নভি মুম্বই: নাদিনে ডি ক্লার্কের শট হরমনপ্রীত কাউরের হাতে জমা পড়তেই রঙিন উৎসবের সূচনা। কপিল দেব, মহেন্দ্র সিং ধোনিদের রেকর্ড স্পর্শ করে বিশ্বজয়ী ভারতের মেয়েরাও। ত্রয়োদশ প্রচেষ্টায় প্রথমবার। বার দুয়েক শেষ ধাপে পৌঁছেও শেষরক্ষা হয়নি। অধরা মাধুরী অবশেষে ধরা দিল গতকাল।
হরমনপ্রীত, স্মৃতি মান্ধানা, দীপ্তি শর্মা, শেফালি ভার্মা, রিচা ঘোষদের হাত ধরে স্বপ্নপূরণ ঝুলন গোস্বামী, মিতালি রাজ, অঞ্জুম চোপড়াদের। ভিকট্রি ল্যাপে বিশ্বজয়ীদের শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে ঝুলন-মিতালিরা আবেগে ভাসলেন। রিচাদের সঙ্গে কেঁদে ভাসলেন। বুকে টেনে নিলেন স্মৃতিদের। হরমনরা কাপ ঝুলনদের হাতে তুলে দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন, এই জয় শুধু তাঁদের নয়, পূর্বসূরিদেরও।
অভিনন্দন বার্তায় ঝুলন বলেছেন, ‘আগে দু’বার ফাইনালে উঠেছি আমরা। কিন্তু লাইনটা ক্রস করতে পারিনি। আজ ওরা পারল। অবশেষে জার্নিটা সম্পূর্ণ। ১৯৯৭ সালের কথা খুব মনে পড়ছে। বল গার্ল হিসেবে ইডেন গার্ডেন্সে বেলিন্ডা ক্লার্কের ভিকট্রি ল্যাপ দেখার পর স্বপ্ন দেখেছিলাম, দেশের হয়ে বিশ্বকাপ জিতব। হরমনের অসাধারণ এই দল আমার সেই স্বপ্নপূরণ করল। ওদের কৃতিত্বের কাছে কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়।’
ঝুলনের বিশ্বাস, এই বিশ্বজয় ভারতের মহিলা ক্রিকেটকে নতুন দিশা দেবে। পর্দার আড়ালে থাকা টিম ম্যানেজমেন্ট, কোচদের কথাও ঝুলনের মুখে। মহিলা ক্রিকেটের কিংবদন্তি পেসারের মতে, টিম তৈরি এবং সাফল্যের জন্য দলকে উদ্বুদ্ধ করা কোচ অমল মুজুমদারের যে ভাবনার প্রতিফলন বিশ্বকাপে। হরমনপ্রীত, স্মৃতি ও অমল-ত্রয়ীর স্পর্শ বদলে দিয়েছে দলের মানসিকতা।
হরমন ব্রিগেডের ভিকট্রি ল্যাপে পা মেলানো প্রাক্তন অধিনায়ক মিতালির গলাতেও ঝুলনের সুর। বলেছেন, ‘আমি দুই দশক ধরে এই স্বপ্নটা দেখেছিলাম। ভারতীয় মহিলা দল বিশ্বকাপ ট্রফি তুলে ধরবে। অবশেষে আজ রাতে সেই স্বপ্ন সত্যি। ২০০৫-এর ফাইনালে হৃদয় ভাঙা থেকে ২০১৭ সালের কাপ যুদ্ধে লড়াই- আজ সেই ক্ষতে প্রলেপ।’
প্রাক্তন অধিনায়ক অঞ্জুম বলেছেন, ‘বিশ্বকাপ জয় সোনালি ভবিষ্যতের সূচনা মাত্র। আগামীকাল প্রথম সূর্যোদয় আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে দেবে। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডের মতো দলগুলিকে হারানোর স্পর্ধা জোগাবে। বিশ্বসেরা। সেই চোখে দেখবে বাকি দলগুলি।’ মহিলা ক্রিকেট মহল, এই জয়ে উদ্বেলিত আসমুদ্র হিমাচল। শচীন তেন্ডুলকার, গৌতম গম্ভীর, সূর্যকুমার যাদবরাও যার বাইরে নন।
শচীন তেন্ডুলকার : ১৯৮৩ গোটা প্রজন্মকে বড় স্বপ্ন দেখা এবং তা পূরণের রসদ জুগিয়েছিল। এদিনের জয় গোটা দেশে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য প্রতিভাকে অনুপ্রাণিত করবে। বিশ্বাস জোগাবে, পরিশ্রম করলে তোমরাও পারবে।
সুনীল গাভাসকার : হরমনপ্রীতের হাতে ট্রফি! ভারতীয় ক্রিকেটের আরও এক স্মরণীয় মুহূর্ত। লিগপর্বে টানা তিন ম্যাচ হারের পর ঘুরে দাঁড়ানো। অসাধারণ। ঐতিহাসিক জয়। দেশের মহিলা ক্রিকেটকে বদলে দেবে। গোটা দেশ, ক্রিকেটমহল তোমাদের জন্য গর্বিত।
গৌতম গম্ভীর : তোমরা শুধু ইতিহাস তৈরি করোনি, তোমরা একটা পরম্পরা তৈরি করলে, যা আগামী প্রজন্মকে চিরকাল উদ্বুদ্ধ করবে।
সূর্যকুমার যাদব : ঐতিহাসিক মুহূর্ত। আবেগ, অধ্যবসায়, সাফল্যের বিশ্বাস-গোটা বিশ্বকে দেখিয়ে দিল আমাদের ‘উইমেন ইন ব্লু’। অভিনন্দন।
নীরজ চোপড়া : প্রথমবার মহিলা বিশ্বকাপ জয়। অভিনন্দন ভারতীয় মহিলা দলকে।
অনিল কুম্বলে : শৃঙ্খলা, ভয়ডরহীন মানসিকতা এবং একতা। দুর্দান্ত ফিনিশ। চাপের মধ্যে নিজেদের সেরাটা দেওয়া, এই জয় তারই প্রতিফলন। কৃতিত্ব প্রাপ্য দক্ষিণ আফ্রিকারও। ওরাও দারুণ লড়ল।
বীরেন্দ্র শেহবাগ : চ্যাম্পিয়ন! প্রতিটি চার, প্রতিটি উইকেট, তোমাদের আবেগ গোটা দেশের হৃদয় জিতে নিয়েছে। বিশ্বসেরা মেয়েদের জন্য আমরা গর্বিত। হরমন এবং ওর দল, আগামী প্রজন্মকে নতুন বার্তা দিল, জিতনে কা, লড়নে কা, চমকনে কা।
যুবরাজ সিং : নতুন যুগের সূচনা। তোমাদের দৃঢ়তা, মরিয়া প্রচেষ্টা, দক্ষতাকে কুর্নিশ। দল হিসেবে যে স্পিরিট দেখিয়েছ তোমরা, তা কোনওদিন ভোলা যাবে না।

