মাদারিহাট: শুখা মরশুম পড়তেই জলদাপাড়ার বন্যপ্রাণীদের জল খাওয়ার ঠিকানা সাকিল আনসারির পুকুর। সন্ধ্যা নামতেই পুকুরে গন্ডার, হরিণ, বাইসন, বানর এবং হাতির দল চলে আসে। এরপর জল পান করে জঙ্গলের পথে রওনা দেয়। তাদের সুবিধার জন্য আবার সাকিল পুকুরে নামার রাস্তাও বানিয়ে দিয়েছেন। কয়েক বছর ধরে এভাবেই চলছে। তবে, যে কোনও মুহূর্তে বন্যপ্রাণী ও মানুষের সংঘাত ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন জলদাপাড়া নর্থ রেঞ্জের রেঞ্জ অফিসার রামিজ রজার। তিনি বলেন, ‘মানবিক দিক থেকে এই পুকুর তৈরি ভালো দিক। তবে বন্যপ্রাণীরা জলপান করতে লোকালয়ে না আসলেই ভালো। মানুষ-বন্যপ্রাণীর সংঘাত যে কোনও সময় ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু ওদের তো আটকে রাখা যায় না। সেজন্য ওদের থেকে দূরে থাকা উচিত।’
শুখা মরশুমে জলদাপাড়ার বেশিরভাগ জলাশয় শুকিয়ে যায়। তখন জলতেষ্টা মেটাতে লোকালয়ে চলে আসে বন্যপ্রাণীরা। মধ্য মাদারিহাট পিংকি চৌপথিতে সাকিলের বাড়ি। বাড়ির সীমানা ঘেঁষেই জলদাপাড়া নর্থ রেঞ্জের জাতীয় উদ্যান। ওই উদ্যানের কোল ঘেঁষেই তিনি প্রায় ২৫ শতক জমিতে পুকুর তৈরি করেছেন চার বছর আগে। তাই জঙ্গল থেকে বেরিয়ে পুকুরে চলে আসে বন্যপ্রাণীরা। সাকিলের কথায়, ‘আমি দুটো উদ্দেশ্যে পুকুর তৈরি করেছি। মাছ চাষ করে রোজগার করা। আর শুখা মরশুমে বন্যপ্রাণীদের পানীয় জলের সংকট মেটাতে। পুকুর তৈরির কিছুদিন পর লক্ষ করলাম, সন্ধ্যার পর বাইসন, হরিণ হাতি ও বানর জলপান করতে পুকুরে আসছে। বিশেষ করে খরার মরশুমে। দুই বছর ধরে গন্ডারও চলে আসছে। জল পরিস্রুত রাখতে আমি নিয়মিত নানারকম কীটনাশক ব্যবহার করি। এলাকার বাসিন্দাদের আবেদন করেছি ওরা জলপান করতে আসলে যেন কেউ বাধা না দেয়।’ তবে যেভাবে মাদারিহাটের কিছু মানুষ জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান থেকে অবাধে ছোট গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে তাতে বিপদ ডেকে আনছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এব্যাপারে মাদারিহাট রেঞ্জের রেঞ্জ অফিসার শুভাশিস রায় বলেন, ‘আমরা বন্যপ্রাণীদের জঙ্গলের বাইরে আসতে উদ্বুদ্ধ করতে পারি না। এর ফলে বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।’