শুভঙ্কর চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি : মায়ানমার থেকে নাগাল্যান্ড হয়ে উত্তরবঙ্গে ঢোকার আগেই অসমে উদ্ধার হল ৪৫ কোটি টাকার ইয়াবা ট্যাবলেট। মঙ্গলবার রাত ১২টা নাগাদ অসমের হাথিখিরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে শ্রীভূমি পুলিশ ওই বিপুল পরিমাণ মাদক আটক করে। অসম পুলিশ সূত্রে খবর, একটি ট্রাক থেকে দেড় লক্ষ ইয়াবা ট্যাবলেট (১৬ কিলোগ্রাম) উদ্ধার হয়েছে। এক পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গিয়েছে, মাদকগুলি ধুবড়ি, বঙ্গাইগাঁও, শিলিগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, ডালখোলা সহ মোট এগারোটি জায়গায় সরবরাহ করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। শুক্রবারই শিলিগুড়িতে মাদক সরবরাহের পরিকল্পনা ছিল কারবারিদের।
ধুবড়ি ও শিলিগুড়ি হয়ে বাংলাদেশ এবং আলিপুরদুয়ার হয়ে ভুটানে ইয়াবা পাঠানোর ছক কষা হয়েছিল। নাগাল্যান্ডের ট্রাক থেকে ট্যাবলেট ভর্তি প্যাকেটগুলি আলাদা রুটের চারটি ছোট পণ্যবাহী পিকআপ ভ্যান এবং তিনটি বাসে গোপন ঘাঁটিতে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল মাদক কারবারিরা। তার আগেই পুলিশ তাদের ধরে ফেলে। অসম পুলিশের এক পদস্থ কর্তার বক্তব্য, ‘সন্দেহভাজন দুই পাচারকারীকে ধরতে অভিযান শুরু হয়েছে৷ ট্রাক থেকে দুটি মোবাইল ফোন পাওয়া গিয়েছে। সেগুলির কল রেকর্ড খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মাদক পাচারে অসমের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের যোগাযোগও পাওয়া গিয়েছে।’
মাদক পাচারের স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠেছে ইন্দো-মায়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্ত। প্রতিদিন চলছে কোটি কোটি টাকার মাদকের কারবার। উত্তর-পূর্ব ভারতে অতিসক্রিয় হয়েছে ছয়টি আন্তর্জাতিক পাচারচক্রের তিন হাজারেরও বেশি ড্রাগ পেডলার। ইয়াবা, ওয়ার্ল্ড ইজ ইওরস-এর পাশাপাশি রমরমা হয়েছে হেরোইন, ব্রাউন সুগার, গাঁজা, বিদেশি সিগারেট এবং সোনা পাচারের কারবার। ফলে ঘুম ছুটেছে নিরাপত্তা এজেন্সিগুলির।
মায়ানমারের টিড্ডিম ও মান্দালয় হয়ে চম্ফাই এবং সাগাইং ডিভিশনের সঙ্গে মণিপুরের ১০টি পৃথক পাচার রুটের সন্ধান পেয়েছেন গোয়েন্দারা। সেগুলিতে নিয়মিত অভিযানও চালাচ্ছে সেনাবাহিনী ও স্থানীয় পুলিশ। বাংলাদেশের কক্সবাজার, পটুয়াখালি ও কুড়িগ্রামে ৪০টিরও বেশি ইয়াবা সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়েছে বলে খবর। মায়ানমার থেকে উত্তর-পূর্ব ভারত এবং উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন পাচার রুট হয়ে ইয়াবা এবং ওয়ার্ল্ড ইজ ইওরস পৌঁছোচ্ছে বাংলাদেশে। সম্প্রতি ইয়াবা সিন্ডিকেট ভুটানেও সক্রিয় হয়েছে। আলিপুরদুয়ার এবং অসম হয়ে ভুটানে ইয়াবা ঢুকছে। মানস জাতীয় উদ্যান হয়ে ভুটানে মাদক পাচার হচ্ছে বলে রিপোর্ট গিয়েছে দিল্লিতে।
শুধুমাত্র ইয়াবা পাচারে উত্তরবঙ্গে কাজ করছে দেড়শোর বেশি পেডলার। তাদের মধ্যে শিলিগুড়িতেই সক্রিয় ষাটজনের বেশি।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের একটি সূত্র জানাচ্ছে, বর্তমানে উত্তর-পূর্ব ভারত এবং উত্তরবঙ্গ লাগোয়া বাংলাদেশ ও ভুটান সীমান্তে ৪০টিরও বেশি রুটে মাদক পাচার চলছে। একাধিক জঙ্গি গোষ্ঠী সরাসরি মাদকের কারবার নিয়ন্ত্রণ করছে। এই মুহূর্তে উত্তর-পূর্বে মাদক পাচারের সবথেকে বড় ঘাঁটি রয়েছে মিজোরামের চম্ফাইতে। সেখান থেকে সরাসরি মায়ানমারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।
যে ছয়টি পাচারচক্র সক্রিয় তাদের মধ্যে দুটি চক্র পুরোপুরি জঙ্গিদের নিয়ন্ত্রণেই চলছে বলেই খবর। একাধিক জঙ্গি সংগঠনের যৌথমঞ্চ ইউনাইটেড ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট অফ ওয়েস্টার্ন সাউথ ইস্ট এশিয়া সেই কারবার নিয়ন্ত্রণ করছে। ফলে মাদক পাচারের টাকা দেশবিরোধী কার্যকলাপে ব্যবহার হওয়ায় উদ্বেগ বাড়ছে গোয়েন্দাদের।