উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: হাতে ধরে কেউ কখনও শেখায়নি। মাঝেমধ্যে ইসলামপুর শহরে যখন ঘুরতে যেত, তখন সেখানকার কুমোরটুলিতে গিয়ে বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটাত রামগঞ্জ-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের শিবনগর কলোনির এক খুদে। শিল্পীরা প্রতিমা গড়েন কীভাবে, সেখান থেকেই ধারণা পেয়েছিল বর্তমানে শ্রীকৃষ্ণপুর হাইস্কুলের সপ্তম শ্রেণির পড়ুয়া কুণাল রায়। বছরতিনেক আগে ইচ্ছে জাগে, নিজের হাতে গড়বে প্রতিমা। কিন্তু খড়, মাটি, সাজসজ্জার সামগ্রী ইত্যাদি উপকরণ জোগাড় করা তো সহজ ব্যাপার নয়। কুণালের মুশকিল আসান করল তার খেলার সঙ্গীরা। একদল খুদের প্রচেষ্টায় তৈরি হল ছোট্ট সরস্বতী প্রতিমা।
তারপর থেকে কখনও দেশলাই বাক্স দিয়ে মূর্তি গড়েছে কুণাল, কখনও বাঁশ দিয়ে তৈরি করেছে শিল্পসামগ্রী। কোনওরকম প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ ছাড়াই নিজের ইচ্ছেতে সে এই কাজ করে অবসর সময়ে। পড়াশোনার ফাঁকে চলে আসে তার বন্ধু শুভদীপ, সানি, বিরাজরা। কেউ মাটি মাখে, কেউ কাটে খড়। কুণাল বলছিল, ‘প্রতিমা গড়তে আমার ভীষণ ভালো লাগে। একটু একটু করে নিজের হাতে গড়ে তোলার পর যখন সাজগোজ শেষ হয়, তখন দেবীর মুখ দেখে মন ভরে যায়। আগামীদিনে পড়াশোনার সঙ্গে সঙ্গে এটা চালিয়ে যাব।’ বড় শিল্পী হতে চায় সে। তাই আরও ভালো কাজ শেখার সুযোগ পেলে পাড়ি দিতে চায় শহরে।
এ বছর প্রতিমা আকারে বেড়েছে। এখন কুণাল যেটা গড়ছে, সেটার পুজো হবে গ্রামেই। প্রতিমার জন্য অগ্রিম অর্থও পেয়েছে খুদে। গ্রামের শিবনগর কলোনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রের কাজ দেখতে গিয়েছিলেন শিক্ষকরা। খুদের প্রতিভায় মুগ্ধ প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিৎ হাওলাদার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, ২০২৫ সালে স্কুলের পুজো হবে কুণালের গড়া প্রতিমা দিয়েই। যা শুনে উচ্ছ্বসিত সপ্তমের ওই পড়ুয়া। রোজ সময় সুযোগ করে গ্রামের বাকি কচিকাঁচাদের মতো বড়রাও আসছেন কুণালের বাড়ি। প্রতিমার কাজ কতটা এগোল, তা দেখতে।
কুণালের বাবা স্বপন রায়ের কথায়, ‘অনেকেই বলেন, এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা নাকি মোবাইলে আসক্ত। কথাটা পুরোপুরি সত্যি নয়। দেখুন না, কুণাল অবসর সময়ে কত সুন্দর কাজ করছে। বন্ধুরা ওকে সাহায্য করে। এদের দেখে বাকিরাও জীবনে ভালো পথ বেছে নিক।’