সায়নদীপ ভট্টাচার্য, বক্সিরহাট : কখনও দুধের ট্যাংকারের তলায়, কখনও আবার নদীতে লগ ভাসিয়ে কোটি কোটি টাকার চন্দন কাঠ পাচারের কারবার দেখিয়েছিল দক্ষিণী ছবি পুষ্পা। পাচারের এমন কিছু অভিনব কায়দা দেখে ভিরমি খেয়েছিলেন বনকর্তারাও। ওই একই কায়দায় এবার ভুটান ও ডুয়ার্সের শাল-সেগুনের জঙ্গল কার্যত সাফ করে দিচ্ছে মাফিয়ারা। বন দপ্তরের নজর এড়াতে রায়ডাক ও সংকোশের বুকে ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে বহু মূল্যবান কাঠ। নদীর স্রোতের সঙ্গে ভাসতে ভাসতে সেই কাঠ পৌঁছে যাচ্ছে অসমে। এভাবেই কোটি কোটি টাকার কারবার চলছে রোজ। বন দপ্তর যেন সব জেনেও শীতঘুমে। বন দপ্তরের কোচবিহারের এডিএফও বিজনকুমার নাথ অবশ্য বলছেন, আমাদের নজরদারি রয়েছে। প্রয়োজনে আরও বাড়ানো হবে।
সড়কপথে কাঠ পাচার এখন অনেকটাই ঝক্কির। জায়গায় জায়গায় নাকা চেকিংয়ে নাস্তানাবুদ হতে হয় পাচারকারীদের। কিছু জায়গায় সেটিং করে রেহাই মিললেও সব জায়গায় প্রভাব খাটে না। তাই বিকল্প পথ বেছে নিয়েছে উত্তরের পুষ্পারা। ঠিক সেই সিনেমার কায়দাতেই এখন গোটা পাচারচক্র চালাচ্ছে তারা।
কয়েক মাস ধরে নদী দিয়ে কাঠ পাচারের স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠেছে বক্সিরহাট। রায়ডাক ও সংকোশ নদীর মাঝে দুর্গম এলাকায় অবৈধ করাতকলে কাটা হচ্ছে বহু মূল্যবান শাল, সেগুন কাঠের গুঁড়ি। তারপর তা পাচার হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়। সূত্রের খবর, ভুটান ও ডুয়ার্সের জঙ্গল থেকে বড় বড় গাছের গুঁড়ি কেটে ভেলা বানানো হয়। সেই ভেলার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয় গাড়ির চাকার বড় বড় টিউব। হাওয়াভর্তি টিউবগুলোই ভারী কাঠের গুঁড়িগুলোকে জলে ভাসিয়ে রাখে। জলের স্রোত সহজেই ভেলাগুলোকে বহুদূর ভাসিয়ে নিয়ে যায়। সংকোশ সেতুর ওপর কিছুটা সময় অপেক্ষা করলেই নদীপথে কাঠ পাচারের এমন দৃশ্য চোখে পড়ে।
ডুয়ার্সের জঙ্গল থেকে বহু মূল্যবান কাঠ রায়ডাক অথবা সংকোশের নদীপথে অসমের ৭ নম্বর ঘাট, পাগলির ঘাট, চৌধুরী ঘাট, কাঁঠালতলি ঘাট হয়ে সংকোশ সড়ক ও রেলসেতুর তলা দিয়ে গরুমারা চর, মুসলিম চর পেরিয়ে ফলিমারি মিলনবাজার লাগোয়া বন্যাগুড়ি এবং অসমের তামারহাট লাগোয়া জয়গুরু বাজার ঘাট ও বাগডোগরা ঘাটের নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছে যায়। ওইসব জায়গায় আগেই প্রস্তুত থাকে পাচারচক্রের লোকজন। কোমরে দড়ি বেঁধে জলে নেমে সেই কাঠের ভেলা ডাঙায় তুলে মজুত করা হয়। বক্সিরহাটের অসম-বাংলা সীমানা লাগোয়া লাউকুঠির একাধিক অবৈধ করাতকল রয়েছে। সেখানে চোরাই গাছের গুঁড়িগুলি চাহিদামতো আকারে চেরাই করে বিভিন্ন জায়গায় পাচার করে দেওয়া হয়।
ফলিমারি লাগোয়া বন্যাগুড়িতেও এমন কিছু অবৈধ করাতকল রয়েছে। প্রশাসনের তরফে অভিয়ান চালিয়ে সেগুলি বন্ধ করে দেওয়া হলেও স্থানীয়দের একাংশের দাবি, ফের চালু হয়েছে ওই করাতকলগুলি। কোচবিহার-১ রেঞ্জের আটিয়ামোচড় বিটের বনকর্তারা অবশ্য এর জন্য কর্মীসংকটকেই দাযী করছেন। সেইসঙ্গে তুলে ধরছেন পরিকাঠামোর অভাবের কথা।
ওই এলাকাগুলি ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে দুর্গম হওয়ায় প্রশাসনের তরফে দ্রুত সেখানে পৌঁছানো সম্ভব নয়। যে কারণে চোরাই কাঠ পাচারের স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠেছে বক্সিরহাটের বন্যাগুড়ি ও ছিট বড় লাউকুঠি। এক কাঠ পাচারকারীর কথায়, দুর্গম নদীপথে কাঠ পাচার অনেক সহজ এবং সময়ও কম লাগে। কারণ সংকোশ বনবস্তি থেকে সড়কপথে গন্তব্যস্থল ফলিমারি কিংবা অসমের লাউকুঠি মেরেকেটে ৪৫ কিলোমিটার হলেও নদীপথে দূরত্ব ১৫ কিলোমিটারেরও কম। শুধু তাই নয়, রাতে কিংবা ভোরবেলা নদীপথ কার্যত জনমানবশূন্য থাকে। এতে বাড়তি সুবিধা হয়।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এভাবে দিনের পর দিন এই কারবার চললেও বন দপ্তর কি শুধু নজরদারির দোহাই দিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যাবে, নাকি আদৌ কোনও ব্যবস্থা নেবে? সেই উত্তরটা এখনও অধরা।
নাগরাকাটা: দাঁতালের হানা (Elephant attack)। বরাতজোরে প্রাণে বাঁচলেন যুবক। তবে পালাতে গিয়ে কাঁটাতারের বেড়ার মধ্যে…
চোপড়াঃ নদী থেকে বালি তোলার যন্ত্রাংশ ও কয়েকটি বালি বোঝাই গাড়ি আটক করল চোপড়া থানার…
শিলিগুড়ি: উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে (NBU)-র গবেষক ছাত্রীর রহস্যমৃত্যুর ঘটনায় ক্রমেই উত্তপ্ত হচ্ছে পরিস্থিতি। অভিযুক্ত অধ্যাপক সিদ্ধার্থ…
মালদা: অপরিপক্ক লিচুর বিক্রি বন্ধে এবার মালদায় (Malda) আমবাজারে হানা দিল স্বাস্থ্য সুরক্ষা দপ্তর। মঙ্গলবার…
হেমতাবাদঃ আবারও কি ফিরে আসছে চিটফান্ড? কম সময়ের মধ্যে টাকা দ্বিগুণ করার টোপ দিয়ে হেমতাবাদে…
মালদা: আইনত বিয়ের পরেও স্ত্রীর মর্যাদা দিতে নারাজ স্বামী। এমনকি, ওই তরুণীকে মারধরের পাশাপাশি খুনের…
This website uses cookies.