কোচবিহার: কয়েকদিনের টানা বৃষ্টির পর প্রখর রোদ। সরাসরি প্রভাব ফেলেছে সবজি বাজারে। এ মুহূর্তে বাজারে বেশিরভাগ সবজির গড় দাম গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা প্রতি কেজি। স্বাভাবিকভাবেই বাজারে গিয়ে সবজি কিনতে হাত পুড়ছে ক্রেতাদের। তবে এখানেই শেষ নয়। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গ্রামগঞ্জে সবজির খেতের যা অবস্থা তাতে আগামী কয়েকদিনে সবজির দাম আরও অনেকটা বাড়তে পারে।
সবজির দাম বাড়ায় বাজারে গিয়ে প্রায়ই ক্রেতা ও বিক্রেতাদের মধ্যে বচসা লক্ষ করা যাচ্ছে। দেশবন্ধু বাজারে সবজি কিনতে গিয়ে দাম শুনে স্নেহাশিস চৌধুরী নামে এক ক্রেতা কিছুটা রসিকতা করে বিক্রেতাকে বললেন, ‘এখন সবজির যা দাম, এর থেকে সোনা কেনা সহজ।’ তবে স্নেহাশিস কথাগুলো রসিকতার সুরে বললেও অধিকাংশ ক্রেতাই বাজারে গিয়ে সবজির দাম শুনে হাঁফিয়ে উঠছেন। কারণ তিন-চারশো টাকার সবজি কিনলেও তাতে ব্যাগ ভর্তি হচ্ছে না।
গত কয়েকদিনে কোচবিহার জেলার ভবানীগঞ্জ বাজার, দেশবন্ধু মার্কেট, চাকির বাজার, রেলগেট বাজার, জামাই বাজার, রাজা বাজার, শুংশুঙ্গি বাজার সহ বিভিন্ন বাজারে সবজির দাম দেখে মাথায় হাত ক্রেতাদের। চালকুমড়া প্রতি পিস ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কয়েকদিন আগেও যা ছিল ১০ টাকা করে। অন্যদিকে আদা, রসুন, কাঁচা লংকাতে হাত দেওয়াই দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আদা, রসুন ৩০০ টাকা করে কেজি। অন্যদিকে কাঁচা লংকা বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজি দরে। যা কিনতে গিয়ে নাভিশ্বাস অবস্থা ক্রেতাদের।
বড় বাজারের সবজি ব্যবসায়ী বাবলু বর্মন বলেন, ‘বাজারের যা অবস্থা তাতে ক্রেতাদের কাছে সবজির দাম চাইতে আমাদেরই ভয় লাগছে। কিন্তু কী করব, আমরাও প্রয়োজন অনুযায়ী সবজি পাচ্ছি না। আমাদেরকেই অনেকটা বেশি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে।’ কোচবিহার শহরের বাসিন্দা সুব্রত সূত্রধর বলেন, ‘সবজির যা দাম তাতে সবজি কেনাই প্রায় বন্ধ করে দিয়েছি।’
সবজির দাম প্রসঙ্গে জেলা কৃষি ও উদ্যানপালন দপ্তরের আধিকারিক এসপি সিং বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে একটানা প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ার পর গত দু’দিন ধরে আবার কড়া রোদ ওঠায় সবজি গাছ প্রচুর পরিমাণে মরে যাচ্ছে। এর ফলেই সবজির দামের এই অবস্থা দেখা দিয়েছে।’
জেলা কৃষি ও উদ্যানপালন দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, কোচবিহার জেলায় প্রায় ৬৪ হাজার হেক্টর জমিতে সবজি চাষ করা হয়। কয়েকদিন ধরে একটানা বৃষ্টির পর গত দু’-তিনদিন ধরে আবার কাঠফাটা রোদ উঠতে শুরু করায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন জেলার সবজিচাষিরা। জানা গিয়েছে, এর ফলে অধিকাংশ সবজির গাছ মরে যাচ্ছে। যার সরাসরি প্রভাব এসে পড়েছে সবজি বাজারগুলিতে। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, এর ফলে বাজারগুলিতে সবজির জোগান যেমন অনেকটা কমে গিয়েছে, তেমনই অধিকাংশ সবজির দাম দুই থেকে তিনগুণ করে বেড়ে গিয়েছে।