প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লি: রাত পোহালেই উদ্বোধন। বর্ণাঢ্য আয়োজনে নয়া সংসদ ভবনের দ্বারোদঘাটন করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তার আগে শনিবার দিল্লিতে নিজ বাসভবনে তামিলনাড়ু থেকে আগত জনা ৫০ শাস্ত্রজ্ঞ কুলীন পণ্ডিত ‘অধিনাম’-দের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন প্রধানমন্ত্রী। শুক্রবারই তাঁরা রাজধানীতে এসে পৌঁছোন, উত্তরা স্বামী মালাই মন্দিরে পুজোও দেন তাঁরা। এদিন তাঁদের আশীর্বাদ গ্রহণ করেন মোদি। সঙ্গে ছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। পাশাপাশি তাঁদের হাত থেকে ঐতিহ্যশালী রাজদণ্ড ‘সেঙ্গল’ তুলে নেন।
নয়া সংসদ ভবনে লোকসভা কক্ষে অধ্যক্ষ ওম বিড়লার আসনের সামনে শায়িত থাকবে এই বহুমূল্য স্বর্ণদণ্ড। এটিকে ব্রিটিশ ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতীক হিসেবেই দাবি করছে বিজেপি। যদিও এই দাবি মানতে নারাজ কংগ্রেস। কংগ্রেস জানিয়েছে, এমন কোনও ঐতিহাসিক তথ্য নেই যেখানে ‘সেঙ্গল’কে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে, নতুন সংসদ ভবনে স্পিকারের পাশেই রাখা হবে এই সেঙ্গল। রবিবার অর্থাৎ ২৮ মে নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
এও জানা গিয়েছে, ১৯৪৭ সালে দেশের স্বাধীনতার সময় যেমন তামিলনাড়ুর শৈব মঠের সাধুদের কাছ থেকে রাজদণ্ড গ্রহণ করেছিলেন জওহরলাল নেহেরু, তেমনই সংসদ ভবনেও সম্পূর্ণ ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান মেনেই সেঙ্গোল স্থাপন করা হবে। এর জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ৬০ জন ধর্মগুরু ও সাধুদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এদের মধ্যে অধিকাংশই তামিলনাড়ুর বিভিন্ন মঠের সদস্য। শুক্রবার ত্রিচি, মাদুরাই সহ তামিলনাড়ুর বিভিন্ন মঠের সাধু ও প্রধানরা দিল্লিতে আসেন। সেঙ্গল প্রতিষ্ঠার অনুষ্ঠান কেমন হবে, তার এক ঝলক দেখাতে তামিল ভাষায় মন্ত্রোচারণ, যা ‘থিরাভারম’ নামে পরিচিত, তা পাঠ করেন আগত সাধুরা।
জানা গিয়েছে, ৪০০ বছর পুরোনো থিরুভাভাদুথুরাই অধিনম নামক মঠের সন্ন্যাসীদের ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য সেঙ্গোল তৈরি করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার থেকেই মঠের প্রতিনিধিরা দিল্লিতে আসতে শুরু করেছেন। মন্দিরের সভাপতি ভি বালাসুব্রহ্মণ্যম জানান, তামিল রীতিতেই সেঙ্গল প্রতিষ্ঠা করা হবে। তিনি বলেন, ‘তামিল নিয়ম অনুযায়ী, এই সেঙ্গল কখনও বেঁকে থাকা উচিত নয়। কারণ এটি ন্যায়ের প্রতীক।’
এদিকে মহার্ঘ্য উদ্বোধন কেন্দ্র করে সেজে উঠেছে নয়া সংসদ ভবন। নাগপুরের সেগুনকাঠ, রাজস্থানের বেলেপাথর, মির্জাপুরের কার্পেটে যা সেজে উঠেছে ইতিমধ্যেই। বাংলা থেকে তেমন কোনও সামগ্রী দিয়ে সংসদ সজ্জা না হলেও নয়া সংসদ ভবনের অন্দরমহলে দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়ি, বেলুড় মঠ, নেতাজির অন্তর্ধান এর মতো একাধিক বিষয় নিয়ে রয়েছে মুর্যাল শিল্প, জানা গিয়েছে সংসদ ভবন সূত্রে। নতুন সংসদ ভবন চত্বরের আয়তন ৬৪ হাজার ৫০০ বর্গমিটার৷ যা নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৯৭১ কোটি টাকা। এই ভবনের তিনটি প্রবেশদ্বার রয়েছে- জ্ঞান দ্বার, শক্তি দ্বার এবং কর্ম দ্বার৷ নতুন লোকসভা হলে ৮৮৮টি ও রাজ্যসভা হলে ৩৮৪টি আসন রয়েছে।
