অনীক চৌধুরী, জলপাইগুড়ি: সকালের টিফিন বা বিকেলে চায়ের সঙ্গে ফাস্ট ফুড এখন সবার পছন্দের। পিৎজা, বার্গার, মোমো, চাউমিন এদেশীয় চপ, সিঙ্গারাকে পাশে ফেলে টিফিনের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। ক্যাফে, রেস্তোরাঁয় ভিড় রাস্তার পাশে স্টোভে বানানো খাওয়ারের দোকানের জনপ্রিয়তাকে ম্লান করেছে। নতুন প্রজন্ম ঝুঁকেছে চাকচিক্য আর স্ট্যাটাস মেইনটেনে। এই আধুনিকতাকে টেক্কা দিয়ে আজও উজ্জ্বল বিশ্বনাথের কচুরি। জলপাইগুড়ি(Jalpaiguri) শহরের পুরোনো প্রজন্মকে এখনও স্বাদের টানে বেঁধে রেখেছে দিনবাজারের কচুরি। নতুন প্রজন্মকেও ভিড় জমাতে দেখা যায় দিন বাজারের পিসি শর্মা মোড়ের বিপরীতে বিশ্বনাথের কচুরির দোকানে।
১৯৬৯ সালে একটি ছোট ঘরে শুরু হয় এই কচুরির পথ চলা। সেদিন সাজসজ্জায় কোনওভাবেই কাউকে টেক্কা দেওয়ার মতো ছিল না। হিংয়ের পুর দেওয়া এই খাস্তা কচুরির একটির দাম ছিল মাত্র ২৫ পয়সা। অল্পদিনে এলাকাবাসীর নাস্তার গো টু ডেস্টিনেশন হয়ে ওঠে। বছর খানেকে এই কচুরির নাম হয় প্রস্তুতকারক বিশ্বনাথের নামে। সময় বদলেছে। বদলেছে প্রস্তুতকারীর নাম। দোকানের দায়িত্ব বিশ্বনাথ রায়ের পর ছেলে কিশোর রায়ের কাঁধে পড়ে। বর্তমানে সেই দায়িত্ব বিশ্বনাথের নাতি রাজু রায়ের ওপর। মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গেই বেড়েছে দাম। বর্তমানে একটি কচুরি বিক্রি হয় ১০ টাকায়। তবে স্বাদ বা বিক্রির পরিমাণে কোনও বদল আসেনি। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত একনাগাড়ে জ্বলতে থাকে উনুনের আগুন।
আজও শহরের বাইরে থেকে কেউ এলে প্রথমেই খোঁজ করেন বিশ্বনাথের কচুরি কী এখনও পাওয়া যায়। শহরবাসীর বাড়িতে অতিথি এলে বিশ্বনাথের কচুরি পাতে থাকবেই। ক্রেতা প্রবীণ অমিত দাস শোনালেন তাঁর কিশোরবেলার গল্প। তিনি বললেন, ‘স্কুল থেকে ফেরার পথে এই দোকানের কচুরি খেতাম। কী স্বাদ ছিল। আজও সেই টানেই এই দোকানে আসি। স্বাদ খানিক বদলালেও একেবারে বদলে যায়নি।’
জলপাইগুড়িতেও এখন ফাস্ট ফুডের রমরমা। বিশ্বনাথের দোকানের আশপাশে গড়ে উঠেছে নানান খাবারের দোকান। তবুও দিব্যি জনপ্রিয় ওই কচুরি। প্রস্তুতকারক রাজুর বক্তব্য, ‘দাদু কীভাবে বানাতেন সেটা অতটা মনে নেই। বাবার থেকে এই কচুরি বানানো শিখেছি। এই কচুরি বানানোর পদ্ধতি কাউকে বলা যাবে না। অনেকে বলেন নতুন প্রজন্ম ফাস্ট ফুড খায়, পুরোনো খাওয়ার প্রতি তাদের ঝোঁক কম। কিন্তু আমি বলব, আমার দোকানে সব প্রজন্মের গ্রাহক আসে বলেই আমাদের বিক্রি একই রকম আছে।’
মঙ্গলবারও দোকানে জমিয়ে বিক্রিবাটা চলল। একেকজন ১০-১৫টা করে অর্ডার দিয়ে দোকানের পাশে রাস্তা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে। অনিকেত বসু, রাকেশ দাস প্রমুখ জানালেন, খুবই প্রিয় এই কচুরি। যতই ভিড় হোক লাইনে দাঁড়িয়ে কচুরি কিনতে কোনও অসুবিধা নেই। পুরোনো স্বাদের টানে শহরবাসী বিশ্বনাথের কচুরি কিনতে এখনও ছুটে আসেন।