গাজোল: ‘আমরা দাবি জানিয়েছিলাম মতুয়াদের নিঃশর্ত নাগরিকত্ব দেওয়া হোক। কিন্তু বর্তমানে যে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল আনা হয়েছে তাতে একাধিক কাগজপত্র চাওয়া হয়েছে। যা কোনও মতুয়াদের পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। ভোটের জন্য বিজেপি (BJP) যে তাঁদের নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে এ কথা বুঝতে পারছেন মতুয়ারা। সিএএ (CAA) এখন বুমেরাং হয়ে ফিরছে বিজেপির কাছে।’ বৃহস্পতিবার গাজোলে এসে উত্তরবঙ্গ সংবাদকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানালেন অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসংঘের সংঘাধিপতি, মতুয়া উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান তথা রাজ্যসভার সাংসদ মমতা বালা ঠাকুর (Mamata Bala Thakur)। গতকাল রাতে জলপাইগুড়ি থেকে তিনি ফিরেছেন গাজোলে (Gazole)। রাতে ছিলেন আন্তর্জাতিক মতুয়া ধর্ম প্রচারক ভজহরি রায়ের বাড়িতে।
এদিন সকালে হরিরামপুর যাওয়ার আগে সাক্ষাৎকারে মমতা বালা ঠাকুর বলেন, ‘মতুয়াদের নাগরিকত্বের দাবিতে বড়মা বীণাপাণি দেবী এবং কপিল কৃষ্ণ ঠাকুরের নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চলেছে। দেশভাগের ফলে বিপন্ন মানুষ যাঁরা পাকিস্তান, বাংলাদেশ কিংবা আফগানিস্তান থেকে ভারতে আসবে তাঁদের নিঃশর্ত নাগরিকত্ব দেওয়া হবে ১৯৫২ সালের আইনে এই কথা বলা ছিল। কিন্তু ২০০৩ সালে অটল বিহারি বাজপেয়ীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার সেই আইন বাতিল করে দেয়। ২০১৯ সালে মতুয়াদের নাগরিকত্বের লোভ দেখিয়ে এই বাংলা থেকে ১৮টি আসন জিতেছিল বিজেপি। তারপর থেকে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন আটকে রেখেছিল। ভোটের মুখে সেই আইন লাগু করে তারা। কিন্তু নাগরিকত্বের জন্য যে সমস্ত শর্ত দেওয়া হয়েছে তা কেউই পূরণ করতে পারবে না। পাসপোর্ট, ভিসা, মাইগ্রেশন সার্টিফিকেট, সংশ্লিষ্ট দেশে বসবাসের প্রমাণপত্র এর কোনওটাই দাখিল করতে পারবেন না তারা। বিজেপি, তৃণমূল, কংগ্রেস বা সিপিএম যে দলেরই সমর্থক হোন না কেন কারও কাছে এই কাগজ নেই। এই আইন কার্যকর হওয়ার পর যাঁরা নাচ করছিলেন, তাঁরা এখন কান্নাকাটি করছেন। মতুয়ারা যে ক্রমশ বিজেপির কাছ থেকে সরে আসছেন তার বড় প্রমাণ পাওয়া গেছে শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে। ওইদিন ঠাকুর বাড়িতে যে সমস্ত মতুয়ারা এসেছিলেন তাঁরা কেউই শান্তনু ঠাকুরের কাছে যাননি। মতুয়ারা বুঝতে পারছেন কেন শান্তনু ঠাকুর মুখে বড় বড় কথা বললেও প্রমাণপত্র দিয়ে এখনও ফর্ম ফিলাপ করেননি।’
মমতা আরও বলেন, ‘মতুয়াদের জন্য বিজেপির যে মেকি দরদ তা প্রমাণ হয়ে গিয়েছে। বিজেপি বারবার মানুষকে লাইনে দাঁড়াতে বাধ্য করছে। নোট বাতিলের সময় লাইনে দাঁড়াও, আধার, ভোটার, প্যান কার্ড সংযুক্তিকরণের জন্য লাইনে দাঁড়াও, এবার নাগরিকত্বের ফর্ম ফিলাপের জন্য লাইনে দাঁড়াতে বাধ্য করছে মানুষকে। মতুয়াদের আমরা বলছি কোনওরকম ফর্ম ফিলাপ করবেন না আপনারা। একবার ফর্ম ফিলাপ করলে চিহ্নিত হয়ে যাবেন আপনারা। তারপর অসমের মতো ডিটেনশন ক্যাম্পে নিয়ে যাবে। তবে আপনাদের পাশে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রয়েছেন। ইতিমধ্যে মতুয়াদের জন্য একাধিক প্রকল্প বাস্তবায়িত করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। মতুয়াদের জমির পাট্টা দিয়েছেন, শংসাপত্র দিয়েছেন। তাই মতুয়াদের বলছি ১৯ এর ভুল আর নয়। গতবার মতুয়াদের ভুল বুঝিয়ে ১৮টি আসন জিতেছিল বিজেপি। এবার বিজেপির ভাঁওতাবাজি ধরে ফেলেছে মতুয়ারা। এবার গোটা রাজ্যে বিজেপির আসন সংখ্যা ২-এ পৌঁছোবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।’