রাহুল মজুমদার, শিলিগুড়ি : দিদা হওয়ার অপেক্ষায় বেঙ্গল সাফারির শিলা। রয়েল বেঙ্গল টাইগার শিলার তৃতীয় সন্তান কিকা আপাতত কয়েক সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা। এমনটাই মনে করছেন চিকিৎসক ও সাফারি পার্কের কর্তারা। কিকার একটি বৈশিষ্ট্য তাকে বাকিদের থেকে আলাদা করে রেখেছে। তা হল তার গায়ের রং। সাদা বাঘ কিকার ভূমিষ্ঠ হতে চলা সন্তানও তাই যথেষ্ট স্পেশাল। সেকথা মাথায় রেখেই যত্ন নেওয়া হচ্ছে মায়ের।
ইতিমধ্যে ওয়েস্ট বেঙ্গল জু অথরিটির কাছে এব্যাপারে সব তথ্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। সব ঠিক থাকলে আগামী অগাস্ট কিংবা সেপ্টেম্বর মাসে সন্তানের জন্ম দিতে পারে কিকা। আপাতত তাই সাফারি পার্কের সন্তানসম্ভবা মাকে দেখভালের ওপর বিশেষ নজর দিচ্ছে পার্ক কর্তৃপক্ষ। সন্তান না হওয়া পর্যন্ত কিকাকেও আর সাফারির জন্য না ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যদিও এখনই পুরো বিষয়টি প্রকাশ্যে আনতে চাইছেন না পার্কের কর্তারা। কিকার অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার বিষয়ে ওয়েস্ট বেঙ্গল জু অথরিটির মেম্বার সেক্রেটারি সৌরভ চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তিনি বলেন, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে বোঝা যাবে কিকা অন্তঃসত্ত্বা কি না।
২০১৭ সালে শিলিগুড়ির বেঙ্গল সাফারি পার্কে রয়েল বেঙ্গল টাইগার শিলা এবং স্নেহাশিসকে নিয়ে আসা হয়েছিল। তার কিছুদিন পরে বিভান নামে আরও একটি রয়েল বেঙ্গল টাইগার নিয়ে আসা হয়। সাফারি পার্কে আসার মাস আষ্টেক বাদে শিলা এবং স্নেহাশিসের মধ্যে সখ্য হয়। এরপরই অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে শিলা। ২০১৮ সালের ১১ মে তিন সন্তানের জন্ম দেয় শিলা। তার মধ্যে একটি সাদা বাঘ ছিল। মুখ্যমন্ত্রী নিজে এই তিনটি বাঘের নামকরণ করেছিলেন কিকা, ইকা এবং রিকা। পরবর্তীতে ইকার মৃত্যু হয়। এরপর থেকে একের পর এক সন্তানের জন্ম দিয়েছে শিলা।
এই মুহূর্তে সাফারি পার্কে বাঘের সংখ্যা ১০। তার মধ্যে একটি মাত্র সাদা বাঘ এবং একটি পূর্ণবয়স্ক পুরুষ বাঘ, দুটি মধ্যবয়সি পুরুষ বাঘ এবং দুটি পুরুষ শাবক রয়েছে। মনে করা হয়েছে, এই পূর্ণবয়স্ক ও মধ্যবয়সি তিনটি পুরুষ বাঘের মধ্যে কোনও একটির সঙ্গে কিকার সখ্য হয়েছে চলতি বছরের এপ্রিল মাসের দিকে। এরপরেই কিকা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে বলে অনুমান।
পার্ককর্তারা সংবাদমাধ্যমে কোনও মন্তব্য করতে না চাইলেও অন্তঃসত্ত্বা ধরে নিয়ে কিকার বিশেষ যত্ন নেওয়া শুরু করেছে পার্ক কর্তৃপক্ষ। তাকে আলাদা রাখা হচ্ছে। সেখানে সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে তার ওপর নজরদারি রাখা হচ্ছে। খাবারের সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে জল দেওয়া হচ্ছে। ভিটামিন জাতীয় খাবার দেওয়া হচ্ছে। খাবারের পরিমাণও কিছুটা বাড়ানো হয়েছে। বিভিন্ন ওষুধ দেওয়া হচ্ছে খাবারের সঙ্গে। গরমে যাতে তার কষ্ট না হয় সেজন্য কুলার বসানো হয়েছে। খাবার এবং স্নানের জলেও বরফ দেওয়া হচ্ছে। চিকিত্সকরা প্রতিদিনই দুবেলা করে এসে কিকার স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখছেন।
তবে কিকার অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ার ঘটনা সামনে আসার পর কিন্তু বেঙ্গল সাফারি পার্কে প্রজননকেন্দ্র গড়ে তোলার দাবি জোরালো হচ্ছে। একের পর এক বুনোদের সফল প্রজনন হলেও কেন সাফারি পার্কে স্থানীয় প্রজননকেন্দ্র হবে না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। ওয়েস্ট বেঙ্গল জু অথরিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই সাফারি পার্কে প্রজননকেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য সেন্ট্রাল জু অথরিটির কাছে অনুমতি চেয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে ছাড়পত্র মিললে তবেই কাজ শুরু হবে।