অর্ঘ্য বিশ্বাস, ময়নাগুড়ি: ভরা বর্ষায় নদী পারাপার করতে গিয়ে একাধিকবার হস্তীশাবক সহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণী ভেসে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে উত্তরের বিভিন্ন বনাঞ্চলে। গত কয়েক বছরে ডুয়ার্সের বিভিন্ন জায়গায় নদী, ক্যানাল থেকে বেশ কয়েকটি হস্তী, হরিণশাবক উদ্ধারও করেছে বন দপ্তর। তাই বন্যপ্রাণীদের সুরক্ষার জন্য এবার নদীগুলোতে বিশেষ নজরদারি চালাবে বন দপ্তর।
উত্তরবঙ্গের মুখ্য বনপাল ভাস্কর জেভি বলেন, ‘বর্ষার মরশুমে বন দপ্তরের প্রতিটি রেঞ্জ বিশেষ করে স্কোয়াডগুলোকে সতর্ক করা হয়েছে প্রতি মুহূর্তে নজরদারি চালানোর জন্য। যে এলাকায় নদী রয়েছে, সেই এলাকাগুলোকে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’ নদী সংলগ্ন বিভিন্ন জায়গার পাশাপাশি গরুমারা জঙ্গলের ভেতরে মূর্তি ও জলঢাকা নদী ও পার্শ্ববর্তী এলাকাজুড়ে নজরদারি শুরু হয়েছে, নদীঘেঁষা এলাকায় কুনকি হাতিদেরও কাজে লাগানো হচ্ছে।
বেশ কয়েকবছর আগে তিস্তা নদী পার করতে গিয়ে গজলডোবার কাছে ভেসে গিয়ে মৃত্যু হয়েছিল পঁাচটি হাতির। এরপরও একাধিকবার হাতি মাঝ নদীতে আটকে পড়ার ঘটনা সামনে এসেছে। এই মুহূর্তে জলপাইগুড়ি জেলার ক্রান্তি ও রাজগঞ্জ ব্লকের মাঝে তিস্তার চরে হাতির উপস্থিতি রয়েছে। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে ছোট শাবক নিয়ে শতাধিক হাতি প্রতিদিনই ভরা তিস্তা পেরিয়ে এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে যাওয়া-আসা করছে। তিস্তার পাশাপাশি গরুমারা ও জলপাইগুড়ি বন বিভাগের জঙ্গল সংলগ্ন মূর্তি, জলঢাকা, নেওড়া, ডায়না সহ বিভিন্ন নদী পারাপার করে হাতি, হরিণ, বাইসন, গন্ডার সহ বন্যরা। দু’বছর আগে চাপড়ামারি ও পানঝোরার কাছে মূর্তি নদীতে একটি হস্তীশাবক ভেসে এসেছিল। সেটি উদ্ধার করে বন দপ্তর। ডুয়ার্সের বিশিষ্ট পরিবেশপ্রেমী অনির্বাণ মজুমদারের কথায়, ‘জঙ্গলের ভেতরে বন দপ্তরের নজরদারির পাশাপাশি নদী সংলগ্ন এলাকাগুলোয় জলপথে নজরদারির ব্যবস্থা ভীষণ দরকার ছিল।’
ন্যাফের মুখপাত্র অনিমেষ বসু বলেন, ‘হাতি বুদ্ধিমান প্রাণী তবে স্বাভাবিকভাবে নদী পারাপারের ক্ষেত্রে ঝুঁকি থাকে। জলস্তর বাড়লে কিংবা স্রোত বেড়ে গেলে অনেক ক্ষেত্রে হাতিদের সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। নদী এলাকায় বন দপ্তর নজরদারি চালালে ভালোই হবে।’
বিশিষ্ট হাতি বিশারদ পার্বতী বড়ুয়া বলেন, ‘প্রবল জলস্রোতে মানুষের পাশাপাশি বন্যদেরও বিপদের সম্ভাবনা থাকে৷ এরকম বেশ কিছু ঘটনার সাক্ষী তিনি ছিলেন। বেশ কয়েকটি হস্তীশাবক এই ঘটনায় মারাও গিয়েছে। তবে হাতি খুব বুদ্ধির পরিচয় দিয়েই নদী পারাপার করে।’