সানি সরকার, শিলিগুড়ি: উত্তর ভারতনগরের গুরুসদয় দত্ত রোডে তৃণমূল এবং বিজেপির পতাকার সঙ্গে সমানতালে লড়াই করছে লালঝান্ডা। এলাকায় কয়েকটি রাস্তার ধারে মুনীশ তামাংকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বাম-পোস্টার নজরে পড়লেও কংগ্রেসের পতাকা নেই। কিন্তু কংগ্রেস প্রার্থীর পক্ষে কি বামেদের ভোট পড়বে? এলাকায় কট্টর সিপিএম নেতা হিসেবে পরিচিতদের কাছ থেকেও সদুত্তর পাওয়া গেল না। একজন শুধু বললেন, ‘আমাদের প্রার্থী থাকলে ভালো হত। দেখা যাক কী হয়।’
শুধু শহর কেন, মাটিগাড়া সহ মহকুমার বিভিন্ন জায়গায় কান পাতলে অবশ্য ’১৯-এর পুনরাবৃত্তির কথা শোনা যাচ্ছে। বাম-কংগ্রেস নেতৃত্ব একসঙ্গে হাঁটলেও এখানকার সিপিএমের কর্মীদের বড় একটা অংশ নিজেদের ‘গুটিয়ে’ রেখেছেন। ফলে বামের ভোট এবারও রামের ঘরে যাওয়ার সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছে। এরিয়া কমিটির এক সদস্য তো বলেই ফেললেন, ‘দলীয় নির্দেশে কংগ্রেসের হয়ে প্রচারে বের হচ্ছি ঠিকই। কিন্তু দলের সাধারণ কর্মীদের মনোভাব ঠিক ঠেকছে না। তৃণমূলের সঙ্গে মূল লড়াইটা যেহেতু বিজেপির, ফলে তৃণমূলকে আটকাতে অনেকেই বিজেপিকে ভোট দেবেন বুঝতে পারছি। কেননা, দলের প্রার্থী না থাকাটা অনেকেই মেনে নিতে পারছেন না।’
এই মেনে নিতে না পারাটা কিন্তু ভাবাচ্ছে জোটের দুই শরিককেই। প্রকাশ্যে চিন্তার কথা নেতৃত্ব স্বীকার না করলেও বাম ভোটের একটা অংশ যে রামের ঘরে যেতে পারে, পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে সেটা বুঝতে পারছেন তাঁরাও। ’১৯-এ দলের প্রার্থী সমন পাঠক থাকার পরও সিপিএমের বড় একটা অংশ ঢেলে ভোট দিয়েছিল বিজেপিকে। তাই রাজু বিস্ট প্রায় সাড়ে সাত লক্ষ ভোট পেলেও সমনকে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল মাত্র প্রায় ৫০ হাজারে। কংগ্রেসের শংকর মালাকার পেয়েছিলেন প্রায় ৬৫ হাজার ভোট। দলীয় প্রার্থী থাকার পরেও যেখানে সিপিএম সমর্থকরা বিজেপি প্রার্থী রাজুকে ভোট দিয়েছিলেন, সেখানে দলীয় প্রার্থী না থাকার পর তাঁরা কংগ্রেস প্রার্থীর জন্য কতটা আন্তরিক হবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। যা কিছুটা স্পষ্ট হয় সিপিএমের মাটিগাড়া এরিয়া কমিটির সম্পাদক অসিত নন্দীর বক্তব্যে। তিনি বলছেন, ‘একটা শ্রেণির মানুষ না বুঝে বিজেপিকে ভোট দিয়েছিলেন। এবারও হয়তো তাঁরা না বুঝে কিছু করবেন। তবে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি রামের ঘর থেকে আমাদের ভোট ফিরিয়ে আনতে। আশা করছি সফল হব।’
অসিত যাই বলুন, গত বছরের পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফল কিন্তু অন্য কথা বলছে। সাড়ে চার দশকের বেশি সময় ধরে বামেদের শক্তঘাঁটি হিসেবে পরিচিত মাটিগাড়ার বালাসন কলোনি। সবসময় প্রধান এবং উপপ্রধান এখান থেকেই নির্বাচিত হতেন। কিন্তু গত বছরের পঞ্চায়েত নির্বাচনে এখানকার ছয়টা আসনেই জয়লাভ করে বিজেপি। যেখানে সংগঠন নেই, সেখানে এমন জয় অবাক করেছিল বিজেপির স্থানীয় নেতৃত্বকেও।
এই সূত্র ধরেই কংগ্রেসের জেলা কমিটির সদস্য বাবলু সরকার বলছেন, ‘পঞ্চায়েত নির্বাচনে কুস্তির পর লোকসভা নির্বাচনে দোস্তি, অনেক মানুষই মেনে নিতে পারেন না। তাঁরা তৃণমূলকে ঠেকাতে বিজেপির দিকে ঝুঁকছেন। তবুও আমরা চেষ্টা করে চলেছি।’