উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: হাসপাতালের মর্গের সামনে ঠায় বসে এক অসহায় মা। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছেন মর্গের দিকে। হাতে একরত্তি ছেলেটার স্কুল ব্যাগ। সোনাই, ও সোনাই বলে অনবরত ডেকেই চলেছে তার মা। কিন্তু সোনাই যে না ফেরার দেশে পাড়ি দিয়েছে। মা তো, তাই হয়তো সবটা বুঝেও যেন বুঝছেন না। শুধু সোনাই এর মা নয়, আজ সকাল থেকেই রাজ্যের প্রতিটি মানুষই চেয়েছেন কোন মিরাকলে ফিরে আসুক সোনাই।
বেহালার বড়িশা হাইস্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র ছিল সোনাই ওরফে সৌরনীল সরকার। আর পাঁচটা দিনের মতই শুক্রবার সকালে বাবার সাথে স্কুলের পথে পা বাড়িয়েছিল সে। আজ থেকে শুরু পরীক্ষা। মায়ের আশীর্বাদ নিয়ে টা টা করে রওনা দেয় স্কুলে। ‘এখনই চলে আসুন’ এই বলে হঠাৎ স্কুল থেকে ফোন আসে সৌরনীলের মা দীপিকা সরকারের কাছে। প্রথমে তিনি ভেবেছিলেন হয়তো ছেলে পেন্সিল কিংবা ইরেজার নিতে ভুলে গেছে ছেলে। সবটা গুছিয়ে রেডি হয়ে বেরোতে যাবেন ঠিক সেই সময় ফোন করে তার স্বামী বলেন, ‘আমাদের অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে। সব শেষ হয়ে গেছে।’
এদিন সকাল সাড়ে ৬ টা নাগাদ মাটিবোঝাই একটি লরি দ্রুত গতিতে এসে ধাক্কা মারে সৌরনীল এবং তার বাবাকে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় সৌরনীলের। গুরুতরভাবে জখম হয় তার বাবা। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে নিকটবর্তী হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। বর্তমানে ট্রমা কেয়ার সেন্টারে চিকিৎসাধীন তিনি। দুর্ঘটনার পর এলাকা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। মৃতদেহ আটকে রেখে উত্তেজিত জনতা রাস্তায় বিক্ষোভ দেখায়। ভাঙচুর করা হয় পুলিশের ভ্যান ও বাইক। বিক্ষোভের জেরে দীর্ঘক্ষণ অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে গুরুত্বপূর্ণ ডায়মন্ড হারবার রোড। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটাতে হয়। যথেচ্ছ লাঠিচার্জও করতে হয় পুলিশকে। এই ঘটনা নিয়ে অসন্তোষ করেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন, কলকাতা পুলিশের ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ কর্মসূচি চলাকালীন কী করে এই ধরনের ঘটনা ঘটে? মুখ্যমন্ত্রীর অসন্তোষ প্রকাশ, প্রশাসনের নড়েচড়ে বসায় হয়তো আগামীতে বড়িশা বিদ্যালয়ের সামনে পথ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে। কিন্তু আর ফিরবে না ছোট্ট ছেলেটা। আগামী ২৫ অগাস্ট বাড়িতে হবে না জন্মদিনের আয়োজন, বাড়ি সাজাতে হবে না বেলুন দিয়ে, আনতে হবে না কেক, আসবেনা সোনাইয়ের বন্ধুরাও। নিজের জন্মমাসে সব আয়োজনকে অর্থহীন করে দিয়ে সোনাই চলে গিয়েছে তারাদের দেশে। বাড়িতে রেখে গেল একাকি মা বাবাকে।