পতিরামঃ গ্রামের দীর্ঘকালের অবহেলিত বেহাল কাঁচা রাস্তা বারবার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরও পাকা হয়নি। পুঞ্জিভূত এই ক্ষোভের কারণে এলাকার ভুক্তভোগী বাসিন্দারা রাস্তায় বাঁশ ফেলে দীর্ঘ সময় ধরে পথ অবরোধ করে রয়েছেন। মঙ্গলবার সকাল ১০ টায় দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বাংলাদেশগামী আন্তর্জাতিক পণ্য চলাচলের গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তায় খাঁপুর বাজারের কাছাকাছি অবরোধ করেন বিক্ষুব্ধ বাসিন্দারা। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত অবরোধ চলছে। অবরোধকারীদের বক্তব্য, অবিলম্বে জেলা প্রশাসনের কর্তাদের রাস্তা নির্মাণের নিশ্চয়তা দিতে হবে। নচেৎ অবরোধ চলতে থাকবে। পতিরাম থানার পুলিশের হস্তক্ষেপেও ওঠেনি গ্রামবাসীদের অবরোধ। এরফলে, এই রাস্তায় সাধারণ মানুষের ভোগান্তি চরমে পৌঁছায়।
অবরোধকারীদের দাবি, খাঁপুর পাকুড়তলা থেকে মাহাতো পাড়া পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার কাঁচা ও বেহাল রাস্তা অবিলম্বে পাকা করে দিতে হবে। দীর্ঘকাল ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এই রাস্তা পাকা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও আজ পর্যন্ত তা পাকা না হওয়ায় গ্রামবাসীরা পথ অবরোধে শামিল হয়।
অবরোধকারীদের বক্তব্য, খাঁপুর পাকুড়তলা থেকে মাহাতো পাড়া ভায়া পোস্ট অফিস মোড় পর্যন্ত বেহাল কাঁচা রাস্তার দূরত্ব প্রায় এক কিলোমিটার। দীর্ঘকালের অবহেলিত এই রাস্তাটি প্রত্যেকবার বর্ষাকালে চলাচলের অযোগ্য হয়ে ওঠে। ফলে এলাকার সাধারন মানুষের এই পথে চলাচল করতে কষ্টের সীমা পরিসীমা থাকেনা। প্রতিবার ভোটের সময় রাজনৈতিক নেতারা পাকা রাস্তা করে দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন, কিন্তু আজ পর্যন্ত এই রাস্তার কাজ হয়নি। তাই বঞ্চিত মানুষজন বিপুল ক্ষোভের কারণে পথ অবরোধে শামিল হয়েছেন। অবরোধকারী বাসিন্দা বিমল মাহাতো বলেন, আমাদের বেহাল কাঁচা রাস্তা পাকা করার দাবি অত্যন্ত ন্যায্য এবং গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমরা শুধু প্রতিশ্রুতি পাচ্ছি। নানান অজুহাতে আজও রাস্তা তৈরি হয়নি। তাই আমরা নিরুপায় হয়ে পথ অবরোধে বাধ্য হয়েছি। বস্তুত সকাল দশটায় শুরু হওয়া এই অবরোধ সন্ধ্যা সাড়ে ছটা পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে। এমনকি বিকেল সাড়ে চারটে থেকে পাঁচটার দিকে প্রবল বৃষ্টির সময়ও অবরোধকারীরা ত্রিপল মাথায় দিয়ে অবরোধস্থলে দাঁড়িয়ে থাকেন।
এই প্রসঙ্গে ৮ নম্বর নাজিরপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান শুভেন্দু মার্ডি বলেন, পূর্ব প্রতিশ্রুতি মতো এই রাস্তাটি ১০০ দিনের কাজের অন্তর্ভুক্ত করে রাস্তা নির্মাণের জন্য টেন্ডার, ওয়ার্ক অর্ডারও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করে কেন্দ্রীয় সরকার ১০০ দিনের কাজের অর্থ বন্ধ করে দেওয়ায় ঠিকাদার এখন কাজ করতে চাইছেন না। কারণ ঠিকাদারের ধারণা, বর্তমানে যা পরিস্থিতি তাতে রাস্তা নির্মাণ করে দেওয়ার পর কবে বিল পাওয়া যাবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। তাই সবকিছু হয়ে যাওয়ার পরেও ঠিকাদার কাজ করতে রাজি হচ্ছেন না। প্রধান আশ্বাস দেন, কেন্দ্র সরকার ১০০ দিনের কাজের টাকা পুনরায় ছাড়লে দ্রুত এই রাস্তার নির্মাণ কাজ শুরু হবে। কিন্তু যদি কেন্দ্র সরকার টাকা না দেয়, তাহলে গ্রাম পঞ্চায়েতের সীমিত সামর্থে পরবর্তী সময়ে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে কাঁচা এই রাস্তাকে পাকা রাস্তা নির্মাণ করার ব্যবস্থা করতে হবে।
অবরোধ তোলার প্রসঙ্গ নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে পতিরাম থানার ওসি সৎকার স্যাংবো বলেন, সকাল দশটা থেকে অবরোধ শুরু হয়েছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত আমরা বহুবার অবরোধকারীদের আলোচনা করে বুঝিয়েছি, অবরোধ তুলে নেওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছি, কিন্তু তারা পুলিশ প্রশাসনের কথায় কর্ণপাত করেনি। তাই সন্ধ্যা পর্যন্ত অবরোধ চলছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, দীর্ঘ সময় ধরে অবরোধ চলার ফলে বাংলাদেশগামী আন্তর্জাতিক পণ্য চলাচলকারী যানবাহন, অন্যান্য সাধারণ যানবাহন, বাস ও ট্রেকারের যাত্রীদের পাশাপাশি নিত্যযাত্রী ও সাধারণ মানুষের চরম ভোগান্তি হয়।