নৃসিংহপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায়, বারবিশা : যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাগিং কাণ্ড নিয়ে উত্তাল গোটা রাজ্য। এই পরিস্থিতিতে এবার র্যাগিংয়ের অভিযোগ উঠল উত্তরবঙ্গের একটি কেন্দ্রীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। আলিপুরদুয়ার জেলার বারবিশার জওহর নবোদয় বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণির এক পড়ুয়াকে মারধর সহ তার উপর অকথ্য অত্যাচার চালাবার অভিযোগ উঠেছে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির কয়েকজন পড়ুয়ার বিরুদ্ধে। অত্যাচারিত পড়ুয়া ব্যাপক আতঙ্কিত। সে তো স্কুলের হস্টেলে ফিরতেই চাইছে না।
এদিকে, স্কুল কর্তৃপক্ষ অবশ্য র্যাগিংয়ের অভিযোগ পেতে না পেতেই ব্যবস্থা নিয়েছে। অভিযুক্ত পড়ুয়াদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ করা হয়েছে বলে প্রতিষ্ঠানের তরফ থেকে জানানো হয়েছে। তবে ওই ঘটনা নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে অভিভাবক মহলে।
ওই নবম শ্রেণির ছাত্রের বাড়ির লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, ঘটনাটি সপ্তাহখানেক আগেকার। তবে স্কুল কর্তৃপক্ষের নজরে বিষয়টি নিয়ে আসা হয়েছে সম্প্রতি। একটি মানিব্যাগ হারিয়ে যাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সমস্যার সূত্রপাত। গত ৮ অগাস্ট গভীর রাতে হস্টেলের আবাসিক ওই পডুয়ার উপর চড়াও হয় উঁচু ক্লাসের দাদারা। দরজা-জানলা বন্ধ করে বেধড়ক লাঠিপেটা করা হয় নবম শ্রেণির ওই পড়ুয়াকে। মারধরের জেরে ছাত্রটি অসুস্থ হয়ে পড়ে। সে বাড়িতে জানায়। ঘটনার পরদিনই ছেলেটির অভিভাবকরা আলিপুরদুয়ার থেকে স্কুলে চলে আসেন এবং ছেলেকে চিকিত্সার জন্য বাড়ি নিয়ে যান। সুবিচার চেয়ে ছাত্রটির বাবা জওহর নবোদয় কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের প্রিন্সিপালের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
এই ঘটনাকে ঘিরে রবিবার অভিভাবকদের নিয়ে বৈঠক করে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সেখানে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত অভিভাবকরা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় একটি সামাজিক সংগঠনের সদস্যরা। বৈঠকে উপস্থিত ওই প্রহৃত পড়ুয়ার বাড়ির লোকজন র্যাগিংয়ের ঘটনা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন। র্যাগিংয়ের মতো সামাজিক ব্যাধি ঠেকাতে কড়া পদক্ষেপ করার দাবি তোলেন।
স্কুলের প্রিন্সিপাল ইনচার্জ অরুণ সূত্রধর স্বীকার করে নিয়েছেন য়ে, এমন ঘটনা কখনোই কাম্য নয়। তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যেই প্রতিষ্ঠানের অ্যান্টি র্যাগিং সেলের সদস্যরা ঘটনাটি নিয়ে প্রাথমিকভাবে তদন্ত করেছেন। ওই ঘটনায় জড়িত রয়েছে বলে কয়েকজন পড়ুয়ার নাম পাওয়া গিয়েছে। তারা নিজেদের দোষ স্বীকার করে ক্ষমাপ্রার্থনা করেছে। আপাতত পদক্ষেপ হিসেবে ঘটনায় জড়িত ৩ জন পড়ুয়াকে ১৫ দিনের জন্য বরখাস্ত করে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
বৈঠকে উপস্থিত ওই সংগঠনের সদস্য অমিত চক্রবর্তী ও ছেলেটির বাড়ির লোকজন জানিয়েছেন, লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়েছে। ঘটনায় ছেলেটি অসুুস্থ হয়ে পড়ে। তাকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। জামা খোলার পর দেখা যায়, ছেলেটির শরীরের বিভিন্ন জায়গায় রক্ত জমাট বেঁধে আছে। মারের চোটে শরীরের অংশবিশেষ ফুলে আছে। ঘটনার জেরে ছেলেটি এতটাই ভয় পেয়েছে য়ে, সে আর ওই স্কুলে গিয়ে লেখাপড়া করতে চাইছে না।
উদ্বিগ্ন অভিভাবকরাও। বিশেষ করে যাবদপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনার পরপরই এই স্কুলে এমন ঘটনা সামনে আসায় সেই দুশ্চিন্তা আরও বেড়েছে। কয়েকজন অভিভাবক বলেন, আমরা প্রচণ্ড দুশ্চিন্তায় আছি। র্যাগিং নিয়ে কত কী কানে আসে। এদিনের বৈঠকে স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে ছাত্রাবাসে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানোর প্রস্তাবও দিয়েছেন অভিভাবকরা।
তবে অভিভাবকদের উদ্বিগ্ন হতে নিষেধ করছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। তাদের আশ্বাস, প্রয়োজনে পরবর্তীতে ফের অভিভাবকদের নিয়ে বৈঠক করে সমস্যা সমাধানের পথ খোঁজা হবে। প্রিন্সিপাল ইনচার্জ বলেন, র্যাগিং বন্ধে সমস্ত শ্রেণির পড়ুয়াদের সচেতন এবং সতর্ক করা হয়েছে। আমরা লক্ষ্যে স্থির থেকে বাচ্চাদের সবসময় শেখাই ‘কাম টু লার্ন, গো টু সার্ভ’।
তবে স্কুল কর্তৃপক্ষ যাই বলুক না কেন, বারবিশা জওহর নবোদয় বিদ্যালয়ে এমন র্যাগিংয়ের ঘটনা কিন্তু এই প্রথম নয়। গতবছরও এমন অভিযোগ উঠেছিল। সেবার বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অভিভাবকদের নিয়ে বৈঠক করে তাঁদের নানাভাবে বুঝিয়েছিল। ফলে সেবারে র্যাগিংয়ের বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়। খুব একটা হইচই হয়নি। ওই সামাজিক সংগঠনের সদস্য অমিতের কথায়, ‘গতবার কোনও কড়া পদক্ষেপ না করার ফলে স্কুলের উঁচু ক্লাসের পড়ুয়ারা প্রশ্রয় পেয়ে গিয়েছে। এব্যাপারে এখনই কড়া পদক্ষেপ করা না হলে যাদবপুরের মতো বড় ঘটনা এখানেও ঘটে য়েতে পারে।’
এদিকে, আক্রান্ত ওই পড়ুয়ার ভয় কাটানোটাই এখন জরুরি কাজ। বলছে স্কুল কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে অভিভাবকরাও। আপাতত বাড়িতে রেখে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে ছেলেটির কাউন্সেলিং করা হচ্ছে।