কালিয়াগঞ্জ: মুখ্যমন্ত্রী আসুক কিংবা প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু পোড়া কপাল ওঁদের। ওঁরা বলতে টেরাকোটা শিল্পীদের। কালিয়াগঞ্জের যে শিল্প বিদেশের মাটিতে ভারতের নাম সমৃদ্ধ করছে, সেই শিল্পীদের নিয়ে কোনও আশার কথা শোনা গেল না মোদির সভা থেকে। ফলে এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা নিয়ে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে মোস্তাফানগর পঞ্চায়েতের হাটপাড়ার টেরাকোটা শিল্পীদের।
টেরাকোটা শিল্পী সমরেশ রায়ের কথায়, ‘বাকিদের কাছে আমরা টেরাকোটা শিল্পী বলে পরিচিত হলেও রাজনৈতিক নেতাদের কাছে শুধুই ভোটার। পরবর্তী প্রজন্ম এই শিল্প থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছে৷ কেন্দ্রীয় সরকারের মেলায় গেলে সরকারিভাবে প্রতিদিন ৫০০ টাকা করে খাওয়া দাওয়া বাবদ পাই, সেখানে রাজ্য সরকার আয়োজিত মেলায় গেলে ৭৫ টাকার বেশি দেয় না। কীভাবে আমরা এই শিল্প বাঁচিয়ে রাখব। ’
দেশ ছাড়িয়ে ইংল্যান্ড, আমেরিকা, জাপান, রাশিয়াতে ব্যবসায় হাত পাকাচ্ছেন টেরাকোটা শিল্পীরা। কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদনে দিল্লি, মুম্বই, লখনউ, শিলচরে মেলায় ডাক পান কালিয়াগঞ্জের টেরাকোটা শিল্পীরা। হাটপাড়ার প্রায় একশো পরিবার এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত। কিন্তু একাধিক সমস্যায় ধুঁকছে এই শিল্প। শিল্পী দুলালচন্দ্র রায় জানান, ‘বেহাল রাস্তার কারণে মহাজনদের গাড়ি রাজ্য সড়কের উপর দাঁড়িয়ে থাকে। ফলে ঠেলা করে পোড়া মাটির মালপত্র রাজ্য সড়ক পর্যন্ত নিয়ে যেতে হয়৷ তাতে মালপত্র ভাঙে। ক্ষতির মুখে পড়তে হয়। টেরাকোটাকে বাঁচাতে দরকার হাবের। যেখানে বর্ষায় মাটির তৈরি জিনিসপত্রের কোনও ক্ষতি হবে না। বড় গাড়ি ঢোকার রাস্তা প্রয়োজন। আগামী প্রজন্মকে এই কাজের মাধ্যমে স্বনির্ভর করে তোলার জন্য ট্রেনিং সেন্টারও দরকার।’
আরেক টেরাকোটা শিল্পী শ্যামল রায়ের ভাষায়, ‘বাইরের কোনও বড় নেতা, প্রশাসনিক কর্তারা এলে ফোনে বায়না দেন, ব্যস ওই পর্যন্তই। ভোটের সময় ছাড়া কোনওদিন নেতাদের পদধূলিও পড়ে না এলাকায়। আমরা কীভাবে দিনযাপন করছি, কেমন আছি, কারও কিছু যায় আসে না। বাড়ির এলাকা ছোট বলে বড় অর্ডার পেলেও ফিরিয়ে দিতে হয়। আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়।’