সামসীঃ মালতীপুর বিধানসভা তথা চাঁচল-২ ব্লকের ক্ষেমপুর গ্রাম পঞ্চয়েতের চোড়লমুনির দক্ষিণ ভবানীপুর মৌজায় প্রায় পঞ্চাশ বিঘের মতো পান চাষ হচ্ছে। এখানকার পানের স্বাদ অতুলনীয়। সামসী, কুশিদা, মালদা, চাঁচল এমনকি পার্শ্ববর্তী বিহার রাজ্যে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বাপ দাদার আমল থেকেই বংশ পরম্পরায় এলাকার চাষিরা পান চাষ করে থাকেন। দিনের পর দিন খরচ বাড়ছে পান চাষে। পানের দামও তেমন নেই। তাই দাম না পেয়ে পান চাষের প্রতি আগ্রহ অনেকটাই কমছে পান চাষিদের মধ্যে। তাছাড়া আবহাওয়ার খামখেয়ালীপনায় মার খাচ্ছে পানের ফলন। অধিক গরম। তাই তীব্র উষ্ণতায় শুকিয়ে যাচ্ছে পান পাতা। তাই বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন এলাকার পান চাষিরা। মাথায় হাত পড়েছে এলাকার পান চাষিদের।
রানিগঞ্জ গ্রামের আরো এক পান চাষি পলাশ দাস জানিয়েছেন, তিনি ও এক বিঘের মতো পান চাষ করেছেন। সব মিলিয়ে বিঘে প্রতি খরচ হবে প্রায় ৫০ হাজার টাকার মতো। তিনি নিজের জমিতে এবছর বাংলা পাতার পান চাষ করেছেন। বংশপরম্পরায় নিজেও পান চাষ করে স্বনির্ভর হওয়ার চেষ্টা করে চলেছেন। কিন্তু কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রকৃতির এই আবহাওয়া। পান চাষে বৃষ্টি দরকার। বৃষ্টি না হওয়ায় সেচের অভাবে চরম ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তিনি। এদিকে প্রতিদিন শ্রমিক লাগিয়ে পরিচর্যা করতে হয় পান গাছের। দৈনিক লেবার প্রতি খরচ হয় তা প্রায় পাঁচশো টাকা। এবছর পানের দামও তেমন নেই। তাই চাষের খরচ টুকুও উঠবে কিনা তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন তিনি।
একই সমস্যায় পড়েছেন ক্ষেমপুর রানিগঞ্জের বাসিন্দা সুমিত মন্ডল, উত্তম মণ্ডল, নিত্য মন্ডল ও স্বপন মন্ডলদের মতো এলাকার অন্যান্য পান চাষিরা। তাদের মতে, পানের বরজ তৈরি করতে প্রচুর বাঁশ লাগছে। বাঁশের দামও অনেকটাই বেড়েছে। এর ওপর এবার আবহাওয়ার খাম খেয়ালীপনায় পানগাছ মরে যাচ্ছে। ফলন একেবারে কম। বাজার থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে পান চাষ করলেও এবছর পানের তেমন দাম নেই। বাজারে সামান্য দরে পান বিক্রি করতে হচ্ছে। তাই মুনাফার বদলে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। একেতো সংসারের খরচ তারপর ঋণ পরিশোধের দুই মিলিয়ে একাকার। এনিয়ে বড়োই চিন্তায় রয়েছেন তিনি।
পান চাষিরা জানিয়েছেন, আবহাওয়া ভালো থাকলে পান চাষ করে বিঘে প্রতি সব খরচ বাদ দিয়ে প্রায় ৪০/৫০ হাজার টাকা লাভ হবে। কিন্তু এবার আবহাওয়ার খামখেয়ালীপনায় লাভের বদলে মোটা অংকের আর্থিক ক্ষতির মুখে দাঁড়িয়ে। এছাড়াও পান চাষে মেলেনি কোন সরকারি সাহায্যও। তাই সরকারি উদাসীনতায় এলাকার চাষিরা দিনের পর দিন পান চাষের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছেন। পান চাষ নিয়ে জেলা উদ্যান পালন আধিকারিক সামন্ত লায়েক জানিয়েছেন, এলাকার পান চাষিরা যদি কোন সহায়তার জন্য আবেদন করেন তাহলে নিশ্চয় বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে।