নাগরাকাটাঃ দাঁতালের তাণ্ডবে লন্ডভন্ড নাগরাকাটার টন্ডু টিজি স্টেট প্ল্যান প্রাথমিক বিদ্যালয়। গত ৫বছরে এই স্কুলে হাতি হামলা চালিয়েছে মোট ৬৩বার। হাতির হানায় স্কুলের কোনও ঘরই আর বর্তমানে অক্ষত নেই। ফলে স্কুলের পঠনপাঠন থেকে ছাত্রছাত্রীদের মিড ডে মিল খাওয়া, সবই হচ্ছে খোলা আকাশের নীচে স্কুল মাঠে। জঙ্গল লাগোয়া স্কুলটিকে হাতির হান থেকে রুখতে স্কুলের বাউন্ডারির চারদিকে বৈদ্যুতিক ফেন্সিং লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বনদপ্তর।
প্রধান শিক্ষক দীপক বড়ুয়া বলেন, স্কুলের ভবিষ্যৎ নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন উঠে গেছে। কি করলে এই প্রতিষ্ঠানটিকে বাঁচাতে পারব জানা নেই। চারপাশে একটি গভীর পরিখা তৈরির দাবি জানানো হলেও তা আজও বাস্তবায়িত হয় নি। বন দপ্তরের বন্যপ্রাণ শাখার খুনিয়া রেঞ্জের রেঞ্জার সজল দে বলেন, হাতির গতিবিধির প্রতি সতর্ক নজর রেখে চলা হচ্ছে। ওই এলাকাটি হাতির যাতায়াতের পথ বলে জানাচ্ছেন বন দপ্তরের ডায়না রেঞ্জের রেঞ্জার অশেষ পাল। তিনিও ঘটনায় দুঃখিত। রেঞ্জার বলেন, স্কুল বাঁচাতে সেখানে ব্যাটারি চালিত ফেন্সিং তৈরির একটি প্রস্তাব রয়েছে। বাজেটে ধরাও আছে। অনুমোদন মিললেই কাজটি করে দেওয়া হবে।
জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার রাতে ডায়না জঙ্গল থেকে বেড়িয়ে একটি হাতি হামলা চালায় নাগরাকাটার টন্ডু টিজি স্টেট প্ল্যান প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। হামলায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে স্কুলটির তৃতীয় শ্রেণীর পড়ুয়াদের কক্ষটি। এই শ্রেণীকক্ষেই রাখা ছিল মিড ডে মিলের চাল, ডাল, সয়াবিন, মশলাপাতি ইত্যাদি সামগ্রী। এদিন এই শ্রেণীকক্ষটি ভেঙে সেসব খাদ্যসামগ্রী সাবাড় করে দেয় হাতিটি। এর পাশাপাশি হাতিটি হামলা চালায় আগে থেকেই কার্যত ধ্বংসস্তুপ হয়ে থাকা শৌচালয় এমনকি মিড ডে মিলের রান্না ঘরেও।
এদিন যে শ্রে্ণীকক্ষটিতে হাতি হামলা চালায় সেটি আবার নির্বাচনের সময় ভোট গ্রহণের কক্ষ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। স্কুলের সহ শিক্ষক রাজা হুসেন আনসারি বলেন, তৃতীয় শ্রেণীর ওই ঘরটিতে একসঙ্গে তিনটি ক্লাসের পড়ুয়াদের বসানো হয়। কারন এতদিন ওই ঘরটিই শুধু অক্ষত ছিল। বাদ বাকী সমস্ত পরিকাঠামোই ভাঙাচোরা।
একসময়ে ছবির মতো সাজানো ছিল শিশু মিত্র পুরষ্কার প্রাপক স্কুলটি। প্রতিবার হাতির হামলার পর নিজেদের উদ্যোগে কোনভাবে মেরামতি শেষ না হতেই সেখানে আরেকটি হামলার বিপর্যয় নেমে আসছে। সবকিছু দেখে মর্মাহত এলাকাবাসীও। পড়ুয়ারা ঘটনার খবর জানতে পেরেই কাকভোরেই তাঁদের প্রিয় স্কুলে ছুটে যায়। আসেন অভিভাবকরাও। চারপাশের দশা দেখে তখন প্রত্যেকেরই মুখ ভার। স্কুল রক্ষায় দ্রুত প্রশাসনিক পদক্ষেপ এর দাবির কথা উঠে এসেছে ক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের পক্ষ থেকে।