Sunday, May 19, 2024
Homeজাতীয়শীতকালীন অধিবেশনের শেষদিনেও বহিষ্কৃত আরও ৩ সাংসদ

শীতকালীন অধিবেশনের শেষদিনেও বহিষ্কৃত আরও ৩ সাংসদ

প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লি: নির্ধারিত সময়ের একদিন আগেই শেষ হয়ে গেল সংসদের শীতকালীন অধিবেশন। বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা ১৫ মিনিট নাগাদ অধিবেশনের আনুষ্ঠানিক ‘সিনে ডাই’ ঘোষণা করেন লোকসভার অধ্যক্ষ ওম বিড়লা। অধিবেশনের শেষদিনেও বহিষ্কৃত হলেন তিন কংগ্রেস সাংসদ। বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা কমল নাথের পুত্র সাংসদ নকুলনাথ, ছত্তিশগড় প্রদেশ কংগ্রেস নেতা-সাংসদ দীপক বেইজ ও সর্বোপরি কর্ণাটকের উপ মুখ্যমন্ত্রী ডি কে শিবকুমারের ভাই ডি কে সুরেশ। এর ফলে বহিষ্কৃত বিরোধী সাংসদের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১৪৬। যার মধ্যে ১০০ জন লোকসভা এবং বাকি ৪৬ রাজ্যসভার প্রতিনিধি। সংসদীয় ইতিহাসে এযাবৎ যা সর্বকালীন রেকর্ড।

এদিন সংসদে উভয়কক্ষে অধিবেশন শুরু হওয়া মাত্র বোঝা গিয়েছিল কার্যসারণীর যবনিকা পতন হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। সংসদের নিম্নকক্ষে প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষ হওয়া মাত্র কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী অর্জুনরাম মেঘোয়াল কর্তৃক নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ সংক্রান্ত বিল, যা ইতিমধ্যেই রাজ্যসভার ছাড়পত্র পেয়েছে, আলোচনার জন্য উত্থাপিত হয়৷ সকাল থেকেই লোকসভা কক্ষে প্ল্যাকার্ড পোস্টার নিয়ে ওয়েলে নেমে তুমুল বিক্ষোভ দেখান তিন কংগ্রেস সাংসদ। সংসদে নিরাপত্তাভঙ্গের ইস্যুতে সরব হয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বয়ান দাবি করেন। চেয়ার প্যানেল রাজেন্দ্র আগরওয়াল তা খারিজ করায় সভার মধ্যেই চেয়ার লক্ষ্য করে কাগজ ছোঁড়েন, পোস্টার ছিঁড়ে ফেলেন সাংসদরা৷ বারবার করে সতর্ক করেও কাজ না হওয়ায় সরকারের তরফে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী সম্মিলিত বহিষ্কার প্রস্তাব পেশ করলে তিন কংগ্রেস সাংসদকে বহিষ্কার করেন স্পিকার। অবশ্য তার আগেই কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগে সভা থেকে ওয়াক আউট করেন তিনজন। এরপর নির্বিঘ্নেই সম্পন্ন হয় অধিবেশনের বাকি কাজ।

বিরোধীশূন্য কক্ষে বঙ্গ বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষ নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিলে বক্তব্য রাখতে গিয়ে অতীতে কংগ্রেস জমানায় দেশের জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে কেন্দ্র করে দুর্নীতি, অপশাসন যে হারে বৃদ্ধি পেয়েছিল তার নিষ্পত্তি স্বার্থেই এহেন ‘আইনের জামা’ পড়ানো প্রয়োজন রয়েছে বলে জানান। সেইসূত্রে পঞ্চায়েত ভোট বা রাজ্যে বিভিন্ন ভোটে শাসক দল দ্বারা প্রভাবিত করার অভিযোগ ব্যক্ত করে বিলটি পাস করিয়ে তা প্রতিরোধ করার দাবি জানান মেদিনীপুর কেন্দ্রের বিজেপি সাংসদ।

অন্যদিকে, সংসদের নিরাপত্তাভঙ্গের অভিযোগ তথা শতাধিক বিরোধী দলীয় সাংসদের বহিষ্কার ও প্রধানমন্ত্রী-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সংসদে অনুপস্থিতির প্রতিবাদে এদিন সংসদের প্রধান দ্বারপ্রান্ত থেকে বিজয়চক পর্যন্ত বিশাল মিছিল বের করে বিরোধী ইন্ডিয়া শিবির। ‘গণতন্ত্র বাঁচাও’ শীর্ষক এই মিছিলে অংশ নেন কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধি, কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, লোকসভা দলনেতা অধীর চৌধুরী, শিবসেনার সঞ্জয় রাউত, সমাজবাদী পার্টির রামগোপাল যাদব, আইএসপির এন কে প্রেমচন্দ্রণ সহ বহু শীর্ষ বিরোধী দলীয় নেতারা। দিল্লির বিজয়চকে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে সংসদের কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটানোর জন্য বিজেপিকেই দায়ী করেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে। তাঁর মতে, ক্ষমতাসীন দলের লোকজন সংসদের কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। সংসদ থেকে ১৪৬ জন সাংসদকে সাসপেন্ড করার প্রতিবাদে এদিন বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন বিরোধী দলের নেতারা।

সেই বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে খাড়গে বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বারাণসী সহ সর্বত্র কথা বলে বেড়াচ্ছেন, কিন্তু লোকসভা ও রাজ্যসভায় নয় (সংসদ নিরাপত্তা লঙ্ঘনের ঘটনা)। আমরা এর নিন্দা জানাই।’ খাড়গে এও বলেন, ‘শাসক দলের লোকজনই সংসদের কার্যপ্রণালীতে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছেন, বিরোধীরা নয়।’ তাঁর সংযোজন, ‘গতকাল প্রথমবারের মতো সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী ১২০ জন সাংসদকে নিয়ে রাজ্যসভায় দাঁড়িয়েছিলেন এবং সাংসদরা স্লোগান দিচ্ছিলেন। এতে বোঝা যায় তাঁদের গণতন্ত্রে বিশ্বাস নেই।’ শুক্রবার দিল্লির যন্তরমন্তরে বিরোধী শিবিরের ধর্না অবস্থানের কথা।

অবশেষে বিরোধীদের যাবতীয় দাবিদাওয়া উড়িয়ে বিরোধীশূন্য সংসদীয় নিম্নকক্ষে পা রাখেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেই মুহূর্তে লোকসভায় কেন্দ্রীয় তথ্য সম্প্রচার মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর প্রেস রেজিস্ট্রেশন বিলের জবাবি ভাষণ সম্পন্ন করতে গিয়ে জানান, দেশের চতুর্থ স্তম্ভে মর্যাদা, অধিকার ও স্বাধীনতা রক্ষায় বরাবর উদ্যোগী মোদি সরকার। সংবাদমাধ্যমের স্বার্থরক্ষা – এটা মোদির গ্যারান্টি। ঠিক সেই মুহূর্তে লোকসভায় নাটকীয় আবির্ভাব ঘটে প্রধানমন্ত্রীর। অনুরাগ সিং ঠাকুরের জবাবি ভাষণ সম্পন্ন হওয়া ও সংখ্যাগরিষ্ঠতার জেরে প্রেস রেজিস্ট্রেশন বিল পাস হওয়া ‘সিনে ডাই’ ঘোষণা করেন অধ্যক্ষ ওম বিড়লা। তার আগে অবশ্য তিনি জানান শীতকালীন সংসদে উৎপাদনশীলতার হার এবছর ৭৪ শতাংশ, মোট ১৪টি বৈঠক সম্পন্ন হয়েছে এবং সভা চলেছে প্রায় ৬১ ঘন্টা ৫০ মিনিট ধরে। এই অধিবেশনে লোকসভায় ১২ টি পেশ এবং মোট ১৮ টি বিল পাস হয়েছে যার মধ্যে ন্যায় সংহিতা অন্যতম। জনস্বার্থ জড়িত মোট ১৮২ টি বিষয় উত্থাপিত হয়েছে নিম্নকক্ষে।

Sushmita Ghosh
Sushmita Ghoshhttps://uttarbangasambad.com/
Sushmita Ghosh is working as Sub Editor Since 2018. Presently she is attached with Uttarbanga Sambad Digital. She is involved in Copy Editing, Uploading in website and various social media platforms.
RELATED ARTICLES
- Advertisment -
- Advertisment -spot_img

LATEST POSTS

IPL | ধোনির চেন্নাইকে হারিয়ে আইপিএলের চতুর্থ দল হিসাবে শেষ চারে বেঙ্গালুরু

0
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: আইপিএলের চতুর্থ দল হিসাবে প্লে অফে উঠল বেঙ্গালুরু। বেঙ্গালুরু বনাম চেন্নাইয়ের  গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচে টসে জিতে বল করার সিদ্ধান্ত নেন...

Siliguri | তিস্তায় জলস্তর বেড়ে আটক ২, উদ্ধারে শুরু তৎপরতা

0
শিলিগুড়ি: পাহাড়ে প্রবল বৃষ্টির জেরে তিস্তার জলস্তর হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় বিপত্তি ঘটলো রংপোতে। নদীতে আটকে পড়লেন দু'জন। তবে তাঁরা স্থানীয় না পর্যটক তা স্পষ্ট...

Patiram | ঘুমের মধ্যেই বেহুঁশ করে চুরি, যাওয়ার আগে আইসক্রিম খেলো চোরের দল

0
পতিরাম: এ যেন ফিল্মি কায়দায় চুরি। পরিবারকে গ্যাস স্প্রে করে অচৈতন্য করে বাড়ির সর্বস্ব চুরি করল চোরের দল। যাওয়ার আগে খেয়ে গেল আইসক্রিম। নগদ...

Bomb Recovered | বিস্ফোরণের পর ফের উদ্ধার জারভর্তি বোমা, নিষ্ক্রিয় করল বম্ব স্কোয়াড

0
কালিয়াচক: কালিয়াচকের রাজনগর মডেল গ্রামে বোমা বিস্ফোরণের পর আরও এক জার বোমা উদ্ধার (Bomb recovered) হল ঘটনাস্থল থেকে। ওই জার থেকে ৯টি প্লাস্টিকের বলবোমা...

Minority Scholarship Scam | স্কলারশিপের টাকা আত্মসাৎ! অভিযুক্ত ২ জনকে হেপাজতে চায় সিআইডি

0
বিশ্বজিৎ সরকার, করণদিঘি: মাইনোরিটি স্কলারশিপের (Minority Scholarship Scam) কোটি কোটি টাকা তছরুপের দায়ে অভিযুক্ত মহম্মদ ফইজুল রহমান ও আবদুস সামাদকে নিজেদের হেপাজতে নিতে চায়...

Most Popular