Saturday, May 4, 2024
Homeরাজ্যউত্তরবঙ্গতালপাতার হাতপাখার ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা

তালপাতার হাতপাখার ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা

বালুরঘাট: তালপাতার হাতপাখার সঙ্গে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য নিবিড়ভাবে জড়িয়ে ছিল একটা সময়। তারপর বিদ্যুৎ সংযোগের প্রসার ঘটল। ক্রমশ কমতে থাকল হাতপাখার ব্যবহার। যদিও তখনও বাড়িতে বিদ্যুৎ হঠাৎ চলে গেলে সকলের হাতে উঠে আসত তালপাতার হাতপাখা। এখন সেই অবসরও কমে এসেছে। তবু বিভিন্ন মেলায় এই হাতপাখার পসরা সাজিয়ে বসে থাকেন গুটিকয়েক মানুষ। তেমনি একজন চকভৃগুর প্রবীণ নাগরিক প্রভাস মহন্ত। আধুনিক যুগের নজরের আড়ালে তিনি একান্তে তৈরি করে চলছেন একের পর এক তালপাতার হাতপাখা।

আধুনিকতার ছোঁয়ায় তালপাতার পাখার ব্যবহার আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নেই বললেই চলে। বর্তমানে হাতে তৈরি এই পাখার প্রচলন তেমন না থাকার ফলে নেই এই হাতপাখা তৈরির কারিগরেরাও। রাজ রাজাদের আমলে বিপুল প্রসার ঘটে এই তালপাতার হাতপাখার। তারপরে ব্রিটিশ রাজ থেকে শুরু করে জমিদারি ব্যবস্থাতে বড় বড় তালপাতার পাখার ব্যবহার প্রচুর পরিমাণে ছিল। কালের আবর্তে এই প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী হাতপাখা আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে। কারিগরি শিল্পের দৌরাত্ম্যে প্লাষ্টিকের হাতপাখার জনপ্রিয়তা বিস্তার লাভ করে। শহুরে মানসিকতার দাপটে হারিয়ে যেতে বসেছে প্রাচীন এই শিল্প। তবে বালুরঘাট ব্লকের চকভৃগু গ্রাম পঞ্চায়েতের কুয়ারণ এলাকায় তালপাতার হাতপাখা তৈরি করছেন প্রবীণ কারিগর প্রভাস মহন্ত। বহু পুরনো এই পেশাটাকে ধরে রাখার জন্য এখনও হাতপাখা তৈরির কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। বিগত ৪০ বছর ধরে তিনি এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত। কয়েক দশক আগের মতোই এখনও তাঁকে হাতপাখা তৈরির কাজে সাহায্য করে চলেন তাঁর স্ত্রী।

বালুরঘাটের শিক্ষক তথা সাহিত্যিক গগন ঘোষ বলেন, ‘একসময় তালপাতার হাতপাখা ছিল গ্রামীণ ঐতিহ্যের প্রতীক। বৈদ্যুতিক পাখা, এয়ারকন্ডিশন সহ নানা ধরণের অত্যাধুনিক জিনিস বাজারে ছেয়ে যাওয়ায় চাহিদা কমেছে তালপাতার হাতপাখার। ফলে বিক্রি না হওয়ায় কারিগরেরা হাতপাখা বানানো বন্ধ করে অন্য কাজে মন দিয়েছেন। গ্রাম থেকেও উঠে গিয়েছে সারি সারি সব তালগাছ। বিশ্বায়নের প্রভাবে এই শিল্পের অবক্ষয় দুঃখের।’

চকভৃগুর বাসিন্দা তরুণ মাহাতো বলেন, ‘বর্তমানে হাতপাখার ব্যবহার না থাকায় পেশাদার কারিগররা হাতপাখা বানানো বন্ধ করেছেন। জীবন বাঁচানোর তাগিদে অন্য কাজে মনসংযোগ করেছেন তাঁরা। ফলে ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে এই শিল্পীসত্তা। এই হাতপাখা তৈরির জন্য নতুন প্রজন্মের কারিগর আর নেই।’

শিল্পী প্রভাস মহন্ত জানান, ‘গাছে উঠে তালপাতা, গাছের পাতলা বাকল সহ বিভিন্ন রকম সরঞ্জাম সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত বিপদের মুখে পড়তে হয়। এমনকি বাজার দরের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে হাত পাখার সরঞ্জামের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ১০০টা হাতপাখা তৈরি করি। গ্রামের কিছু মানুষ এখনও তা কেনেন। কিন্তু সেই জায়গাও সংকীর্ণ হয়ে আসছে। সরকারি তরফে কোনও সাহায্য বা ভাতা পেলে এই শিল্পের ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখতে পারব।’

Sushmita Ghosh
Sushmita Ghoshhttps://uttarbangasambad.com/
Sushmita Ghosh is working as Sub Editor Since 2018. Presently she is attached with Uttarbanga Sambad Digital. She is involved in Copy Editing, Uploading in website and various social media platforms.
RELATED ARTICLES
- Advertisment -
- Advertisment -spot_img

LATEST POSTS

Mamata Banerjee | ‘সন্দেশখালি নিয়ে ভালো নাটক করেছে’, বিজেপিকে বিঁধলেন মমতা

0
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিডিটাল ডেস্ক: ‘সন্দেশখালি নিয়ে ভালো নাটক করেছে’, এভাবেই বিজেপিকে বিঁধলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার নদিয়ার চাকদা দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নেন তিনি। মমতা...

IILS | আইআইএলএসে দু’দিনের কর্মশালা, হাজির প্রতিবেশী দেশের বিচারপতিরা

0
শিলিগুড়ি: ডিসপ্লেসমেন্ট অফ জাস্টিস-এর (Displacement of Justice) ওপর দু’দিনের কর্মশালার আয়োজন করল ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ লিগ্যাল স্টাডিজ (IILS)। শনিবার কলেজের সেমিনার কক্ষে আন্তর্জাতিক এই...

Arvinder Singh Lovely | দিল্লি কংগ্রেস সভাপতির পদ ছেড়েছিলেন, এবার বিজেপিতে যোগ লাভলির

0
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: আম আদমি পার্টির সঙ্গে জোট (AAP-Congress alliance) মানতে না পেরে কিছুদিন আগেই দিল্লি কংগ্রেস সভাপতি পদ (Delhi Congress chief) থেকে...

0
বারবার স্কুল ক্যাম্পাসে চিতাবাঘের হানায় আতঙ্ক ডিমডিমায় বীরপাড়া, ৪ মে, আলিপুরদুয়ার জেলার বীরপাড়া থানার ডিমডিমা চা বাগানে ডিমডিমা ফাতেমা হিন্দি হাইস্কুল চত্বরে বারবার ঢুকে পড়ছে...

Sandeshkhali | ‘ওঁকে ভয় দেখিয়ে বলানো হয়েছে’, গঙ্গাধরের পাশে দাঁড়িয়ে মন্তব্য রেখার

0
সন্দেশখালি: ‘ওঁকে ভয় দেখিয়ে বলানো হয়েছে’, গঙ্গাধর কয়ালের পাশে দাঁড়িয়ে এমনই মন্তব্য করলেন বসিরহাটের বিজেপি প্রার্থী রেখা পাত্র। শনিবার সন্দেশখালি সংক্রান্ত একটি ভিডিও ভাইরাল...

Most Popular