উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: গরম বাড়ছে। সঙ্গে বাড়ছে হাইপারথার্মিয়া ও হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি (Hyperthermia and Heatstroke)। হঠাৎ অস্বাভাবিকভাবে উচ্চ তাপমাত্রা অনুভব করলে কী করবেন জানালেন উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক এবং মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাঃ অভেদ বিশ্বাস
হাইপারথার্মিয়া কী
হাইপারথার্মিয়া হল শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়া (Temperature Changes)। শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের নিজস্ব কৌশল রয়েছে। তাপমাত্রা বেড়ে গেলে অতিরিক্ত ঘাম হয়, প্রস্রাব কমে আসে, তৃষ্ণার্ত বোধ হয় এবং অতিরিক্ত জল খাওয়া হয়। হাইপারথার্মিয়াতে এই নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাগুলো কাজ করে না। ফলে বিভিন্ন সমস্যা হয়ে থাকে। যেমন –
পেশিতে খিঁচুনি – গরমে কাজ করলে অতিরিক্ত জল খাওয়া হয়। সেইসঙ্গে প্রস্রাব আর ঘাম বেশি হয়। সেজন্য শরীরে সোডিয়ামের পরিমাণ কমে গিয়ে পেশিতে খিঁচুনি হয়। এক্ষেত্রে বিশ্রাম ও জল-ইলেক্ট্রোলাইট খেতে হয়।
অজ্ঞান হয়ে যাওয়া – দীর্ঘসময় গরমে দাঁড়িয়ে থাকলে বা হঠাৎ তাপমাত্রার পরিবর্তন হলে বিশেষত বয়স্ক মানুষের রক্তচাপ কমে গিয়ে মাথা ঘোরে বা অজ্ঞান হয়ে যান। এটি বিপজ্জনক নয়, তবে সতর্কতা দরকার।
অবসাদ – হিটস্ট্রোক থেকে হিট এগজশনের পার্থক্য হল, প্রথমটিতে স্নায়বিক দুর্বলতা থাকে, অর্থাৎ মানসিক বিভ্রান্তি, খিঁচুনি, অবচেতন বা অচেতন অবস্থা ইত্যাদি হয়। তাপজনিত অবসাদ হিটস্ট্রোকের পূর্ববর্তী ধাপ। সেক্ষেত্রে রোগীর দেহের তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়।
লক্ষণ – দুর্বলতা, মাথা ঘোরা, প্রচণ্ড ঘাম, বমিবমি ভাব, মাথাব্যথা, দ্রুত শ্বাসপ্রশ্বাস।
করণীয় – বিশ্রাম, ঠান্ডা আবহাওয়া, জল ও ইলেক্ট্রোলাইট দিলে রোগী সুস্থ হয়ে ওঠেন।
হিটস্ট্রোক
এটি তাপমাত্রাজনিত অবস্থা। এক্ষেত্রে শরীরের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস (বা ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট)-এর বেশি হয়ে স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করে। ফলে বিভ্রান্তি, খিঁচুনি বা অবচেতনা দেখা যায়।
প্রকারভেদ অনুযায়ী হিটস্ট্রোক দুই রকম –
ক্ল্যাসিকাল হিটস্ট্রোক – এটি বয়স্ক বা শিশুদের দেখা যায়। অতিরিক্ত গরম পরিবেশে থাকার ফলে এমন হয়ে থাকে। এতে ঘাম কমে যায় বা একেবারেই হয় না। সাধারণভাবে একে হিটস্ট্রোক বলা হয়।
এক্সারশনাল হিটস্ট্রোক – অতিরিক্ত পরিশ্রম করার ফলে অল্পবয়সি যেমন ট্রাফিক পুলিশ, সৈনিক, খেলোয়াড় প্রমুখ অতিরিক্ত ঘাম হওয়া সত্ত্বেও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হন।
লক্ষণ – শরীরের উচ্চ তাপমাত্রা, বিভ্রান্তি, খিঁচুনি বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, রক্তচাপ কমে যায়, হৃদস্পন্দন ও শ্বাস বেড়ে যায়, ত্বক গরম ও শুষ্ক হয়ে যায়, ঘাম কম বা বন্ধ হয়ে যায় (বিশেষত ক্ল্যাসিকাল হিটস্ট্রোকে), কিডনি, লিভার, হৃদযন্ত্রের প্রভূত ক্ষতি হয়।
চিকিৎসা
- রোগীকে তাৎক্ষণিক ঠান্ডা করা, বরফ জলে বা ঠান্ডা জলে স্নান
- স্যালাইন দিয়ে বা অতিরিক্ত ঠান্ডা জল ও ইলেক্ট্রোলাইটের সাহায্যে শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করা
- কিডনি, লিভার, ফুসফুস, রক্ত চলাচল প্রভৃতি পর্যবেক্ষণ করা
প্রতিরোধ
- খুব প্রয়োজন না হলে অতিরিক্ত গরম এড়িয়ে চলা, বিশেষত বয়স্ক, শিশু বা যাদের কোমরবিডিটি রয়েছে
- পর্যাপ্ত জল ও ইলেক্ট্রোলাইট খাওয়া
- হালকা ও ঢিলেঢালা পোশাক পরা
- শরীরকে ঠান্ডা থেকে গরমে অভ্যস্ত করা
শরীরকে ঠান্ডা করার পদ্ধতি
- রোগীকে ঠান্ডা জলের মধ্যে রাখা যেতে পারে
- শরীরকে ঠান্ডা জলে ভিজিয়ে রাখা বা ভেজা তোয়ালে বা কাপড় ভিজিয়ে রেখে বাতাস করা
- ঘাড়, বগল ও কুঁচকিতে আইস প্যাক বা বরফ জল দেওয়া
- আইভি স্যালাইন দিতে হবে
- রোগী খেতে পারলে জল ও ইলেক্ট্রোলাইটের মিশ্রণ দেওয়া যেতে পারে
- প্রয়োজনে অক্সিজেন দিতে হবে
- খিঁচুনি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে ডায়জিপাম বা লোরজিপাম দিতে হবে
- কিডনি, লিভার, রক্ত চলাচল, ব্লাড সুগার, ইউরিয়া, ক্রিয়েটিনিন, প্রস্রাবের পরিমাণ পর্যবেক্ষণ করতে হবে
কখন আইসিইউ সাপোর্ট
যদি এক বা একাধিক অঙ্গ কাজ করা বন্ধ করে দেয়, তাহলে রোগীকে আইসিইউতে রাখতে হবে
যা এড়িয়ে চলতে হবে
- কিডনি বা লিভারের ওপর চাপ ফেলে এরকম ওষুধ ব্যবহার করা যাবে না
- পেশি ক্ষয় এড়াতে সঠিক হাইড্রেশন
- রোগীকে দ্রুত ঠান্ডা করার জন্য রক্তচাপ শীঘ্র নেমে যেতে পারে, তাই চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে ঠান্ডা করতে হবে