নকশালবাড়ি: ফ্ল্যাট বুকিংয়ে দাখিল করা ভুয়ো আয়ের শংসাপত্র দিয়ে কাঠগড়ায় গ্রাম পঞ্চায়েত। এই শংসাপত্র দেখিয়ে নকশালবাড়ির একাধিক বাসিন্দা কাওয়াখালিতে সরকারি ফ্ল্যাট হাতিয়েছে। অভিযোগ, গ্রাম পঞ্চায়েতের আয়ের ভুয়ো সার্টিফিকেট দিয়ে একই পরিবারের দুজনের নামে দুটি ফ্ল্যাট বুক করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, অনেকে সরকারি চাকরিরত। কারও কারও নকশালবাড়ি সহ নানা জায়গায় দোকান ও ব্যবসা রয়েছে। তাঁদের নামও ফ্ল্যাট প্রাপকের তালিকায় রয়েছে। যাঁদের মাসিক আয় ৫০ হাজার টাকা বা তারও বেশি কিংবা দৈনিক লক্ষ লক্ষ টাকার ব্যবসা করেন তাঁদের নামে কম আয়ের শংসাপত্র দেখিয়ে ফ্ল্যাট দেওয়া হয়েছে। নকশালবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে ইস্যু করা ওই সার্টিফিকেটের উপর ভিত্তি করে বিডিও শংসাপত্র দিয়েছেন। এব্যাপারে নকশালবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান, উপপ্রধান, সহায়কের বিরুদ্ধে তদন্তের দাবি জানিয়ে নকশালবাড়ির বিডিও ও শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান সৌরভ চক্রবর্তীর কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
নকশালবাড়ির বহু সাধারণ বাসিন্দাও তদন্ত চেয়ে চেয়ারম্যানকে অভিযোগ জানিয়েছেন। এর মধ্যে নকশালবাড়ি স্টেশনপাড়ার বাসিন্দা সীতারাম পাসোয়ান গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে আয়ের ভুয়ো শংসাপত্র বিলি নিয়ে প্রধান, উপপ্রধান ও সহায়কের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন। উল্লেখ্য, দারিদ্র্যসীমার নীচে থাকা মানুষজনের মাথার উপর ছাদের ব্যবস্থা করতে শিলিগুড়ির কাওয়াখালিতে এই প্রকল্প হাতে নিয়েছিল এসজেডিএ। ৪৫০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটের দাম করা হয়েছিল তিন লক্ষ টাকা। নকশালবাড়ি ব্লকের ২১ জন বাসিন্দাকে এই ফ্ল্যাট দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে জেনারেল ক্যাটিগোরিতে নকশালবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার দশজন বাসিন্দা রয়েছেন। সীতারামের অভিযোগ, তিনি ও তাঁর গোটা পরিবার রেলের জমিতে ত্রিপল টাঙিয়ে থাকেন। তিনি এসজেডিএর ফ্ল্যাটের জন্য আবেদন করেছিলেন। কিন্তু অজানা কারণে তাঁর নাম বাতিল করা হয়। কিন্তু ফ্ল্যাট প্রাপকের ২১ জনের তালিকায় কেউই দারিদ্র্যসীমার নীচে বাস করেন না। সবাই আর্থিকভাবে সচ্ছল ও ওই এলাকারই বাসিন্দা। এই বৈষম্যের জন্য দায়ী গ্রাম পঞ্চায়েত ও বিডিও। তাঁরা সরেজমিনে তদন্ত ছাড়াই অকাতরে শংসাপত্র দিয়েছেন। তিনি এসজেডিএর চেয়ারম্যানের নাম উল্লেখ করে তদন্তের জন্য অভিযোগ জানিয়েছেন। অবিলম্বে তদন্ত করে ব্যবস্থা না নিলে তিনি আদালতে যাওয়ারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
এপ্রসঙ্গে নকশালবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান জয়ন্তী কিরো বলেন, ‘সরেজমিনে তদন্ত করেই শংসাপত্র দেওয়া হয়েছে। আমারা সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ।’ এসজেডিএর চেয়ারম্যান সৌরভ চক্রবর্তী বলেন, ‘লটারিতে যাঁদের নাম উঠছে তাঁদের এখনই ফ্ল্যাট দেওয়া হবে না। আমাদের পক্ষ থেকেও বিষয়টি যাচাই করে দেখা হচ্ছে। সব অভিযোগ খতিয়ে দেখে তারপরেই ফ্ল্যাট দেওয়া হবে। কেউ ভুয়ো তথ্য দিয়ে থাকলে তাঁর বা তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’