বারবিশা: ছোটবেলা থেকে গান নিয়ে সেরকম প্রথাগত শিক্ষা পাননি তিনি। তারপরেও নিজের গান দিয়ে একটি বাংলা চ্যানেলের জনপ্রিয় রিয়েলিটি শোয়ের বিচারকদের মন জয় করে নিয়েছেন। তিনি মিঠুন দাশগুপ্ত। বিচারকরা তো বটেই, কৃষক পরিবারের ছেলে মিঠুনের গানে মজেছেন নেটিজেনরা। সোশ্যাল মিডিয়ায় মিঠুনের গানের ভিডিও শেয়ার এবং কমেন্টে উপচে পড়ছে। এলাকায় তাঁকে সংবর্ধনা দেওয়া হচ্ছে, মিঠুন এখন সেলেব্রিটি।
ভল্কা বারবিশা-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের বারুইপাড়ার ওই তরুণ একাধিক বাছাইপর্ব পেরিয়ে মূল প্রতিযোগিতার প্রথম স্তরে পৌঁছেছেন। প্রত্যন্ত এলাকা থেকে কলকাতায় জনপ্রিয় রিয়েলিটি শোয়ের মঞ্চে পৌঁছানোর জার্নিটা মোটেও মসৃণ ছিল না। বাবা আদিত্য দাশগুপ্ত পেশায় একজন কৃষক। মা দেবী দাশগুপ্ত গৃহবধূ। শারীরিক অসুস্থতার কারণে দুজনই ভারী কাজ করতে পারেন না। সে কারণে স্কুলের গণ্ডি পেরোনোর আগেই সংসারের হাল ধরতে হয় মিঠুনকে। তবে গান সঙ্গ ছাড়েনি। ছোটবেলায় ঠাকুরদা হরিভক্ত দাশগুপ্তর কাছে কীর্তন শেখা শুরু। অর্থের অভাবে কোনও প্রতিষ্ঠানে গিয়ে গান শেখার সুযোগ হয়নি। মোবাইলে গান শুনে নিজের খেয়ালে গান করতেন।
মিঠুন জানান, জোড়াই হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ করার আগে মাঠে নেমে চাষবাস শুরু করে দেন। খেতে কাজ করতে করতে গান গাওয়াটা তাঁর খুব পছন্দের। সব ধরনের গান গাওয়ার চেষ্টা করেন। তবে পছন্দের তালিকায় সবসময় কৈলাস খের, রাহাত ফতে আলি খান, জুবিন গর্গের গান থাকাটা মাস্ট। তাঁদের গান শুনে শুনে যতটা পেরেছেন, শিখেছেন। দিদি লক্ষ্মী দাশগুপ্ত সবসময় তাঁকে অনুপ্রেরণা দেন।
তাঁর কথায়, ‘বারবিশা ছন্নছাড়া আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান গেয়েছিলাম। সেখানে গানের শিক্ষিকা চয়নিকা রায়ের সঙ্গে পরিচয় হয়। উনি বিনাপয়সায় আমাকে গান শেখাতে শুরু করেন। কয়েক মাস তালিম নেওয়ার পর কোচবিহারে গিয়ে রিয়েলিটি শোয়ের বাছাই পর্বে অংশ নিয়েছিলাম। কিন্তু ভাবিনি, সেখান থেকে ডাক আসবে।’
পরিবারে অভাব-অনটন নিত্যদিনের সঙ্গী। কলকাতা থেকে ডাক পেলেও প্রথমে যাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল। তারপর অনেক কষ্টে টাকাপয়সা জোগাড় করে কলকাতা পৌঁছান। সেখানে পৌঁছে ধাপে ধাপে আটটি পর্ব পেরিয়ে প্রতিযোগিতার মূলপর্বে গান গাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। বললেন, ‘এখনও সবটা স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। অনেকটা পথ যাওয়া বাকি। সবার আশীর্বাদে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই।’