ঘোকসাডাঙ্গা: ঠিক যেন ‘দৃশ্যম’ সিনেমার সিন। নাবালিকাকে উত্যক্ত করায় পরিবারের সাহায্যে খুনের ছক কষে যুবককে মারল নাবালিকা ও তার পরিবার। নিখোঁজের ৮ দিন পর অবশেষে বুড়ি তোর্ষা নদীর চর থেকে উদ্ধার হল বিবাহিত এক যুবকের মৃতদেহ। মৃত যুবকের নাম ফইজুল হক(২৮)। খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার দায়ে এক নাবালিকা ও তাঁর মা বাবা সহ মোট সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঘোকসাডাঙ্গা থানার পুলিশ। এব্যাপারে কোচবিহারের পুলিশ সুপার দ্যুতিমান ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। ধৃতদের আদালতে পাঠানো হয়েছে। ধৃতদের রিমান্ডে নিয়ে গোটা ঘটনার কিনারা করতে চাইছে পুলিশ। শনিবার সকালে বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে বুড়ি তোর্ষা নদীর চর থেকে মাটি খুঁড়ে দেহ উদ্ধার করে।
জানা গিয়েছে, মাথাভাঙ্গা ২ ব্লকের লতাপাতা গ্রাম পঞ্চায়েতের কুশিয়ার বাড়ি এলাকার হুজুর আলির ছেলে ফইজুল হক(২৮)। গত ২০ অক্টোবর সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ বাইক ও মোবাইল নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়। তারপর থেকে তাঁর আর কোনও হদিস মেলেনি। ২১ অক্টোবর গোটা ঘটনা জানিয়ে ঘোকসাডাঙ্গা থানায় নিখোঁজ সংক্রান্ত লিখিত অভিযোগ দায়ের করে ফইজুলের পরিবার। এদিকে বিভিন্ন জায়াগায় খোঁজ খবর নিয়ে তাঁর মা ফজিলা বিবি জানতে পারেন যে, কেও ফোন করেছে তারপর সে বাড়ি থেকে বের হয়। এরপর পুলিশ মোবাইল সহ বিভিন্ন সূত্র ধরে সাউদেরবস এলাকার রমজান আলিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। তাঁর কথায়, অসংগতি মেলায় তাঁকে গ্রেপ্তার করে। ৭ দিনের পুলিশ রিমান্ড নেয় ঘোকসাডাঙ্গা থানার পুলিশ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে উঠে আসে সাউদেরবস এলাকার বছর ১৭-র এক নাবালিকার নাম। ওই নাবালিকাকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পারে ফইজুল হক প্রায় এক দেড় বছর আগে থেকেই নাবালিকাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। তাতে সে রাজি না হওয়ায় তাকে উত্যক্ত করত। নাবালিকাকে জিজ্ঞাসাবাদের পর তাদের কাছ থেকে উঠে আসে বেশকিছু নাম ও তথ্য। ওই নাবালিকার সূত্র ধরে নাবালিকার বাবা নুর ইসলাম ও তার মা নুরবানু বিবি ও শুকটাবাড়ি এলাকার মহম্মদ শাহিলকে গ্রেপ্তার করে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। পুলিশ জানতে পারে ফইজুলকে তারা মেরে তোর্ষার চরে পুঁতে দিয়েছে। শনিবার সকাল থেকেই পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের উপস্থিতিতে বিশাল পুলিশ বাহিনী মাথাভাঙ্গা ২ ব্লকের লতাপাতা গ্রাম পঞ্চায়েতের বুড়ি তোর্ষা নদীর ওপারে পৌঁছোয় পুলিশ বাহিনী। শুরু হয় মাটি খোঁড়ার কাজ। কিছুটা মাটি খোঁড়ার পর বেরিয়ে আসে দুটি পা। তারপর আরও মাটি খোঁড়ার পর পুলিশ দেখতে পারে ইঁদুরের মতো গর্ত করে মাটির ভেতরেই দেহ ঢুকিয়ে রাখা হয়েছিল। মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মাথাভাঙ্গা মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।
স্থানীয় সূত্র থেকে জানা গিয়েছে, সাউদেরবস এলাকার ওই নাবালিকা তার বর্তমান প্রেমিক ও প্রাক্তন প্রেমিককে সঙ্গে নিয়ে ছক কষে এই খুন করে মাটিতে দেহ পুতে দেয়। এরসঙ্গে নাবালিকার পরিবার পুরোপরি জড়িত বলে পুলিশের অনুমান। ওই যুবকের মাথার পিছনে আঘাতের চিহ্ন আছে। কোনও কিছু দিয়ে আঘাত করে মারা হয়েছে। এই ঘটনায় জড়িত থাকার দায়ে জয়গাঁ থেকে শেখ রাজু নামে আরও একজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।