ময়নাগুড়ি: স্বামী-সন্তানকে ফেলে সাড়ে চার মাস আগে প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে আসেন এক মহিলা। মঙ্গলবার তাঁর ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার হল। আর ঘটনার পর থেকে ফেরার সেই প্রেমিক। ঘটনাটি ময়নাগুড়ি শহরের হাসপাতালপাড়া এলাকার। মৃত ওই মহিলার নাম সম্পা দাস রায় (৩০)। তাঁর দেহ উদ্ধারকে কেন্দ্র করে রহস্য দানা বেঁধেছে। কেন আত্মহত্যা করলেন তিনি? আর তাঁর সেই প্রেমিকই বা এখন কোথায়? এটা খুন নয়তো! এসব নান গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।
সূত্রের খবর, চার মাস ধরে সম্পা তাঁর প্রেমিক ময়নাগুড়ি বাগজান এলাকার বাসিন্দা বিজয় রায়কে স্বামী পরিচয় দিয়ে হাসপাতালপাড়ার একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। এদিন ভোরে ভাড়াবাড়ির শৌচাগারে সম্পার ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার হয়। ঘটনার পর পালিয়ে যান প্রেমিক বিজয়। ঘটনার ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্ত শুরু হয়েছে। পুলিশ মৃতদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য জলপাইগুড়ি সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালে পাঠিয়েছে। বুধবার মৃতদেহটির ময়নাতদন্ত করা হবে বলে জানা গিয়েছে। ময়নাগুড়ি থানার আইসি সুবল ঘোষ বলেন, ‘মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে। মৃতদেহের পাশে একটি নোট উদ্ধার হয়েছে।’
স্থানীয় সূত্রের খবর, জলপাইগুড়ি শহরের জয়ন্তীপাড়ার বাসিন্দা সম্পার সঙ্গে তেরো বছর আগে জলপাইগুড়ি শহরের মাসকালাইবাড়ির বাসিন্দা বাপি দাসের বিয়ে হয়। তাঁদের দশ বছরের এক কন্যাসন্তানও রয়েছে। সাড়ে চার মাস আগে সম্পা স্বামী ও সন্তানকে ছেড়ে প্রেমিক বিজয়ের সঙ্গে পালিয়ে যান। এরপর থেকেই সম্পা ও বিজয় ময়নাগুড়ি হাসপাতালপাড়ায় ভাড়াবাড়িতে থাকতে শুরু করেন৷ এদিন ভোরবেলা বিজয় ভাড়াবাড়ির মালিক তরণীকান্ত রায়কে ফোন করে জানান, সম্পা বাড়ির শৌচাগারে আত্মহত্যা করেছে। সে কারণে বিজয় ময়নাগুড়ি হাসপাতালে রয়েছেন। বিজয়ের ফোন পেয়ে তড়িঘড়ি তরণী গিয়ে দেখেন ওই ভাড়াবাড়ির শৌচাগারটি বাইরে থেকে বন্ধ। বাথরুমের দরজা খুলতেই ভেতরে সম্পার ঝুলন্ত মৃতদেহ দেখতে পান তিনি। ভোরের দিকে বাড়ির মূল দরজায় তালা ছিল। ঘটনার পর থেকে বিজয়ের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। অনুমান করা হচ্ছে বিজয় বাড়ির প্রাচীর টপকে পালিয়েছেন। এরপর ময়নাগুড়ি থানায় খবর দেওয়া হয়। পুলিশ এসে মৃতদেহ উদ্ধার করে। মৃতদেহের পাশে একটি নোট পাওয়া যায়৷ নোটে লেখা রয়েছে ‘আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়’। ভাড়াবাড়ির মালিক বলেন, ‘ভোরবেলা বিজয়ের ফোনে ঘুম ভাঙে আমার। ঘুম থেকে উঠে শৌচাগারে সম্পার ঝুলন্ত দেহ দেখতে পাই৷ পুলিশকে সবকিছু জানিয়েছি।’
ময়নাগুড়ি থানার থেকে সম্পার স্বামী বাপিকে ফোন করে মৃত্যুর বিষয়টি জানানো হয়। বাপি তাঁর সন্তান ও পরিবারের অন্যদের নিয়ে ময়নাগুড়ি থানায় আসেন৷ বাপির বক্তব্য, ‘সাড়ে চার মাস আগে সম্পা বাড়ি থেকে চলে যান৷ এদিন পুলিশের ফোন পেয়ে তাঁর মৃত্যুর কথা জানতে পারি। কীভাবে তাঁর মৃত্যু হল তা বুঝতে পারছি না।’
গোটা বিষয়টি খুন নাকি আত্মহত্যা তা এখনও স্পষ্ট নয়। ঘটনার পর বিজয় পালিয়ে যাওয়ায় গোটা বিষয়টি নিয়ে রহস্য দানা বেঁধেছে। ময়নাগুড়ি থানার পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। মৃত্যুর প্রকৃত কারণ ময়নাতদন্তের পরই জানা যাবে। ঘটনাকে কেন্দ্র করে ময়নাগুড়ি হাসপাতালপাড়া এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।