সানি সরকার, মিরিক: তৃণমূলের ‘গড়’ যেন গেরুয়া। না, মিরিকে(Mirik) ঘাসফুলের চিহ্নমাত্র যেমন নেই, তেমন পদ্মফুলেরও দেখা মেলেনি। কার্সিয়াং বিধানসভা কেন্দ্রের এই জনপদ গেরুয়া হয়ে উঠেছে রাম-হনুমানের উপস্থিতিতে। রাস্তার দুই ধারের দোকান হোক অথবা গাছের মগডাল, বাড়ির ঝুলবারান্দা, সর্বত্রই রামনবমী এবং হনুমান জয়ন্তীর পতাকা ঝুলছে।
মিরিকে প্রবেশের মুখে সৌরিণীতে শুধু দেখা মিলেছে বিজেপি প্রার্থী রাজু বিস্ট এবং তৃণমূলের গোপাল লামার। নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে রাজু, অনীত থাপার সঙ্গে গোপাল, দুজনেই কাগজের ছবিতে। বাকি প্রার্থীদের তো এখানেও অস্তিত্ব পাওয়া গেল না, নির্বাচনের ৪৮ ঘণ্টা আগেও।
তাহলে কি মিরিকের মন বুঝে দূরত্ব বাড়িয়েছেন এবারের দার্জিলিং কেন্দ্রের প্রার্থীরা(Candidates)? ভোটের লাইনে যে মিরিক দাঁড়াবে না, তা কিন্তু নয়। তবে পর্যটন মরশুমে ভোটে সায় নেই এই পাহাড়ের। যা ধরা পড়েছে পর্যটনশিল্পের ওপর নির্ভরশীল এখানকার ব্যবসায়ীদের বক্তব্যে। মিরিক লেকের পাশে স্ত্রী মায়াকে নিয়ে চায়ের দোকান চালান পাশাং তামাং। তিনি বললেন, ‘এই সময় ভোটের কোনও অর্থ হয়। এখনই তো পর্যটকরা আসেন। তবে ভোট তো দিতেই হবে।’
গরম পড়তেই দার্জিলিং, কালিম্পংয়ের মতো মিরিকেও পর্যটকদের ঢল নামে। প্রতিটি হোটেল, হোমস্টের ব্যবসা হয় চুটিয়ে। তবে লোকসভা নির্বাচনের জন্য এবার পর্যটক অনেক কম এসেছেন বলে জানালেন অনেকেই। মিরিক বাজারের একটি হোটেলের ম্যানেজার গৌর দাস বললেন, ‘পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে এই হোটেলে চাকরি করছি। এই সময় এত কম পর্যটক আগে দেখিনি। ভোটের জন্যই পর্যটকের সংখ্যা কম।’ কৃষ্ণনগরে এখনও প্রচুর বাঙালি বসবাস করেন। তাঁদের মধ্যেও ভোটের উত্তাপ নেই। থাকবেই বা কী করে? প্রার্থীদের সমর্থনে নেই ব্যানার, হোর্ডিং, দেখা মেলেনি কোনও রাজনৈতিক দলের পতাকা।
মিরিক তো এমন ছিল না। ২০১৭ সালে পুর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তৃণমূল, গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার পতাকায় ছয়লাপ হয়ে উঠেছিল পর্যটনকেন্দ্রটি। সেবার নয়টি আসনের মধ্যে ছয়টিতে জয়ী হয়ে পুরবোর্ড দখল করে তৃণমূল। পুরসভার বাইরের এলাকাগুলিতেও রয়েছে তৃণমূলের ‘দাপট’। অবশ্য ’১৯-এর ভোটে বিজেপি লিড নিয়েছিল। এরপরেও কেন ব্যতিক্রমী হয়ে উঠল? কৃষ্ণনগরের প্রেমা তামাংয়ের বক্তব্য, ‘রাজনৈতিক দলগুলি যে একদম প্রচার করছে না, তা নয়। ঘরোয়া মিটিংয়ে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে এবার। আসলে পর্যটন মরশুম থাকায় কেউ বিরক্ত করতে চাইছে না।’ কয়েকদিন আগে রাজু বিস্ট জনসভা করে গিয়েছেন বলে জানালেন মিরিকে লেকের পাশে থাকা একটি রেস্তোরাঁর কর্মী যূথিকা লামা।
মিরিক এবার কোন পথে হাঁটবে? সেভাবে মনের কথা খোলসা করেননি তেমন কেউই। বরং চেষ্টা করেছেন মনের কথা মনের মধ্যে রেখে দিতে। তবে কেউ কেউ বলেছেন, পুরসভার প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারম্যান লালবাহাদুর রাই কিছুটা হলেও ভালো কাজ করেছেন। রাজ্য সরকার পর্যটন পরিকাঠামো উন্নয়নে নজর দেওয়ায় পর্যটকের সংখ্যাও বাড়ছে। অনেকে আবার লোকসভার ভোট হওয়ায় দেশের ক্ষমতা কার হাতে থাকবে, তা দেখতে চাইছেন। এ কারণেই তাঁরা এখানে লিড নেওয়ার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী, বললেন হিল বিজেপির সহ সভাপতি এলএম লামা। পার্বত্য তৃণমূলের চেয়ারম্যান লালবাহাদুর রাই আবার বলছেন, ‘মানুষ উন্নয়ন দেখে ভোট দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন।’