চোপড়া: লুকোচুরি খেলতে গিয়ে দাদাকে মাটি চাপা পড়তে দেখে দৌড়ে বাড়িতে খবর দিয়েছিল ছোট্ট বোন। তার এই সাহসিকতার জন্য পশ্চিমবঙ্গ শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের তরফে বীরাঙ্গনা পুরস্কার দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হল। চোপড়ার (Chopra Children Death) চেতনাগছে মাটি চাপা পড়ে মৃত চার শিশুর মধ্যে বছর এগারোর তালেব আলমের বোন লায়লা বানু।
ছোট্ট লায়লার কথায়, ‘আমরা ছয়জন বাড়ির বাইরে লুকোচুরি খেলছিলাম। পাশে নালা খোঁড়া হয়েছিল, সেটা দেখতে গিয়েই আমাদের মধ্যে চারজন নালার পাড়ে উঁকিঝুঁকি মারতেই আচমকা মাটি ধসে তারা তলিয়ে যায়। তাদের মধ্যে আমার দাদা তালেব আলমও ছিল।’
চোখের সামনে দাদাকে তলিয়ে যেতে দেখে লায়লা এগিয়ে এসে লাঠি দিয়ে তাকে তোলার চেষ্টা করে। তালেব বোনকে নিজে না এসে বরং বাড়িতে খবর দিতে নির্দেশ দেয়। লায়লা তখন দৌড়ে গিয়ে মাকে খবর দেয়। পরবর্তীতে লোকজন জড়ো হয়ে শিশুদের উদ্ধার করে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঠানো হলেও বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
চার শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় বুধবার সন্ধ্যায় পশ্চিমবঙ্গ শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের পাঁচজনের এক প্রতিনিধিদল ওই গ্রামে যায়। বৃহস্পতিবার সকালে ফের প্রতিনিধিদল ওই গ্রামে গিয়ে সবার সঙ্গে কথা বলে। এদিন মৃত তালেবের বাড়িতে প্রতিনিধিদল কথা বলতেই লায়লার এই সাহসিকতার বিষয়টি উঠে আসে।
লায়লার বাবা ভোলা মহম্মদ বলেন, ‘মেয়ের আর্তনাদ শুনেই আমরা বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ি। প্রতিবেশীরাও দৌড়ে আসেন। অনেক চেষ্টার পর চারজনকেই উদ্ধার করা হলেও কাউকেই বাঁচানো যায়নি।’
এদিন রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনের প্রতিনিধিদল ওই শিশুর সঙ্গে কথা বলে। প্রতিনিধিদের কথায়, ‘ওই মেয়েটি দাদাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিল। তারপর দৌড়ে গিয়ে বাড়িতে খবর দিয়েছে। ও খবর দিয়েছে বলেই মাটির তলায় চাপা পড়ার কথা গ্রামের মানুষ জানতে পেরেছেন। না হলে ওদের পাওয়াই যেত না।’
পশ্চিমবঙ্গ শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন তুলিকা দাস বলেন, ‘প্রতি বছর সাহসিকতার জন্য ছেলেমেয়েদের বীরপুরুষ ও বীরাঙ্গনা পুরস্কার দেওয়া হয়। এবার লায়লাকে বীরঙ্গনা হিসেবে পুরস্কৃত করা হবে।’