বালুরঘাট: উত্তরবঙ্গ সংবাদের খবরের জেরে নড়েচড়ে বসল বালুরঘাট পুর কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি উত্তরবঙ্গ সংবাদে প্রকাশিত হয়েছিল ‘বালুরঘাটে জলমগ্ন মহারাজা বোসের মূর্তি’ শীর্ষক প্রতিবেদন। এবার সেই মূর্তির স্থান পরিবর্তন করা হল। গত সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে লাগাতার বৃষ্টির ফলে বালুরঘাটে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়। আত্রেয়ীর জল ফুলে ফেঁপে উঠেছিল। মহারাজা বোস পার্কের ভেতরে থাকা তার মূর্তি আধডোবা অবস্থায় চলে যায়। খবর প্রকাশ হতেই নড়েচড়ে বসে পুরসভা। স্থান পরিবর্তন করা হল স্বাধীনতা সংগ্রামী মহারাজা বোসের আবক্ষ মূর্তির।
বালুরঘাটের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে রয়েছে কংগ্রেস ঘাট। সেখানেই চারিদিকে ঘিরে তৈরি হয়েছে পার্ক। ভেতরে শিশুদের নানা রকম খেলার সরঞ্জাম মজুত করা হয়েছে। সন্ধ্যায় যাতে ভ্রমণকারীরা একটু জিরিয়ে নিতে পারেন। তার জন্য আলোর ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। প্রায় ২৬ লক্ষ টাকা অর্থ বরাদ্দ করে শহরবাসীর মনোরঞ্জন ও বিশ্রামের জন্য এই পার্ক তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল পুরসভা। এই কংগ্রেস পাড়া এলাকাতেই বাড়ি ছিল সংগ্রামী মহারাজা বোসের। তাকে নিয়ে বালুরঘাটবাসীর আবেগ গভীর। কংগ্রেসের অধিবেশনে জওহরলাল নেহেরু একবার জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘মহারাজা বোস, হুইচ স্টেট?’ তিনি সদর্পে বলেছিলেন, ‘মহারাজা বোস মাইসেলফ মহারাজা বোস।’ তিনি ভারত ছাড়ো আন্দোলন আইন অমান্য আন্দোলন থেকে শুরু করে সত্যাগ্রহ সমস্ত আন্দোলনে সামনে থেকে লড়াই করেছিলেন। এবার নদীর জল বেড়ে যাওয়ায় তার মূর্তির ওই অবস্থা দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন অনেকেই। অবশেষে পুরসভা উদ্যোগী হয়ে তাকে পার্কের সামনে উঁচু জায়গায় বসানো হয়েছে।
ইতিহাস গবেষক শিক্ষক সমিত ঘোষ জানান, ‘ তাঁর আসল নাম ছিল শ্যামাপদ বসু। বাবা মা আদর করে মহারাজা বলে ডাকতেন। সেটি সকলের কাছে পরিচিত হয়। ১৯৩০ সালে সত্যাগ্রহ, ১৯৩২ সালে গান্ধীজীর ডাকে আইন অমান্য ও ৪২এ ভারত ছাড়ো আন্দোলন করে কারারুদ্ধ হন। তাকে সম্মান জানাতে পুরসভার এই উদ্যোগ নিশ্চয়ই ভালো। কিন্তু আগেই সবদিক বিচার করে তার মূর্তি স্থাপনের কথা ভাবা উচিত ছিল। তাহলে তার মূর্তি এভাবে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন হতো না।’
১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রবীর দত্তের আক্ষেপ, ‘ কংগ্রেস ঘাট অনেক বয়স্ক মানুষ মহারাজা বোস ঘাট নামেও ডাকে এই নামের সঙ্গে ছোটবেলা থেকেই আমরা পরিচিত। পুরসভার এই উদ্যোগকে সকলে সাধুবাদ জানিয়েছে কিন্তু জায়গা নির্বাচন ঠিক হয়নি। কারণ ২০১৭ সালে বন্যায় ওই এলাকা ডুবে গিয়েছিল। আবার সেই পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। এই ভাবনা মাথায় রেখে পার্ক তৈরিতে এগানো উচিত ছিল।’
বালুরঘাট পুরসভার প্রধান অশোক মিত্র বলেন, ‘সবকিছু বিচার বিবেচনা করেই পার্ক করা হয়েছে। ছয় বছর আগের বন্যায় সেই জায়গায় জল ওঠেনি। তাই সেখানে মূর্তি বসানো হয়েছিল। কিন্তু এবার দেখা গেল সেখানে জল উঠেছিল। তবু মূর্তি ডুবে যায়নি। কিন্তু আমরা কোন ঝুঁকি না নিয়েই তার মূর্তিকে সম্মানের সঙ্গে পার্কের ভেতরে উঁচু জায়গায় বসানো হয়েছে।’