শিলিগুড়ি: এনজেপি আছে এনজেপিতেই (NJP)। দিন-দিন যেন তোলাবাজির স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠছে গোটা স্টেশন এলাকা। বাম আমলে শুরু হওয়া তোলাবাজির বহর আরও বেড়েছে তৃণমূলের আমলে। বদলেছে টাকা আদায়ের ধরনও। এবার পর্যটক সহায়ক বা এজেন্টদের (Agent) কাছ থেকে নতুন পন্থায় তোলাবাজির অভিযোগ উঠেছে। দিন গেলে পর্যটক সহায়কদের দিতে হচ্ছে ৪০ টাকা ‘কাটমানি’। অভিযোগ, সেই টাকা যাচ্ছে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসির খাতে। যদিও এসবের সঙ্গে আইএনটিটিইউসির কোনও যোগ নেই বলেই দাবি করেছেন সংগঠনের এনজেপি শাখার দায়িত্বে থাকা সুজয় সরকার। তাঁর বক্তব্য, ‘যেখানে কর্মীরা মালিকের অধীনে কাজ করছেন, সেখান থেকে অন্য কেউ টাকা তুলবে কীভাবে? নিশ্চয়ই মালিকদের সঙ্গে ওঁদের নির্দিষ্ট কোনও চুক্তি রয়েছে। জানি না কেন বারবার বিভিন্ন ঘটনায় আইএনটিটিইউসিকে জড়িয়ে দেওয়া হয়।’
সুজয় ঘটনা অস্বীকার করলেও অনেকেই কিন্তু ভিন্নমত প্রকাশ করছেন। এনজেপি ও আশপাশের বহু প্রভাবশালী তৃণমূল ও আইএনটিটিইউসি নেতা ঘটনার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলার তথা তৃণমূল নেতা জয়দীপ নন্দী বলছেন, ‘বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অভিযোগ ওঠে এনজেপিতে। আমাকে খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে এর মধ্যে সত্যতা কতটা রয়েছে।’
এনজেপিতে বর্তমানে ২৮টি ট্রাভেল এজেন্সির (Travel agency) অফিস রয়েছে। সেখানে সবমিলিয়ে প্রায় ১৮০ জন পর্যটক সহায়ক বা এজেন্ট হিসেবে কাজ করছেন। পর্যটকদের বিভিন্ন জায়গায় ঘোরার প্যাকেজ করিয়ে দিতে পারলে তাঁরা মোটা অঙ্কের কমিশন পান। কোনও রসিদ ছাড়াই তাঁদের কাছ থেকে ৪০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। বেগরবাই করলে পুরোনো কর্মীদের কাজ থেকে ছাঁটাইয়ের চেষ্টাও শুরু হয়েছে। সেই জায়গায় নতুন কাউকে নিয়োগ করা হলে তাঁর কাছ থেকে মোটা টাকা কমিশন নেওয়া হচ্ছে। এক পর্যটক সহায়ক বলছেন, ‘নতুন কেউ কাজে যোগ দিতে চাইলে নেতাদের ৩০-৪০ হাজার টাকা দিতে হয়।’
এজেন্টদের সঙ্গে মালিকদের একেকরকম চুক্তি থাকে। বছরে কয়েক মাস পর্যটনের মরশুম থাকলেও প্রায় অর্ধেক বছর সেভাবে কাজ থাকে না। তাই বাকি ছয় মাসে এক থেকে সওয়া লক্ষ টাকার বোনাস দেওয়া হয় এজেন্টদের। অফ সিজনে সেই টাকা দিয়েই তাঁদের সংসার চলে। বর্তমানে নতুন এজেন্ট নিয়োগ হলে তাঁদের প্রথম ছয় মাসের এই বোনাস দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ। কিন্তু নেতাদের ভয়ে কেউ প্রকাশ্যে মুখ খোলার সাহস পাচ্ছেন না।
এক ট্রাভেল এজেন্সির মালিকের কথায়, ‘আমাদের খরচ একই রয়েছে। আগে কর্মীরা এই টাকা পেতেন, এখন অন্য জায়গায় যায় সেই টাকা।’ যদিও কার হাত দিয়ে কোথায় সেই টাকা যায়, সেটা খোলসা করেননি তিনি।
নতুন করে এই তোলাবাজির খবর রয়েছে সিপিএমের কাছেও। দলের দার্জিলিং জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য দিলীপ সিং বলছেন, ‘এনজেপিতে সমস্ত ইউনিয়ন, সমস্ত জায়গা থেকেই তোলা আদায় করা হচ্ছে। বড় ব্যবসায়ী থেকে সাধারণ শ্রমিক কাউকেই রেয়াত করা হয় না। একইভাবে পর্যটক সহায়ক, হকার, ট্যাক্সি-লরি শ্রমিকদের থেকে তোলা নেওয়া হচ্ছে বলে শুনেছি।’
কিন্তু বেড়ালের গলায় ঘণ্টাটা বাঁধবে কে, সেই প্রশ্নটাই যেন বড় হয়ে দাঁড়ায় এনজেপিতে।