বীরপাড়া ও কুমারগ্রাম: ভোটের রণাঙ্গনে মনোজ টিগ্গা, প্রকাশ চিকবড়াইক। একরকম নাওয়াখাওয়া ভুলেই এ ক’দিন প্রচার সারলেন দুজনে। ওঁদের সহধর্মিণীরাও আঁচল কোমরে গুঁজে স্বামীর পাশে থাকলেন। প্রচার তো শেষ হল, কিন্তু ভোটের ফল না বেরোনো পর্যন্ত নানা কাজে ব্যস্ত থাকবেন দুই প্রার্থীই। কেমন কাটল প্রচারের দিনগুলি? ভোটের এই আবহে বাবা-মা দুজনেই ব্যস্ত থাকায় স্বাভাবিকভাবেই প্রভাব পড়েছে ছেলেমেয়েদের ওপর। বাবা তো দূরের কথা, ছেলেকে দেখভালের সময় পাননি মনোজ টিগ্গার স্ত্রী পমি টিগ্গাও। সপ্তাহ দুয়েক আগে সপ্তম শ্রেণির ছেলে শশাঙ্ক টিগ্গাকে বীরপাড়ার স্কুল থেকে ছাড়িয়ে এনেছেন তিনি। কারণ, বীরপাড়ার স্কুলটিতে হস্টেলের সুবিধা নেই। হস্টেলের সুবিধা রয়েছে, জলপাইগুড়ির এমন একটি স্কুলে ভর্তি করেছেন ছেলেকে।
প্রকাশ চিকবড়াইকের ছেলে নিখিল চিকবড়াইকও সপ্তমের পড়ুয়া। তবে বাবার সঙ্গে দেখা তো হয় না বললেই চলে। প্রকাশ তৃণমূলের জেলা সভাপতি। তার ওপর রাজ্যসভার সাংসদ। কলকাতা, দিল্লি যাতায়াত লেগেই থাকে। চষতে হয় জেলা। প্রায়ই বাড়িতে রাত কাটানো হয় না। বাড়ি ফিরলেও গভীর রাত হয়ে যায়। ততক্ষণে ঘুমিয়ে কাদা নিখিল। এ নিয়েই আক্ষেপ নিখিলের। বাবা ভোটের প্রচারে ব্যস্ত। বাবার ছবি, ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। মা রান্নাঘরে ব্যস্ত! আবার প্রচারেও যাচ্ছেন। সেই ফাঁকে মায়ের মোবাইল ফোন ঘেঁটে সোশ্যাল মিডিয়ায় বাবার ছবি দেখে নিখিল। কিন্তু ছেলের ফোন ঘাঁটায় আপত্তি রয়েছে মায়ের। ‘মা বকে দেয়। তবে বাবা বকে না’, বলেই ঘরে ঢুকে পড়ে লাজুক নিখিল।
সোমবার রাত তখন সাড়ে ৯টা। বীরপাড়ায় পথসভা করে মহিলা মোর্চার নেত্রীকে নাগরাকাটায় পৌঁছে দেন মনোজের স্ত্রী পমি। মঙ্গলবার সকালে মনোজের সঙ্গে প্রচারে তিনিও যান গোপালপুর চা বাগানে। তাঁর কথায়, ‘ছেলের দিকে নজরই দিতে পারছিলাম না। নিরুপায় হয়ে স্কুল বদল করতে হল। মেয়েটাও বাড়িতে নেই অনেকদিন হল। ও কলকাতায় থাকে। রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে কলেজে পড়ছে।’ বাড়িজুড়ে ভোটের উত্তাপ। তাই আপাতত হেঁশেল ইনচার্জ মনোজের বৌদি পার্বতী টিগ্গা। প্রকাশের হেঁশেল সামলাচ্ছেন প্রমীলা মণ্ডল। তবে প্রকাশের বাড়িতে থাকেন তাঁর ভাইঝি ও ভাগ্নেও।
মনোজের খাবারের মেনু ঠিক করেন গিন্নিই। তাঁর কথায়, ‘মনোজ নিরামিষ পছন্দ করে। প্রতিদিন ভাতের সঙ্গে আলুসেদ্ধ থাকছে। বাইরে গেলে টিফিনবক্সে পেঁপে, শুকনো ফল দিচ্ছি।’ এদিকে প্রকাশের পছন্দ চা গাছের ফুল, সজনে ডাঁটা, এঁচোড়, পনির, ডালের বড়ি, চাটনি। স্বামীর সাফল্য কামনায় ব্রত পালন করছেন প্রকাশের স্ত্রী ললিতা বেক চিকবড়াইক।
ভোটের মুখে বাড়িতে কেমন আচরণ দুই প্রার্থীর? মনোজ গিন্নি বলছেন, ‘ও তো বরাবরই ঠান্ডা প্রকৃতির। এখনও ঠান্ডাই আছে। এতে আমিই অবাক হচ্ছি।’ আর প্রকাশের স্ত্রী বলছেন, ‘একসময় একটু রাগারাগি করত। এখন রাগ করার সময়ই পাচ্ছে না।’ হেসে ফেলেন ললিতা।