আলিপুরদুয়ার: পুজোর পর আলিপুরদুয়ারের বক্সা পাহাড় ও জঙ্গল দিয়ে বইতে থাকা অধিকাংশ নদী, নালা, ঝোরা ইতিমধ্যে শুকিয়ে গিয়েছে। ফলে বক্সার জঙ্গলের প্রায় ৭৬০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় থাকা বন্যপ্রাণীর থেকে শুরু করে পাখিদেরও পানীয় জলে টান পড়তে পারে। বিশালাকার বনাঞ্চলের বন্যপ্রাণীদের যাতে পানীয় জল নিয়ে কোনও সমস্যা না হয়, তার জন্য বিস্তীর্ণ বনাঞ্চলে থাকা ৪০টি কৃত্রিম জলাধারগুলিকে ইতিমধ্যে রিচার্জ করানোর কাজ শুরু করেছে বন দপ্তর। বক্সা টাইগার রিজার্ভের ডিএফডি (ওয়েস্ট) পারভিন কাশোয়ান বলেন, ‘বক্সার জঙ্গলে বন্যপ্রাণীদের সারাবছর পানীয় জলের জোগান দিতে বেশ কিছু কৃত্রিম জলাধার তৈরি করা হয়েছে। সেগুলিতে ইতিমধ্যে নিয়মিত জল সরবরাহও করা হচ্ছে। ফলে জঙ্গলে থাকা বন্যপ্রাণীদের পানীয় জল পেতে কোথাও কোনও সমস্যা হবে না।’
বর্ষাকালে বক্সার জঙ্গলের ভেতর দিয়ে বহু পাহাড়ি খরস্রোতা নদী ও ঝোরা বইতে দেখা যায়। শতাধিক সেই নদী ও ঝোরাগুলি বর্ষাকালে খরস্রোতা থাকলেও দুর্গাপুজোর পর অধিকাংশ নদী ও ঝোরা শুকিয়ে যায়। শীতে বেশিরভাগ ঝোরার বক্ষে কিলোমিটারের পর কিলোমিটারজুড়ে রয়েছে শুধু বালি ও পাথর। তবে হাতেগোনা কয়েকটি পাহাড়ি নদীতে শীতে সামান্য জল পাওয়া গেলেও গরম পড়তে অনেক নদীতে সেটাও উধাও হয়ে যায়। ফলে গরমের তীব্রতা যত বাড়ে বক্সার বনাঞ্চলে তত জলসংকট প্রকট হয়। বন দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত প্রায় পাঁচ বছরে বক্সার বিস্তীর্ণ জঙ্গলে প্রায় ৪০টি কৃত্রিম জলাধার তৈরি করা হয়েছে। যে জলাধারগুলিতে সারাবছর জল থাকে। গরমকালে ওই সকল জলাধারে গিয়ে জঙ্গলের বন্যপ্রাণীরা জলপান করে।
বক্সার জঙ্গল হরিণ, চিতাবাঘ, হাতি, বাইসন, ভালুক, ব্ল্যাক প্যান্থার, বাঁদর, শেয়াল, বুনো শূকর, বুনো কুকুর বা ঢোল সহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর অনুকূল বিচরণক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। বক্সার পরিবেশ অনুকূল হওয়ায় এখানে গত কয়েকমাস ধরে রয়েল বেঙ্গল টাইগার স্থায়ীভাবে থাকছে বলে দাবি বনকর্তাদের। বাঘের বিষয়ে বেশ কিছু তথ্যপ্রমাণও বন দপ্তরের কর্তাদের হাতে চলে এসেছে। বাঘবনের বাইরে থেকে বাঘ এনে ছাড়ার একটা পরিকল্পনা আগেই নেওয়া হয়েছিল। সেই মতো জঙ্গলের পরিকাঠামোকে বাঘেদের বসবাসের উপযোগী করে তুলতে গত কয়েক বছরে বক্সার জঙ্গলে প্রায় ৭০০ হরিণ ছাড়া হয়েছে। এছাড়া বিস্তীর্ণ এলাকায় ঘাস লাগিয়ে বন্যপ্রাণীদের আদর্শ বিচরণক্ষেত্র গড়ে তোলার কাজ চলছে। হরিণ, বাইসন, হাতির দলও সেখানে চরে বেড়ায়। তবে দুর্গাপুজোর পর থেকে বর্ষার আগে পর্যন্ত বক্সার জঙ্গলে বন্যপ্রাণীদের জন্য পানীয় জলের একটা সমস্যা থাকলেও কৃত্রিম জলাধারগুলি গড়ে তোলার পর ওই সমস্যাও কাটিয়ে উঠেছে কর্তৃপক্ষ। দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, সপ্তাহ খানেক হল যে সব জলাধার শুকিয়ে গিয়েছে, কিংবা জলাধারে তলানিতে জল রয়েছে, সেই জলাধারগুলিতে ট্যাংকারের সাহায্যে, কোথাও পাম্প চালিয়ে ভরাট করা হচ্ছে।