উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: একটু দূরেই তুষারাবৃত পাহাড়, পাইন গাছে ঘেরা সবুজ গালিচার মতো মাঠ। পহেলগাঁও থেকে ৫ কিমি দূরে ক্যানভাসে তুলি দিয়ে আঁকা ছবির মতো বৈসারন ভ্যালি বরাবরই পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্র। গাড়ি নিয়ে যাওয়া যায় না, পায়ে হেঁটে বা ঘোড়ায় চেপে যেতে হয়। কিন্তু সেখানেই মঙ্গলের দুপুরে গুলি চালিয়ে প্রায় ৩০ জন পর্যটককে হত্যা করল দুষ্কৃতীরা (Pahalgam Terror Attack)। ২০১৯ সালে পুলওয়ামায় হামলার পর এতবড় জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেনি কাশ্মীরে। ঘটনার যেসব ভিডিও সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে রক্তাপ্লুত অবস্থায় দিশাহীন হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন মহিলারা। পুরুষদের বেশিরভাগই রক্তে ভিজে নিস্পন্দ পড়ে আছেন সবুজ ঘাসের উপর, কেউ বা চেয়ারে বসে রক্ত মেখে মৃত্যুর প্রতীক্ষায়।
দুপুর দেড়টা নাগাদ ভিড়ে মিশে থাকা প্রায় ৪ থেকে ৫ জন সন্ত্রাসবাদী সরাসরি পর্যটকদের ধর্ম পরিচয় জানতে চেয়ে গুলি চালিয়ে খুন করেছে। সব মিলিয়ে প্রায় ৫০ রাউন্ড গুলি চলেছে। যার জেরে অন্তত ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। একটি ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, এক মহিলা কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। কাতর স্বরে তাঁর একটাই দাবি আমার স্বামীকে বাঁচান। ভিডিওয় দেখা গেছে, তাঁর পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে আছেন দুই ব্যক্তি। দেখে বোঝা যাচ্ছে, তাঁদের অবস্থা সঙ্কটজনক। জঙ্গিদের গুলিতে মৃত্যু হয়েছে কর্নাটকের রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী মঞ্জুনাথ রাওয়ের। সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্ত্রী পল্লবী ও শিশুপুত্র। ছেলে ও স্ত্রীর সামনে মঞ্জুনাথকে মাথায় গুলি করেছে জঙ্গিরা। স্ত্রী পল্লবী তাঁকেও মেরে ফেলার কাতর আর্জি জানালে শোনেনি ঘাতকরা। বরং জানায়, ‘তোকে মারব না, মোদিকে গিয়ে বল।’ ভিডিওয় দেখা যাচ্ছে রক্তাপ্লুত অবস্থায় চেয়ারে বসে রয়েছেন এক ব্যক্তি। তার স্ত্রী কাঁদতে কাঁদতে তার যথাসাধ্য সুশ্রুষার চেষ্টা চালাচ্ছেন। ভয়াবহতার এমনই টুকরো টুকরো টুকরো ছবি এদিন ছড়িয়ে ছিল বৈসরন ভ্যালি জুড়ে। পহেলগাঁওয়ের এই হত্যালীলার কঠোর নিন্দা করেছেন সৌদি সফরে থাকা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মোদির নির্দেশে কাশ্মীরে পৌঁছেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শা। শা জানিয়েছেন, কাউকে ছাড়া হবে না। নিন্দা করেছেন কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা থেকে পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতি। ঘটনার পরই এলাকা ঘিরে ফেলে সেনা। শুরু হয়েছে চিরুনি তল্লাশি। কাশ্মীরে জঙ্গিহামলার ঘটনা মাঝেমধ্যেই শোনা যায়। কিন্তু পর্যটকদের উপর হামলার ঘটনা বিরল বললেই চলে। পর্যটন কাশ্মীরের অর্থনীতির মেরুদণ্ড, সেক্ষেত্রে পর্যটকদের উপর হামলা হলে তার সরাসরি প্রভাব যে কাশ্মীরের অর্থনীতির উপর পড়বে তা বলাই বাহুল্য।