উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ দীর্ঘদিন ধরে ভারতীয় কুস্তি সংস্থার সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় শাসকদল বিজেপি সাংসদ ব্রিজভূষণ শরণ সিংহের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার অভিযোগ উঠে আসছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। ব্রিজভূষণের গ্রেপ্তারের দাবিতে সংসদ ভবন অভিযানে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয় কুস্তিগিরদের। দিল্লি পুলিশ আটক করে আন্তর্জাতিক পদকজয়ী সাক্ষী মালিক, বিনেশ ফোগট, বজরং পুনিয়ার মতো কুস্তিগিররা। এতেও অভিযুক্ত ব্রিজভূষণ গ্রেপ্তার না হওয়ায় অবশেষে গঙ্গায় নিজেদের পদক বিসর্জন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন সাক্ষী, বিনেশ, পুনিয়ারা। সেই মতই গঙ্গার ঘাটে পৌছেও কৃষক নেতাদের অনুরোধে সিদ্ধান্ত বদল করলেন কুস্তিগিররা।
মঙ্গলবার বিকাল ৫টা নাগাদ হরিদ্বারে পৌঁছে যান সাক্ষী মালিক, বিনেশ ফোগটরা। সঙ্গে পদক নিয়ে গিয়েছেন তাঁরা। গঙ্গার হর কি পৌড়ী ঘাটে দাঁড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন সাক্ষী মালিক, বিনেশ ফোগটেরা। বুকের কাছে একটি বাক্সে নিজেদের সব পদক ধরে রেখেছেন তাঁরা। সাক্ষীদের ঘিরে রয়েছেন পরিবারের লোকেরা। স্থানীয় অনেক মানুষ ভিড় করেছেন সেখানে। কুস্তিগিরদের সমর্থনে স্লোগান দিচ্ছেন সাধারণ মানুষ। অনেকে আবার কুস্তিগিরদের কাছে আবেদন করছেন, তাঁরা যেন পদক বিসর্জন না দেন। মাটিতে বসে পড়েছেন সাক্ষীরা। তাদের চোখে জল। যত সময় এগোচ্ছে তত ভিড় বাড়ছে হর কি পৌড়ী ঘাটে। ব্রিজভূষণের গ্রেপ্তারির দাবিতেও স্লোগান দিতে দেখা যায় উপস্থিত জনতাকে। এদিন রাত সাড়ে সাতটা নাগাদ ঘটনাস্থলে পৌঁছায় কৃষক নেতারা। তারা অনুরোধ করেন পদক বিসর্জন না দেওয়ার। সেই অনুরোধে সারা দিয়ে নিজেদের মত বদল করেন সাক্ষী, বিনেশ, পুনিয়ারা। কেন্দ্রকে পাঁচ দিনের সময়সীমা দেয় অভিযুক্ত ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের। নইলে ফের একই পথে হাঁটবেন বলেও জানিয়েছেন কুস্তিগিররা।
মঙ্গলবার সকালেই অলিম্পিক্স পদকজয়ী সাক্ষী মালিক টুইট করে জানান, ‘‘এই পদকগুলো আমাদের প্রাণ। আজ এগুলো গঙ্গায় ফেলে দেওয়ার পর আমাদের বেঁচে থাকার আর কোনও মানে নেই। তাই পদক ফেলে দেওয়ার পর ইন্ডিয়া গেটের সামনে আমরা আমরণ অনশনে বসব।” এই পোস্টের আগে সাক্ষী খানিকটা কটাক্ষের সুরে টুইট করে লেখেন, ‘মহেন্দ্র সিংহ ধোনি এবং চেন্নাই সুপার কিংসকে শুভেচ্ছা। দেখে ভালো লাগছে যে কোনও ক্রীড়াবিদ অন্তত সম্মান পাচ্ছে। আমরা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি।’
দীর্ঘদিন ধরে ভারতীয় কুস্তি সংস্থার সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় শাসকদল বিজেপি সাংসদ ব্রিজভূষণ শরণ সিংহের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার অভিযোগ উঠে আসছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। সে কারণেই এমন সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছেন কুস্তিগিররা। যদিও নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ব্রিজভূষণ।
রবিবার দিল্লিতে বিনেশ ফোগট, বজরং পুনিয়া, সাক্ষী মালিক সহ অনেক কুস্তিগিরকে আটক করে পুলিশ। মিছিল করে নতুন সংসদ ভবনের দিকে তাঁরা ‘মহিলাদের মহাপঞ্চায়েত’ করার জন্য এগোচ্ছিলেন। সেই কারণে আটক করা হয় তাঁদের। জানা গিয়েছে, কুস্তিগিরদের কর্মসূচির অনুমোদন আগেই খারিজ করেছিল পুলিশ। তারপরও তাঁরা বিক্ষোভ দেখাতে গেলে অশান্তির সৃষ্টি হয়। রবিবার সাক্ষীদের টেনেহিঁচড়ে পুলিশ ভ্যানে তোলার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়। যা দেখে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন নীরজ চোপড়া, সুনীল ছেত্রীদের মতো ক্রীড়াবিদরা। প্রশাসনের ভূমিকার সমালোচনা করেছেন তাঁরা। দিল্লির বিশেষ পুলিশ কমিশনার (আইনশৃঙ্খলা) দীপেন্দ্র পাঠক জানিয়েছেন, তাঁরা ক্রীড়াবিদদের সম্মান করেন। কিন্তু নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধনে কোনও বিশৃঙ্খলা হতে দিতে পারেন না। এদিকে রবিবারের ঘটনার পর কুস্তিগিরদের যন্তর মন্তরে ধর্না কর্মসূচি আটকে দেয় পুলিশ।