বর্ধমান: আজও দুর্গাপুজোয় ১০৮টি পদ্ম দেবীর চরণে নিবেদন করার রীতি চালু আছে। কিন্তু জলাশয় ঘাটতির কারণে পদ্ম ফুলের অভাবে সেই রীতি বজায় রাখাই এখন দুস্কর হতে বসেছে। আগে রাজ্যের অন্যান্য জেলার পাশাপাশি পূর্ব বর্ধমান জেলাতেও হত পদ্মের চাষ। কিন্তু নগরায়নের জাঁতাকলে পড়ে ক্রমশ হ্রাস হচ্ছে খাল, বিল ও জলাশয়। আর জলাশয় ঘাটতি ও প্রকৃতির বিরুপতার কারণে সংকট তৈরি হয়েছে পদ্ম চাষে। এমন পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় হতাশা বাড়ছে পদ্ম চাষিদের। হাতে গোনা আর কয়েকটা দিন মাত্র বাকি। তারপরই দেবীপক্ষের শুরু। দেবীর চরণে পদ্ম তুলে দিতে পদ্ম চাষিরা এখন কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। বছরের অন্য সময়ে পদ্মের চাহিদা তেমন না থাকলেও দুর্গাপুজোয় সময় চাহিদা অনেকটাই বেড়ে যায়। এই রাজ্যের পুজো সহ ভিন রাজ্যের পুজোতেও পদ্মের জোগান দেওয়া দুস্কর হয়ে পড়ে।
পদ্ম চাষি অমিত মালিক ও সন্তু বেরা জানান, নগরায়নের দাপটে জলাশয়ের ঘাটতি যে হয়েছে তা অস্বীকার করা যায় না। তবুও মুনাফার আসায় পূর্ব বর্ধমান জেলা সহ বিভিন্ন জায়গার চাষিরা কেউ জলাশয় খুঁজে নিয়ে, আবার কেউ একটু নিচু চাষের জমিতে এখন পদ্ম চাষ করছেন। সন্তু বেরার বাড়ি হাওড়া জেলার বাগনানে। তিনি পূর্ব বর্ধমান জেলার বহু ফুল ব্যবসায়ীকে পদ্ম ফুল সরবরাহ করেন। তিনি বলেন, ‘বড় জলাশয় বা দিঘির পরিবর্তে জল ধারণে সহায়ক চাষ জমি আমরা ’লিজে’ নিয়ে থাকি। সেখানেই বিশ্বকর্মা পুজোর আগে আমরা ’বিকল্প পদ্ধতিতে’ পদ্ম চাষ শুরু করি। এই পদ্ধতিতে পদ্ম চাষের মেয়াদ থাকে চল্লিশ দিন। এইভাবে চাষ করে গড়ে প্রতিদিন ১৫০-২০০ পিস করে পদ্ম পাওয়া যায়। এখন পদ্ম ফুল চাষের খরচ আগের থেকে বেড়েছে। নিজের জমি থাকলে বিকল্প পদ্ধতিতে পদ্ম ফুলের চাষ করলে বিঘা প্রতি ১০ হাজার টাকার মত খরচ হয়। আর জমি ’লিজ’ নিয়ে পদ্ম চাষ করলে সেটা কমপক্ষে ১৫ হাজার টাকায় দাঁড়াবে। বছরের অন্য সময়ে পদ্ম ফুলের চাহিদা তেমন একটা থাকে না। মূলত বিশ্বকর্মা পুজোর পর দুর্গা পুজো থেকে শুরু করে কালি পুজো পর্যন্ত চাহিদা বেশি থাকে।
ভাতারের নতুন গ্রামের পদ্ম চাষি অমিত মালিক বলেন, এখনই পাইকারি বাজারে এক পিস পদ্মের দাম হয়ে গিয়েছে ১৫ টাকা। মহালয়ার পর থেকে দাম বেড়ে গিয়ে প্রতি পিস পদ্ম ২৫-৩০ টাকা পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে। এমনটা হলে জেলার খোলা বাজারেও পদ্মের দাম আরও খানিকটা চড়ে যাবে বলে অমিতের দাবি।