রাজ্য

৩৫০ বছরের প্রাচীন চাঁচল রাজপরিবারের দুর্গাপুজো, এখানে চণ্ডীরূপে পূজিত হন দেবী

সৌম্যজ্যোতি মণ্ডল, চাঁচল: পাহাড়পুর চণ্ডীমণ্ডপে চাঁচল রাজপরিবারের দুর্গাপুজো। যেখানে মা চণ্ডী রূপে পূজিত হন। এখানে দেবী দশভুজা নয় চতুর্ভুজা। রাজা আর নেই। নেই রাজ্যপাট। তবুও এলাকাবাসীর উদ্যোগে এখনও নিয়ম মেনে ধুমধাম করে হয়ে আসছে এই পুজো। রাজার দুর্গাপুজোয় রয়েছে বেশ কিছু ঐতিহ্য এবং বৈশিষ্ট্য। রয়েছে প্রচলিত বহু কাহিনী। পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে চাঁচলবাসীর আবেগ।

পুজোর দিনগুলিতে গোটা জেলা থেকে প্রায় লক্ষ মানুষের সমাগম হয়। সপ্তমীর সকালে চাঁচল রাজবাড়ির ঠাকুরবাড়ি থেকে প্রথা মেনে অষ্টধাতুর চতুর্ভুজা মা চণ্ডীকে ধুমধাম করে শোভাযাত্রা সহকারে নিয়ে যাওয়া হয় পাহাড়পুর চণ্ডীমণ্ডপে। অষ্টধাতুর এই বিগ্রহের পাশাপাশি মাটিরও একটি মূর্তি তৈরি করা হয়। সপ্তমী থেকেই সম্পূর্ণ প্রথা মেনে শুরু হয় পুজো। সব থেকে বেশি ভিড় অষ্টমী এবং কুমারী পুজোতে। কার্যত তিল ধারণের জায়গা থাকে না মন্দির চত্বরে। পুজো উপলক্ষ্যে বসে মেলাও। দশমীর গোধূলি লগ্নে সূর্য অস্ত যাওয়ার আগেই মা চণ্ডীর মাটির মূর্তিটি প্রথা মেনে স্থানীয় কুড়োল সমাজের লোকের কাঁধে করে বিসর্জন হয় মরা মহানন্দার ঘাটে। অষ্টধাতুর বিগ্রহটি আবার নিয়ে আসা হয় রাজবাড়ির ঠাকুরবাড়িতে। এই পুজো সঠিক কতটা পুরোনো তা কেউই বলতে পারে না। তবে আনুমানিক প্রায় ৩৫০ বছর ধরে হয়ে আসছে এই পুজো।

সময়টা সপ্তদশ শতাব্দীর শেষভাগ। সেই সময় উত্তর মালদার বিস্তীর্ণ এলাকার রাজা ছিলেন রামচন্দ্র রায়চৌধুরী। শুধু বাংলা নয়, বিহারের কিছু অংশও তাঁর রাজত্বের অন্তর্ভুক্ত ছিল। কথিত আছে, একবার তিনি যখন এভাবেই রাজত্ব দেখতে বেরিয়ে বাইরে রাত কাটাচ্ছিলেন, তখন তাঁকে স্বপ্নাদেশ দেন দেবী চণ্ডী। রাজাকে তিনি আদেশ দিয়েছিলেন, মহানন্দার সতীঘাটায় তাঁর চতুর্ভুজা অষ্টধাতু নির্মিত মূর্তি রয়েছে। রাজাকে সেই মূর্তি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। শুরু করতে হবে দুর্গাপুজো। দেবীর আদেশ পেয়ে পরদিন সকালেই সতীঘাটায় চলে যান রাজা। স্বপ্নাদেশে বর্ণিত জায়গায় নদীতে নেমে তুলে আনেন দেবী চণ্ডীর মূর্তি। সেবার থেকেই শুরু হয় রাজবাড়ির দুর্গাপুজো। দেবী চণ্ডীর অষ্টধাতুর মূর্তি সতীঘাটা থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে রাজবাড়িতে এনে প্রতিষ্ঠা করেন রাজা রামচন্দ্র। সেদিন থেকেই রাজবাড়িতে শুরু হয় দেবীর নিত্যপুজো। পরবর্তীতে ফের দেবীর স্বপ্নাদেশ পান রাজা। আদেশ অনুযায়ী সতীঘাটায় দেবীর আরেকটি মন্দির নির্মাণ করেন তিনি। তবে প্রথমে সেখানে মাটির ঘর ও খড়ের ছাউনি দিয়েই মন্দির তৈরি করা হয়। পরবর্তীতে রাজবংশের অন্যতম রাজা শরৎচন্দ্র রায়চৌধুরীর নির্দেশে তৎকালীন ম্যানেজার সতীরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে সেখানে পাকা দুর্গাদালান নির্মিত হয়। ততদিনে জায়গাটির নাম পরিবর্তিত হয়ে পাহাড়পুর হয়েছে। এখনও সেখানে রয়েছে সেই দুর্গাদালান। যেটি পাহাড়পুর চণ্ডীমণ্ডপ নামে পরিচিত।

ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি দেবজয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘ট্রাস্টি বোর্ডের তরফে সব দেখভাল করা হয়। এছাড়াও পুজোর একটি কমিটি রয়েছে। সমস্ত ঐতিহ্য এবং নিয়ম মেনে আমাদের এই পুজো হয়। প্রশাসনের পূর্ণ সহযোগিতা মেলে।’

Kuhelika Barman

Kuhelika Barman is working as Sub Editor Since 2016. Presently she is attached with Uttarbanga Sambad Digital. She is involved in Copy Editing, Uploading in website and various social media platforms.

Recent Posts

ভবিষ্যতে নার্স হতে চায় উচ্চ মাধ্যমিকের মেটেলি ব্লক সেরা দক্ষিন ধুপঝোরার নুরনেহার পারভীন। চালসা,১০ মে…

15 mins ago

Train Services | যাত্রীর চাপ সামলাতে নতুন ট্রেন, বুধবার করে চলবে হাওড়া-এনজেপি স্পেশাল

শিলিগুড়ি: বন্দে ভারতের পরিবর্তে নতুন ট্রেন (Train Services) পাচ্ছে নিউ জলপাইগুড়ি জংশন (NJP)। গ্রীষ্মকালীন পর্যটনে…

48 mins ago

Weather Report | রাজ্যের একাধিক জেলায় বজ্রবিদ্যুৎ সহ ঝড়-বৃষ্টির পূর্বাভাস

উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: রবিবার পর্যন্ত রাজ্যের একাধিক জেলায় বজ্রবিদ্যুৎ সহ ঝড়-বৃষ্টির পূর্বাভাস জারি করল…

53 mins ago

Bagdogra Airport | প্রবেশপথে লাইনে দাঁড়ানোর দিন শেষ, বাগডোগরা বিমানবন্দরে মুখ চিনবে প্রযুক্তি

খোকন সাহা, বাগডোগরা: আর মাত্র মাসখানেকের অপেক্ষা। বাগডোগরা বিমানবন্দরে (Bagdogra Airport) প্রবেশের মুখে সচিত্র পরিচয়পত্র…

1 hour ago

North Bengal University | কলেজগুলোতে ভর্তি প্রক্রিয়ার তোড়জোড়, কোর্সে বদল আনছে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়

শুভজিৎ দত্ত, নাগরাকাটা: কলেজ স্তরের নয়া ভর্তিতে (College Admission) কোর্সের ক্ষেত্রে রদবদল করেছে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়…

2 hours ago

Siliguri Water Crisis | শিয়রে জলসংকট, ট্যাংকার-পাউচ দিয়ে তেষ্টা মেটানোর মরিয়া চেষ্টা

ভাস্কর বাগচী ও রাহুল মজুমদার, শিলিগুড়ি: সাতসকালে কিছু ওয়ার্ডে জল মিলেছে বটে, কিন্তু বিকেল হতেই…

2 hours ago

This website uses cookies.