ভাস্কর বাগচী, শিলিগুড়ি: বিরোধীরা যতই ‘সাইনবোর্ড দল’ তকমা এঁটে দিক না কেন, পাহাড়ে এখনও কংগ্রেসের মেরুদণ্ড বলতে যাঁকে বোঝায় তিনি দাওয়া নরবুলা। দীর্ঘ প্রায় দেড় দশক পাহাড়ে সক্রিয় রাজনীতির যুক্ত নন ঠিকই, কিন্তু আড়ালে তিনিই যেন সব। দার্জিলিং কেন্দ্রে ২০০৪ সালে কংগ্রেসের টিকিটে জয়ী শেষ সাংসদও তিনি।
বুদ্ধি, পরামর্শই নিতেই হোক কিংবা ভোট প্রচারের টিপস- সমতল থেকে কংগ্রেসিরা পাহাড়ে উঠলেই আগে গিয়ে দেখা করেন তাঁদের প্রিয় নরবুদার সঙ্গে। নাই বা থাকুক আগের মতো মানুষের সমর্থন, তবু পাহাড়ে কংগ্রেসের পার্টি অফিসটা রয়েছে আগের মতোই। বছর পাঁচেক আগেও এই পার্টি অফিসে মাঝেমধ্যে এসে বসলেও এখন আর বয়সের ভারে বাড়ি থেকে তেমন বের হতে পারেন না নব্বই ছুঁইছুঁই নরবুলা।
রবিবার তাঁকেই আবার রাজনীতির ময়দানে প্রকাশ্যে দেখতে পেল পাহাড়। সৌজন্যে কংগ্রেসের বৈঠক। মাইক হাতে বক্তব্যও রাখলেন দার্জিলিংয়ের প্রাক্তন সাংসদ। নরবুলার কথায়, ‘বয়সের ভারে এখন আর তেমন বের হতে পারি না। লোকের সঙ্গে দেখাও কম হয়। অনেকদিন বাদে আবার বৈঠকে এলাম।’
পাহাড়ে এবার কংগ্রেসের হয়ে লড়ছেন ডাঃ মুনীশ তামাং। নরবুলা তাঁর সমর্থনে বলছেন, ‘পাহাড়ের মানুষ দিল্লিতে গেলে মুনীশ তাঁদের অনেক সাহায্য করেন। উনি শিক্ষিত মানুষ। উনি সাংসদ হলে পাহাড়ের মানুষের অনেক উন্নতি হবে। তাছাড়া পাহাড়ের উন্নয়ন একমাত্র কংগ্রেসই করতে পারে।’
আট ও নয়ের দশকে যখন পাহাড়ে জিএনএলএফের তীব্র দাপট তখনও কংগ্রেসের পতাকা নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে ছিলেন নরবুলা। পরবর্তীতে ২০০৭ সাল থেকে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার আন্দোলনের সময়ও একই ছবি দেখা গিয়েছে। অনেক হুমকি, অপমান সহ্য করেও কারও কাছে মাথানত করেননি বলেই এখনও পাহাড়ে শুধু কংগ্রেস নয়, অন্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের কাছেও নরবুদা ‘প্রিয়’ মানুষ।
এদিন সকালে দার্জিলিংয়ের সুমেরু মঞ্চে কংগ্রেস প্রার্থীর সমর্থনে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রার্থী মুনীশ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক সমন পাঠক, হামরো পার্টির নেতা অজয় এডওয়ার্ড। মুনীশ বলছেন, ‘দাওয়া নরবুলা অনেক অভিজ্ঞ নেতা। ওঁর থেকে অনেক শেখার রয়েছে। আমি ওঁকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। উনি এসেছিলেন। এটা বড় প্রাপ্তি।’
ইদানীং খুব ভালো করে চোখেও দেখেন না। কিন্তু কংগ্রেসের কথা শুনলে এখনও চুপ করে থাকতে পারেন না নরবুলা। তাঁর কথায়, ‘কংগ্রেস তো আমার রক্তে, কী করে চুপ থাকি বলুন!’
২০০৪ সালে দার্জিলিং থেকে সাংসদ হয়েছিলেন নরবুলা। কিন্তু ২০০৯ সালের ভোটে তিনি পরাজিত হন। এরপর থেকে আর কংগ্রেস এই আসনে জয়ের মুখ দেখতে পারেনি। তবে তাঁর আশা, মুনীশের হাত ধরে ফের কংগ্রেস পাহাড়ে তাদের আধিপত্য বিস্তার করবে।