উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: গণধর্ষণের জেরে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছিল মেদিনীপুরের ১১ বছরের নাবালিকা। ২৪ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা মেয়েটির গর্ভপাতে সম্মতি দিয়েছে মেডিকেল বোর্ড। সেই মেডিকেল বোর্ড কলকাতা হাইকোর্টে রিপোর্ট পেশ করে। ওই রিপোর্ট দেখে সোমবার কলকাতা হাইকোর্ট মতামত দিয়েছে ২৪ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা নাবালিকার গর্ভপাত করানো যাবে। তবে সেটা তমলুক হাসপাতালে না। একটু আধুনিক হাসপাতালে গর্ভপাত করলে ভালো হবে বলে জানানো হয়েছে। বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য নির্দেশ দিয়েছেন, মেয়েটির যত দ্রুত সম্ভব গর্ভপাত করানো হোক এসএসকেএম হাসপাতালে। ইতিমধ্যেই এসএককেএম-কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেখানে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করে মেয়েটির গর্ভপাত করানোর ব্যবস্থা করার জন্য।
জানা গিয়েছে, ১১ বছরের ওই নাবালিকা, পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়া। কয়েক মাসে আগেই সে গণধর্ষণের শিকার হয়। তার জেরে যে সে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে, কিন্তু তা এত দিন বুঝতেই পারেনি পরিবার। গত মাসে তারা তা জানতে পেরে গর্ভপাতের সিদ্ধান্ত নেয়। হাসপাতালে গেলে সেখান থেকে তাদের জানানো হয়, ২৪ সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে। তাই এখন উচ্চ বা শীর্ষ আদালতের অনুমতি ছাড়া কোনও ভাবেই গর্ভপাত করানো সম্ভব নয়। এরপরই তাঁরা ১৬ অগাস্ট কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। ২৪ সপ্তাহের ভ্রূণ গর্ভপাত করানোর কথা জানান।
বিচারপতি ভট্টাচার্য জানান, মেডিকেল টার্মিনেশন অফ প্রেগন্যান্সি আইনের (১৯৭১) ৩ নম্বর ধারা অনুযায়ী ২৪ সপ্তাহের পরে গর্ভপাতের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে নাবালিকার ভবিষ্যৎ নিয়ে আদালত চিন্তিত। তাই সময় নষ্ট না করে বৃহস্পতিবার সকালেই এ বিষয়ে নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপরেই নাবালিকার গর্ভপাত সম্ভব কি না তা জানতে পূর্ব মেদিনীপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ও তমলুক হাসপাতাল সুপারকে নিয়ে মেডিকেল বোর্ড গঠনের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। পরের ৪৮ ঘণ্টায় নাবালিকার যাবতীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে হবে বলেও নির্দেশ দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে আজ সেই রিপোর্ট জমা করার নির্দেশও দেওয়া হয়।
আইন অনুযায়ী, চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে ২০ সপ্তাহ সময় পর্যন্ত গর্ভপাতের সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। বিশেষ পরিস্থিতিতে তা ২৪ সপ্তাহ পর্যন্ত বাড়ানো যায় ঠিকই, তবে সব দিক বিবেচনা করে চিকিৎসকরা যদি নিরাপদ বোঝেন তবেই। এরও পরে গর্ভপাত করাতে গেলে আদালতের অনুমতি প্রয়োজন। গর্ভপাত আইন সংশোধনীতে বলা হয়েছে, শারীরিক বা মানসিক প্রতিবন্ধী প্রসূতি সহ কয়েকটি বিশেষ ক্ষেত্রে অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার ২৪ সপ্তাহের মধ্যে গর্ভপাতের অনুমতি দেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে শারীরিক প্রতিবন্ধী, ধর্ষণের শিকার, অন্তঃসত্ত্বা নাবালিকাদের গর্ভপাতের ঊর্ধ্বসীমা বাড়ানোর অনুমতি দেওয়া হবে। গর্ভধারণের ২০ সপ্তাহের মধ্যে গর্ভপাত করাতে হলে একজন চিকিৎসকের মতামত নেওয়া জরুরি এবং গর্ভধারণের পর ২০ থেকে ২৪ সপ্তাহের মধ্যে গর্ভপাত করাতে হলে দু’জন চিকিৎসকের মতামত নেওয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু এক্ষেত্রে সমস্ত পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে করতেই নাবালিকার ২৫ সপ্তাহ পার হয়ে গিয়েছে। তাই নাবালিকার জটিলতা বাড়বে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে।