রণজিৎ ঘোষ, শিলিগুড়ি: উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে (NBMCH) একে একে সমস্ত প্রতীক্ষালয় (Waiting room) দখল করে সরকারি প্রকল্প হচ্ছে। যার ফলে রোগী এবং পরিজনদের আশ্রয়ের জন্য পড়ে থাকছে শুধু হাসপাতালের করিডর। রাত্রিবাস হোক বা রোদ-ঝড়-বৃষ্টি থেকে মাথা বাঁচানো, করিডর ছাড়া উপায় নেই।
সোমবার থেকে তো আরও একটি প্রতীক্ষালয়কে কাজে লাগানো হবে। সেখানে মা ক্যান্টিন (Maa canteen) চালু করছে শিলিগুড়ি পুরনিগম। কিন্তু নতুন পরিকাঠামো তৈরি না করে কেন এভাবে প্রতীক্ষালয়গুলি নিয়ে অন্য কাজে ব্যবহার হচ্ছে, সেই প্রশ্ন উঠছে। মেডিকেলের রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন, ‘রোগী এবং পরিজনদের জন্য নতুন করে প্রতীক্ষালয় তৈরি করে দেব।’
মেডিকেলে চিকিৎসার জন্য উত্তরবঙ্গ ছাড়াও ভিনরাজ্য থেকে প্রচুর মানুষ আসেন। এখানে দৈনিক গড়ে ১২০০ রোগী চিকিৎসাধীন থাকেন। বহির্বিভাগে চিকিৎসার জন্য গড়ে ৪০০০ রোগী আসেন প্রতিদিন। এই রোগীদের চিকিৎসা করাতে এবং অন্তর্বিভাগে চিকিৎসাধীন রোগীর দেখভালের জন্যও অনেকে এখানে রাত্রিবাস করতে বাধ্য হন। বাম আমলে মহকুমা পরিষদ থেকে মেডিকেলে রাত্রিবাসের জন্য একটি ভবন তৈরি করা হয়েছিল। পরবর্তীতে সেই ভবনে সিটি স্ক্যান মেশিন বসানো হয়। আবাসন দপ্তর থেকে নার্সিং কলেজের রাস্তায় একটি তিনতলা প্রতীক্ষালয় তৈরি হয়েছিল। সেটি চালু হওয়ার আগেই ২০২০ সালে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়ে যায়। ফলে সেখানে কোভিড ব্লক-১ হিসাবে রোগীদের চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। ২০১৬ সালে জরুরি বিভাগের পাশে রাজ্যসভার সাংসদ তহবিলের টাকায় তিনতলা প্রতীক্ষালয় তৈরি হয়। গৌতম সেই প্রতীক্ষালয়টির উদ্বোধন করেছিলেন। খুব কম খরচে রোগীর পরিজনরা এই প্রতীক্ষালয়গুলিতে থাকতে পারবেন বলে জানানো হয়েছিল। কিন্তু এই ভবনটিও দীর্ঘদিন ফেলে রাখার পরে নাইসেডকে গবেষণাকেন্দ্রের জন্য দিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও গত কয়েক বছরে মেডিকেলে নতুন আটটি প্রতীক্ষালয় তৈরি হয়েছে। যেগুলিতে বৈদ্যুতিক পাখা, আলো থেকে শুরু করে সমস্ত ব্যবস্থাই করা হয়েছিল। প্রচুর মানুষ এই প্রতীক্ষালয়গুলিতে দিনের পাশাপাশি রাতেও থাকতেন। কিন্তু এগুলিও একটার পর একটা নিয়ে নেওয়া হচ্ছে। কিছুদিন আগে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের ক্যান্টিনের জন্য সেন্ট্রাল ল্যাবরেটরির সামনের প্রতীক্ষালয়টি নিয়ে নেওয়া হয়। সেখানে খাদ্যছায়া ক্যান্টিন চলছে। নতুন করে আবার ফেয়ার প্রাইস শপের পাশের একটি প্রতীক্ষালয়ের দখল নিয়ে মা ক্যান্টিন তৈরি হচ্ছে। রোগীদের অনেকেই বলেছেন, এভাবে একটা একটা করে প্রতীক্ষালয় দখল হয়ে গেলে চিকিৎসার জন্য আসা মানুষ কোথায় আশ্রয় নেবেন?