উত্তরবঙ্গ ব্যুরো: রথযাত্রা উপলক্ষ্যে প্রতিবছরই মানুষের উন্মাদনা লক্ষ্য করা যায়। মঙ্গলবার সকাল থেকেই উত্তরবঙ্গের জেলায় জেলায় রথের দড়িতে টান দিতে উৎসুক ভক্তের দল। রথ যাত্রার প্রথম দিন ৫৬ রকমের ভোগ প্রদান করা হয় শ্রী জগন্নাথ দেবকে। ইতিমধ্যে চালসায় রথযাত্রার সূচনা হল। প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও চালসা স্কুল পাড়ার শ্রীশ্রী সীতারাম বাবাজী রাধাগোবিন্দ আশ্রমের উদ্যোগে রথযাত্রার আয়োজন করা হয়। এবছর রথযাত্রা উপলক্ষ্যে মঙ্গলবাড়ি চরক ময়দানে ১২ দিন ব্যাপী মেলার আয়োজন করা হয়েছে। আজ ফিতে কেটে রথযাত্রার সূচনা করেন নাগরাকাটা বিধানসভার বিধায়ক পুনা ভেংরা।
রথযাত্রা উপলক্ষ্যে বেলাকোবাতে আদি রথযাত্রা উৎসব সমিতি, বেলাকোবা স্টেশন কলোনির উদ্যোগে ৩৫তম বর্ষ এবং বেলাকোবা বিবেকানন্দ কলোনি সার্বজনীন রথযাত্রা উৎসব কমিটি উদ্যোগে ৩৪তম রথযাত্রার অনুষ্ঠিত হয়। বেলাকোবার বিভিন্ন এলাকায় রথ নিয়ে পরিক্রমা করেন উভয় কমিটি। এই উপলক্ষ্যে বিবেকানন্দ কলোনি রথযাত্রা উৎসব কমিটির তরফে আট দিনের মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে বেলাকোবা লাইব্রেরি মাঠে।
রথযাত্রায় প্রতিবছরই এই দিনটি বিশেষভাবে পালন করে ইসকন এর মালদা শাখা। বিশেষ দিনে সমাগম হয় বহু ভক্তের। স্নান যাত্রা সমাপ্ত করে, দীর্ঘ সাত দিনের রোগশয্যা ত্যাগ করে জগন্নাথ দেব আজ রথে করে যাবেন মাসির বাড়ি। কিছুদিন আগে রামকেলি ধামে ইসকনের তরফে তৈরি করা হয়েছে একটি মন্দির। সেই মন্দিরের আদলেই জগন্নাথের মাসির বাড়ি গুণ্ডিচা মন্দির তৈরি করা হয়েছে পল্লীশ্রী ময়দানে, যেটি জগন্নাথ দেবের অস্থায়ী মাসির বাড়ি। আর সেখানেই এই সাত দিন বিরাজ করবেন স্বয়ং দেবতা। মায়াপুরের ইসকন মন্দিরের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রান্ত থেকে একাধিক ভক্ত সমাগম হয়েছে এই রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে। ত্রিশ ফুটের পিতলের রথে চেপে হরিশ্চন্দ্রপুরে নগর পরিক্রমায় বেরোলেন জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা।
রথযাত্রার পুণ্যলগ্নে পূণ্যার্থীদের ভিড় উপচে পড়ল রাজপথে। ইসকন অনুমোদিত রায়গঞ্জ শ্রী শ্রী হরেকৃষ্ণ নামহট্ট সংঘের ব্যবস্থাপনায় এক বর্ণাঢ্য রথ যাত্রার আয়োজন করা হয় রায়গঞ্জে। বন্দর ভারত সেবক সমাজ ক্লাবের সামনে থেকে এই রথযাত্রার সূচনা হয়।
যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে পতিরাম ও কুমারগঞ্জ এলাকায় পালিত হল রথ উৎসব। রথ উপলক্ষ্যে বিভিন্ন জায়গায় আয়োজিত হল রথের মেলা। তবে চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী রথের দিন বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও এদিন পতিরাম ও কুমারগঞ্জে বৃষ্টির দেখা মেলেনি। পতিরামে সবচেয়ে বড় রথের মেলা অনুষ্ঠিত হয় পার পতিরাম হাটখোলা প্রাঙ্গণে। কুমারগঞ্জের গোপালগঞ্জ বালুপাড়ায় ইসকন পরিচালিত মন্দিরের উদ্যোগে যে রথ আয়োজিত হয় সেখানে প্রচুর ভক্তের সমাগমে জমজমাট হয়ে ওঠে। গোপালগঞ্জ বালু পাড়ার ইসকনের এই রথের রশিতে টান দিতে শত শত মানুষ মন্দির প্রাঙ্গনে ভিড় জমান।
বাবুরহাট ইসকন মন্দিরের তরফে রথযাত্রা উপলক্ষ্যে এদিন শোভাযাত্রা বের হয়। সেই উৎসবে অংশ নিতে রাশিয়া সহ বিভিন্ন দেশ থেকে বেশকিছু ভক্ত এসেছেন। তারাও এদিনের শোভাযাত্রায় অংশ নেন। মাইক্রোফোন হাতে কীর্তন গাইছেন তাঁরা। দেদার নেচে-গেয়ে শোভাযাত্রায় পা মেলান কোচবিহারের বাসিন্দারা। বিদেশি ভক্তদের মুখ থেকে কীর্তন শুনতে কোচবিহার শহরের রাস্তার দুপাশে ভিড় লেগে যায়।
অন্যদিকে, রথযাত্রার দিনই কাঠামো পুজোর মধ্য দিয়ে শুরু হয় দেবী দুর্গার প্রতিমা গড়ার কাজ। সেই প্রথা মেনে এদিন রথযাত্রার দিন কাঠামো পুজোর মধ্য দিয়ে তুফানগঞ্জ শহরে রানীরহাট বাজার সংলগ্ন আদি দেবী বাড়ি মন্দিরে দুর্গাপুজোর প্রস্তুতি শুরু হল। প্রভু জগন্নাথ দেবের রথের দড়িতে টান মানেই পুজোর ঢাকে কাঠি পড়া। রথযাত্রা উপলক্ষ্যে ঢাকের বাদ্যি জানান দিচ্ছে মা আসছেন। দীর্ঘ ধারাবাহিকতা আর পরম্পরা মেনে তুফানগঞ্জ আদি দেবী বাড়ি দুর্গোৎসব কমিটির পুজো মণ্ডপে অনুষ্ঠিত হল কাঠামো পুজো।
রায়গঞ্জের কুমোরটুলিতে দেবী দুর্গার কাঠামো পুজো সারলেন পুজো উদ্যোক্তারা। বহু যুগ ধরে রথযাত্রা উৎসবের দিনেই দেবী দুর্গার কাঠাম পুজো অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে রায়গঞ্জের কুমোরটুলিতে। এর পাশাপাশি আজকের এই শুভদিনে বিভিন্ন ক্লাব পুজো কমিটিগুলি খুঁটিপুজো করে থাকেন। সেইমতো এদিন শুভ রথযাত্রা উৎসবের দিন রায়গঞ্জ শহরের কাঞ্চনপল্লীর কুমোরটুলিতে কাঠামো পুজোর মাধ্যমে দুর্গা প্রতিমা নির্মাণের কাজ শুরু করা হল। রায়গঞ্জ শহরের রাসবিহারী মার্কেট এলাকায় চৈতালি ক্লাবে এদিন খুঁটি পুজো অনুষ্ঠিত হয়। করণদিঘির সাধনপুরে শ্রী শ্রী জগন্নাথ মহাপ্রভু রথ মন্দিরে পালিত হল রথযাত্রা।
দেশের অন্যান্য জায়গার সঙ্গে মাথাভাঙ্গা শহরেও উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে রথযাত্রা পালিত হয়। এদিন মাথাভাঙ্গার বেশ কয়েকটি রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। তবে মূল রথযাত্রা ছিল শহরের মদনমোহন ঠাকুরবাড়ির রথযাত্রা।