শমিদীপ দত্ত, ত্রিবেণি: ভাঙাচোরা রাস্তা। তার ওপর বসানো বোর্ডের অবস্থাও খুব একটা ভালো নয়। সেখানে লেখা, ‘ওয়েলকাম টু ত্রিবেণি’। বোর্ড স্বাগত জানালেও বাস্তবে অভ্যর্থনা জানানোর কেউ নেই। জমে রয়েছে পুরু পলির স্তর। একসময় তিস্তার ধারবরাবর যে রাস্তা ছিল, এখন তার অস্তিত্ব জানান দেয় ধ্বংসাবশেষ। সেসবের ছবি তুলতেই এগিয়ে এলেন স্থানীয় এক গাড়িচালক। বহুদূর বিস্তৃত পলির স্তর দেখিয়ে বললেন, ‘এটাই ছিল ত্রিবেণি (Tribeni) যাওয়ার রাস্তা। সবকিছু গ্রাস করেছে তিস্তা।’ তাহলে ত্রিবেণির বাসিন্দাদের কী হল? মলয় গুরুং নামে ওই ব্যক্তি বললেন, ‘সবাই চলে গিয়েছেন পেশকে।’ ত্রিবেণির বাড়িগুলোর কী অবস্থা, সে সম্পর্কে কারও কোনও ধারণা নেই। যতটুকু রাস্তা অক্ষত ছিল, সেটাও এবার তিস্তার (Teesta) স্রোতে ভেসে চলে গিয়েছে।
একসময় এই ত্রিবেণিকে নিয়ে পর্যটনের স্বপ্ন বুনেছিলেন অনেকে। উত্তরবঙ্গে একমাত্র এখানেই র্যাফটিংয়ের পাশাপাশি রাত কাটানোর বন্দোবস্ত ছিল। রাতে চাঁদের হালকা আলোয় তাঁবুর সামনে আগুন জ্বালিয়ে কেউ গিটার হাতে গান ধরতেন, কেউ বলতেন জীবনের নানা অভিজ্ঞতার গল্প। সেসবের ছবি, ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় দারুণ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। বাংলা তো বটেই, দেশের নানা প্রান্ত থেকে পর্যটকরা আসতেন। গতবছরের অক্টোবরে অবশ্য সেই জায়গা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।
সেই ধাক্কা কাটিয়ে র্যাফটিং শুরু হলেও ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল এতদিন। রবিবার ত্রিবেণি পুলের কাছে র্যাফটিংয়ের বোর্ড গাড়ির মাথায় রেখে দাঁড়িয়ে ছিলেন জনাকয়েক গাড়িচালক। তাঁদের একজন অশোক দেবান বললেন, ‘ত্রিবেণিতে পর্যটক আসছেন কোথায়? তিস্তার ভয়ংকর রূপে একাধিক জায়গায় ধস নেমেছে। র্যাফটিং কতদিন চালানো যাবে, জানা নেই।’
একসময় ত্রিবেণিতেই থাকতেন নিমা ভুটিয়া। পেশায় গাড়িচালক নিমা ত্রিবেণি পুলের পাশ দিয়ে যাওয়া ভাঙা ওই রাস্তা দিয়ে একসময় রোজ যাতায়াত করতেন। এদিন কথা বলার সময় বারবার তিনি ফিরে যাচ্ছিলেন অক্টোবরের সেই রাতের প্রসঙ্গে। বলছিলেন, ‘সেদিন আমরা কোনওরকমে বেরিয়ে এসেছিলাম। পরিচিতদের মধ্যে কারও মৃত্যু না হলেও ঘর ছাড়তে হয়েছিল। এখনও ঘরছাড়া। পেশকে একটি বাড়িভাড়া নিয়ে বসবাস করছি। নিজের বাড়ি আদৌ কখনও দেখতে পাব কি না, জানি না।’ ‘আসলে ত্রিবেণিকে ঘিরে দেখা স্বপ্নের অপমৃত্যু ঘটেছে’, ভারী গলায় বললেন বিপিন রাই। র্যাফটিংয়ের সঙ্গে জড়িত বিপিনের কথায়, ‘পর্যটকদের কাছে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে একাধিক পরিকল্পনা করা হচ্ছিল। এখন আমরা দিশেহারা। ত্রিবেণি নামটাই এখন শুধু রয়ে গিয়েছে, ভগ্নদশা ওই বোর্ডে।