বালুরঘাটঃ বিজ্ঞানের অভিশাপ। আত্রেয়ী (Atreyi river) ফুঁড়ে বেরিয়ে আসছে বিশাল আকারের চর। এর জন্য মূলত চকভবানী এলাকায় স্বল্প উচ্চতার বাঁধকেই দায়ী করছেন মৎস্য গবেষক থেকে শুরু করে পরিবেশপ্রেমীরা। বাঁধের উত্তর প্রান্তে প্রচুর জল ধরা থাকলেও দক্ষিণ প্রান্ত শুকিয়ে আসছে। এই প্রান্তেই রয়েছে বালুরঘাটের (Balurghat) হালদারপাড়া। যেখানে শতাধিক মৎস্যজীবী পরিবারের বাস। নদীতে মাছের অভাবে জীবিকা সংকটে পড়েছেন তাঁরা।
বালুরঘাটের লাইফলাইন আত্রেয়ী নদী। আত্রেয়ী বালুরঘাটকে পূর্ব ও পশ্চিমে ভাগ করেছে। বাংলাদেশের মোহনপুরে রাবার ড্যাম দেওয়ার ফলে আগেই শুকিয়ে যাচ্ছিল নদী। নদীতে জল ধরে রাখতে চকভবানী এলাকায় এখন চেক ড্যাম দেওয়া হয়েছে। ওই বাঁধের দু’প্রান্ত উন্মুক্ত রেখে ডাউন স্ট্রিমে জল ছাড়া হচ্ছে। কিন্তু আত্রেয়ী তার যৌবন হারিয়েছে। ইতিমধ্যেই চকভৃগু, খিদিরপুর ডাঙ্গি সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় নদীর বুকে একাধিক চর তৈরি হয়েছে। এসব এলাকায় মূলত মৎস্যজীবীদের বাস। নদীতে আগের মতো মাছ না পাওয়ায় সমস্যায় পড়েছেন তাঁরা।
বাঁধ তৈরির সময়ই পরিবেশপ্রেমীরা আশঙ্কা করেছিলেন, এমন ঘটনা ঘটতে পারে। সেটাই অবশেষে সত্যি হল বলে আক্ষেপ করছেন তাঁরা। মাছ নদীর প্রতিকূলে যেতে পারবে না বলে প্রজনন ক্ষমতাও কমে যাবে বলে ইতিমধ্যে সতর্ক করছেন মৎস্য গবেষকরা।
মৎস্য গবেষক ঝন্টু হালদার বলেন, ‘চৈত্র-বৈশাখ মাসে নদীর পার্শ্ববর্তী খাঁড়ি, ডোবায় ঘাসযুক্ত শ্যাওলা এলাকায় মাছ জন্ম নেয়। পরে বৃষ্টি হলে মাছের পোনা সেখান থেকে বেরিয়ে নদীর স্রোতে আসে। তখন প্রতিকূলে তারা সাঁতরে যায়। কিছুটা জল পেলেও এখন আর বাঁধ পেরিয়ে তারা যেতে পারবে না। খিদিরপুর ডাঙ্গি এলাকায় ৫০০ মৎস্যজীবী পরিবারের বাস। কিন্তু এখন প্রায় ৪০৯ পরিবারের সদস্য পেশা বদলে বলে ফেলেছেন। তাঁরা ভিনরাজ্যেও পাড়ি দিচ্ছেন।’
পরিবেশপ্রেমী তুহিনশুভ্র মণ্ডলের মতে, ‘এমনটা যে হবে, তা এই বাঁধ তৈরির সময়ই আমরা আশঙ্কা করেছিলাম। বিজ্ঞান না মেনে তৈরি এই বাঁধের ফলে মৎস্যজীবীরা যে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন সেটাও আগে বলেছি। তখন বিশদে সমীক্ষার জন্য আবেদন করেছিলাম। অন্য প্রান্তে কৃষিজীবীদের জন্য জল রয়েছে। কিন্তু এপ্রান্তে জলের স্তর কমে যাচ্ছে। এনিয়ে আবারও ভাবনাচিন্তা করার প্রয়োজন। নদীকে বাধামুক্তভাবে নিজের মতো বইতে দেওয়া উচিত।’
যদিও সেচ দপ্তরের সাফাই, বিগত বছরগুলিতে এই সময় নদীর জলস্তর পাঁচ মিটারের নীচে নেমে যেত। সেই তুলনায় এবছর জলস্তর ভালো আছে। এখন জল একটু কমই থাকে। মে মাসের পর থেকে জলস্তর বাড়বে। ডাউন স্ট্রিমে যথেষ্ট পরিমাণে জল ছাড়া হচ্ছে। সমস্যা হওয়ার কথা নয়।