আলিপুরদুয়ার: গত ৪ অগাস্ট কলকাতার বেহালার ঘটনা স্মৃতিতে তাজা। বেহালা চৌরাস্তার মোড়ে স্কুলে যাওয়ার পথে এক শিশু ও তার বাবাকে ধাক্কা মারে একটি ট্রাক। সঙ্গে সঙ্গে ওই পড়ুয়ার মৃত্যু হয়। ওই মৃত্যুর পরেই অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে গোটা চত্বর। পুলিশের গাড়ি-বাইক জ্বালিয়ে দেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এই ঘটনা আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল গোটা রাজ্যে। স্কুলে যাওয়ার পথে ছাত্র ছাত্রীরা কতটা নিরপাদ সেই নিয়ে চর্চাও হয়েছে বিভিন্ন জায়গায়।
আলিপুরদুয়ার জেলাতেও ওই একই চর্চা দেখা গিয়েছে। কেননা আলিপুরদুয়ারেও অনেক স্কুলই জাতীয় ও রাজ্য সড়কের খুব কাছে। আর অনেক স্কুল একটু ভিতরে হলেও সেগুলো যেতে হয় জাতীয় ও রাজ্য সড়ক ধরেই। স্বাভাবিকভাবেই আলিপুরদুয়ারে অভিভাবকরাও বাচ্চাদের সুরক্ষা নিয়ে চিন্তায়।
এই বিষয়টি নিয়ে খোঁজ করতে গিয়ে দেখা গেল অনেক স্কুল মূল রাস্তার পাশে হলেও সেটা অনেকটা নিরাপদ। তবে অনেক স্কুলে রয়েছে বিপদের আশঙ্কা। এই যেমন জেলা শহরের কথাই ধরা যাক। শহরের মূল রাস্তা অর্থাৎ বিএফ রোডের পাশে বেশ কয়েকটি স্কুল রয়েছে। সরকারি বেসরকারি ছোটদের স্কুল যেমন রয়েছে তেমনই রয়েছে হাই স্কুলও। এদিন কোনও স্কুলের সামনে পড়ুয়াদের নিরাপদে থাকার ছবি নজরে আসল কোনও স্কুলে আবার সেই চিত্র গায়েব। শহরের প্রতিষ্ঠিত ম্যাক উইলিয়াল হাই স্কুলের সমানেই দেখা গেল বিপদের আশঙ্কা। স্কুলের ছুটির সময় রাস্তায় একজন পুলিশ কর্মী দেখা গেল আর পড়ুয়া কয়েকশ। বড় পড়ুয়াদের সঙ্গে ছোটদেরও দেখা গেল ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হতে। অনেকের সঙ্গে আবার অবিভাবকও দেখা গেল। তারাও ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছে।
এই স্কুলের সমানে এক থেকে দু’জন পুলিশকর্মী দেখা যায়। আবার স্কুলের একজন নিরাপত্তা রক্ষী রয়েছেন যিনি বেশিরভাগ সময় মূল গেটেই থাকেন। স্কুলের পড়ুয়াদের রাস্তায় যে নিরাপত্তা যথেষ্ট নেই সেটা মানছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুধাংশু বিশ্বাসও। প্রশাসনের আরও নিরাপত্তা দেওয়া উচিত বলে মনে করেন উনি। অন্যদিকে ওই স্কুল থেকে আধ কিমি দূরে মহাকাল ধামের কাছে একটি বেসরকারি স্কুলের আবার নিরাপদে রাস্তা পারপার করতে দেখা গেল পুলিশ কর্মীদের। ওই মোড়ে ট্রাফিক পয়েন্টে পুলিশকর্মী এবং সিভিক ভলান্টিয়াররা উপস্থিত থাকায় স্কুলের পড়ুয়াদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসতে দেখা যায় পুলিশকর্মীদের।
তবে সব স্কুল কিন্তু এই সুবিধা পান না। শহরের এগারো হাত কালীবাড়িতে নিউ টাউন গার্লস হাই স্কুল বা নিউ টাইনে বালিকা শিক্ষা মন্দিরের মত স্কুল গুলো রাস্তা থেকে কিছুটা দূরে হলেও স্কুলে আসা পড়ুয়াদের মূল রাস্তায় নেমে তারপর গলির পথ ধরতে হয়। সেই জায়গা গুলোয় কিন্তু সব সময় পুলিশ কর্মীদের দেখা যায়না। একই রকম কথা বলতে হয় শহর সংলগ্ন তপসিখাতা এলাকায় স্কুলের দুটো বড় বেসরকারি ক্ষেত্রেও। এই স্কুল গুলো জাতীয় সড়ক থেকে কয়েকশ মিটার দূরে হলেও পড়ুয়াদের স্কুলের গাড়ি ছাড়া অন্য বাহনে আসলে মূল রাস্তার পাশেই নামতে হয়। এক্ষেত্রে পড়ুয়াদের নিরাপত্তা নিয়ে যথেষ্ট চিন্তায় অভিভাবক, অভিভাবিকারা। বেহালার মত ঘটনা যেন আলিপুরদুয়ারে না ঘটে সেটাই চান তারা এবং এক্ষেত্রে সব স্কুলের সামনে স্কুল শুরু ও ছুটির সময় পুলিশের ব্যবস্থার দাবি উঠছে বিভিন্ন মহল থেকে। যদিও পুলিশ বলছে এবিষয়ে তারা আগে থেকেই সতর্ক।
আলিপুরদুয়ার জেলা পুলিশের ডিএসপি(ট্রাফিক) তেনজিং ভুটিয়া বলেন, ‘যে স্কুলগুলো রাস্তার পাশে রয়েছে সেগুলোয় বিশেষ নজর দেওয়া হয়। সব থানাকে বলা হয়েছে নিজেদের এলাকায় স্কুল গুলোয় নজর দিতে। স্কুলের সময় পড়ুয়াদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতাও করা হয় স্কুলে যাওয়া বা রাস্তা পার হতে।’