের প্রতিনিধিরা।
প্রসঙ্গত গত সপ্তাহে বিদেশ মন্ত্রকের সাংবাদিক সম্মেলনে মন্ত্রকের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত সচিব অরিন্দম বাগচি দাবি করেছিলেন, ‘অখণ্ড ভারত’ ম্যুরালটি মূলতঃ সম্রাট অশোকের শাসনাধীন ভারতবর্ষের চিত্র। একইসঙ্গে তা সুশাসন এবং সু-নেতৃত্বের প্রতিচ্ছবিও।’ এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা কে কি মন্তব্য করছেন মোটে তা বিচার্য নয় এবং মন্ত্রণালয় সে নিয়ে ব্যক্তিগত স্তরে মন্তব্য করতে নারাজ। এদিকে নেপাল এবং পাকিস্তানের পর ম্যুরাল বিতর্ক স্পর্শ করেছে বাংলাদেশকেও। নেপাল প্রধানমন্ত্রীর সফরের মধ্যেই বাংলাদেশেও, বিশেষ করে শীর্ষ বিরোধী শিবিরে এই প্রসঙ্গে দেখা দিয়েছে উত্তেজনা।
সূত্রের দাবি, খালেদা জিয়ার বিএনপি’এর কিছু নেতা এই নিয়ে ইতিমধ্যে ভারতের উদ্দেশ্যে বাছা বাছা বিশেষণ প্রয়োগ করেছেন। অভিযোগের আঙুল উঠেছে ‘ভারতদরদী’ শেখ হাসিনা সরকারের ‘মুখে কুলুপে’র উদ্দেশ্যেও, কারণ সংশ্লিষ্ট মানচিত্রে উল্লেখ না থাকলেও খুলনা, সিলেট, যশোর, রাজশাহীর মতো অঞ্চল তাতে অন্তর্ভুক্ত যা সহজেই অনুমেয়। সে ক্ষেত্রে হাসিনা সরকার কেন ‘নির্বাক’, মোদি সরকারের কেন মানচিত্র নিয়ে ‘অতিরঞ্জিতকরণ’; সে নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। বলাবাহুল্য এহেন পরিস্থিতিতে চাপে পড়েছে হাসিনা সরকার। এহেন পরিস্থিতি নিরিখে ভারতের সঙ্গে সৌহার্দ্য তথা বাংলাদেশ এর সাধারণ মানুষের জিজ্ঞাসার কাছে দায়বদ্ধ থেকে গঠনমূলক কূটনৈতিক অবস্থান নিতেই এবার সরাসরি দিল্লির মতামত জানতে আগ্রহী হল ঢাকা।