হলদিবড়িঃ দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করে শুধুমাত্র ইচ্ছে ও অদম্য জেদের উপর ভর করেই সর্ব ভারতীয় ডাক্তারি প্রবেশিকা পরীক্ষায় সাফল্য ছিনিয়ে আনল দরিদ্র কৃষক পরিবারের সন্তান মেহেবুবা পাটোয়ারী। আর্থিক সমস্যার কারণে পাঁচ বছরের ডাক্তারি কোর্স কি করে সম্পন্ন করবে তা নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই চিন্তায় পড়েছে তার পরিবার। অর্থের যোগানের অভাবে মাঝপথে মেয়ের চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্নে ছেদ পড়বে না তো? এমনই আশঙ্কায় দিন কাটছে দরিদ্র পাটোয়ারী পরিবারের।
হলদিবাড়ি ব্লকের পারমেখলিগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েতের ৩৯নং নিজতরফের বাসিন্দা মেহেবুবা। বাবা মকছেদুল হক পাটোয়ারী পেশায় প্রান্তিক কৃষক। মা রেজুমা বেগম পাটোয়ারী আশা কর্মী। জমিতে চাষাবাদ করেই চলে সংসার। স্বল্প আয়ের পরিবারের অভাব নিত্য সঙ্গী থাকলেও মেয়ের পড়াশোনায় বিন্দুমাত্র ক্ষতিসাধন করতে দিতে রাজি হননি মেহেবুবার বাবা ও মা। ছোট থেকেই মেহেবুবার পড়াশোনার প্রতি বিশেষ টান অনুভব করেন পাটোয়ারী দম্পতি। তাই নিজেরা কঠোর পরিশ্রম করে মেয়েকে পড়াশুনা করাচ্ছেন। তাঁদের পরিশ্রমকে ব্যর্থ হতে দেয়নি মেহেবুবাও।
২০১৮ সালে হলদিবাড়ি উচ্চবালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধমিক পরীক্ষা দিয়ে ৬৪৮ নম্বর পায়। ২০২০ সালে হলদিবাড়ি হাই স্কুল থেকে বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে ৪৪৫ নম্বর পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে। এর পর অনলাইনে পড়াশুনা করে সর্বভারতীয় মেডিক্যাল প্রবেশিকা পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করে। এবছর নিট পরীক্ষায় ফল প্রকাশ হলে দেখা যায় সে ৭২০ নম্বরের মধ্যে ৬১৫ পেয়ে অল ইন্ডিয়ার মধ্যে তাঁর স্থান হয় ২০৮২৮ নম্বরে ও ক্যাটাগরিতে স্থান হয় ৮৮১৮ নম্বরে। এই খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়তেই এলাকার মানুষ আনন্দের জোয়ারে ভাসতে শুরু করেছে। স্থানীয়রা বলতে শুরু করেছে মেয়েকে মানুষ করতে ভোলেনি মকছেদুল।
তাঁর সাফল্যের কথা জিজ্ঞাসা করলে মেহেবুবা বলেন, নিত্য অভাব থাকলেও মা বাবা সব সময় পড়াশোনার কথা বলতো। তাঁরা বলতো একমাত্র পড়াশুনাই নাকি পারে দারিদ্র্য মোচন করতে। তাই কিছু না ভেবে পড়াশোনা করে গিয়েছি। ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পেয়ে খুব ভালো লাগছে। কিন্তু এতো খরচের যোগান কোথা থেকে আসবে তা বুঝতে পারছি না।
মকছেদুল হক পাটোয়ারী বলেন, অভাবের সংসারে মেয়েকে কি করে পড়াব সেই চিন্তায় ঘুম ছুটেছে আমাদের। কি করে কি হবে বুঝে উঠতে পারছি না। তাই তিনি সরকারি বা বেসরকারিভাবে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন।