‘অনলাইনে মনোনয়ন জমা নিতে এত অ্যালার্জি কেন?’ রাজ্যকে প্রশ্ন প্রধান বিচারপতির

উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ আগামী ৮ জুলাই রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন। বৃহস্পতিবার রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করেছেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহা। রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে পাঁচ দফা আবেদন জানিয়ে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বিজেপির আইনজীবী শ্রীজীব চক্রবর্তী এবং কংগ্রেসের আইনজীবী কৌস্তুভ বাগচী। প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম জনস্বার্থ মামলার অনুমতি দিয়ে দ্রুত শুনানির সিদ্ধান্ত নেন শুক্রবার সকালে। দুপুরেই মামলার শুনানি হয় প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চে। রাজ্যের তরফে মামলার শুনানিতে অংশ নেন আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্য নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী ছিলেন জিষ্ণু সাহা।

ইতিমধ্যেই রাজ্যে দামামা বেজেছে পঞ্চায়েত নির্বাচনের। রাজ্যের এই ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রায় ৭৫ হাজার আসনে মনোনয়ন জমা দেওয়ার জন্য ৫ দিন সময় দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এই সময় অত্যন্ত  কম বলে মনে করছে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে মনোনয়ন থেকে ভোটগ্রহণ পুরো সময়টি অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে করা হয়েছে। মনোনয়নে সময় খুবই কম দেওয়া হয়েছে। ভোটের নির্ঘণ্ট নিয়ে পুনর্বিবেচনা করতে পারে কমিশন। মহকুমাশাসক, জেলাশাসক বা কমিশনের অফিসে মনোনয়ন জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করা যায় কি না দেখতে হবে। হাই কোর্টের নির্দেশ, এই বিষয়গুলি নিয়ে কমিশন নিজেদের বক্তব্য জানাতে হবে। ভোটগ্রহণ থেকে গণনা গোটা প্রক্রিয়া সিসিটিভি ক্যামেরার নজরদারিতে করা ভাল। তবে পঞ্চায়েত ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী ব্যবহার করা হবে কি না, সে বিষয়ে রাজ্য সরকারই সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানিয়েছে হাই কোর্ট।

এদিন মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম বলেন, পুরো প্রক্রিয়াটিতে তাড়াহুড়ো মনে হচ্ছে! আমরা রাজ্য নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য শুনতে চাই। মামলায় একাধিক আবেদন করা হয়েছে। মনোনয়নে এত কম সময় কেন? এত আসনে মনোনয়ন জমা দিতে হবে। ফলে বিষয়টি তো কমিশনের চিন্তা করা প্রয়োজন। পঞ্চায়েতের মেয়াদ কবে শেষ হচ্ছে?

রাজ্যের তরফে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, অগস্টে মেয়াদ শেষ হচ্ছে। জুলাইয়ের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। তার পরে এক মাস সময় লাগে। রাজ্য নির্বাচন কমিশনের বিজ্ঞপ্তিকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। এর আগে দেখা গিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট নির্বাচন কমিশনের বিজ্ঞপ্তিতে হস্তক্ষেপ করেনি।

এদিন শুনানিতে কংগ্রেসের আইনজীবী কৌস্তুভ বাগচি বলেন, পঞ্চায়েত নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তিকে আমরা চ্যালেঞ্জ করছি না। অনলাইনে মনোনয়ন দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক। মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় দুষ্কৃতীদের তাণ্ডব দেখা যায়। মুর্শিদাবাদের রানিনগর এলাকার ক্ষেত্রে উদাহরণ দিতে পারি এমন ঘটনার। কৌস্তভের এই দাবির প্রেক্ষিতে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন ইলেকট্রনিক তথ্য গ্রহণযোগ্য নয়। অনলাইনে মনোনয়ন নিতে হবে বলে নিয়মে কোথাও নেই।

অনলাইনে মনোনয়ন জমা নেওয়া প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি বলেন, অনলাইনে মনোনয়ন জমা নেওয়ার ক্ষেত্রে কী অসুবিধা? অনলাইন হলে তো সুবিধা। কেউ সশরীরে যেতে না পারলে তিনিও মনোনয়ন দিতে পারবেন। স্ক্রুটিনি কত সহজ হয়ে যাবে। প্রযুক্তিতে আপনাদের এত অ্যালার্জি কেন? নিয়ম আগে ছিল না বলে এখন হবে না এটা তো কোনও কাজের কথা নয়! এই হাই কোর্টেও তো অনেক কিছু আগে হয়নি। এখন হচ্ছে। আগামী সোমবার আগামী শুনানিতে সব বিষয়েই বিবেচনা করা হবে। নির্বাচন কমিশন আগে রিপোর্ট জমা দিক।